শিশু নির্যাতন রোধে দরকার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন

সাজিদা ইসলাম পারুল

0
202
প্রতীকী ছবি।

প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. তামিম। ২১ এপ্রিল জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিয়ে মায়ের বিরুদ্ধে তাকে নির্যাতনের অভিযোগ দেয় সে। এর পর রাজধানীর মিরপুরের বাসা থেকে মাকে আটক করে পুলিশ। তামিম বলে, ‘আব্বু-আম্মুর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হয়। এরই জেরে অকারণে মা আমাকে মারধর করেন।’ গত বছর যশোরে শিক্ষক হাফিজুর রহমানের বেতের আঘাতে চোখ হারায় মাদ্রাসাছাত্র আরিফুল ইসলাম (১৬)।

তামিম ও আরিফের মতো প্রতিনিয়ত শিশুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। হোক তা পরিবার কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। নির্যাতনের শিকার অনেক শিশু আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। অথচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্যাতন না করার বিষয়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১৬.২ ধারায় বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশু নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। যদিও করোনা মহামারির পর জাতীয় বাজেট ও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার ওপর চাপ বাড়ায় শিশু নির্যাতন বন্ধের উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আজ রোববার অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক শিশু শাস্তি নিবারণ দিবস’।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের প্রেক্ষাপটে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি থেকে সুরক্ষার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন ‘আইনগত সুরক্ষা’। একই সঙ্গে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনও জরুরি।

পরিসংখ্যান ব্যুরো ও ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে-২০১৯ অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১ থেকে ১৪ বছর বয়সী ৮৯ শতাংশ শিশু জরিপ-পূর্ববর্তী এক মাসের মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ৩৫ শতাংশ অভিভাবক মনে করেন, শিশুকে শাস্তি দেওয়ার প্রয়োজন আছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শাস্তি নিষিদ্ধ করতে ২০১১ সালে পরিপত্র জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তার পরও শিশুরা মারধর ও অপমানের শিকার হচ্ছে। তাছাড়া বাড়ি, প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রেও শিশুদের শাস্তি পেতে হয়।

গ্লোবাল পার্টনারশিপ টু অ্যান্ড ভায়োলেন্স এগেইনস্ট চিলড্রেন প্রকাশিত ‘করপোরাল পানিশমেন্ট অব চিলড্রেন : সামারি অব রিসার্চ অন ইটস ইম্প্যাক্ট অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশনস’ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৩০০টির বেশি গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুকে শাস্তির ফল নেতিবাচক। কোনো গবেষণায় শাস্তির সুফল পাওয়া যায়নি।

উন্নয়ন সংস্থা ‘শিশুরাই সব’ এর আহ্বায়ক লায়লা খন্দকার বলেন, বহু শিক্ষক এখনও শিশুদের মারধর করছেন। অনেককে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। কিছু শিশু ভয়ে স্কুল ছেড়েছে, এমনকি আত্মহত্যাও করেছে। তবে কোনো শিক্ষক শাস্তি পেয়েছেন, এমন নজির খুবই কম। শিক্ষক-অভিভাবক সবাইকে সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি পরিপত্র বাস্তবায়ন করতে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।

৬৫ দেশে সব ক্ষেত্রে শিশুদের শাস্তি নিষিদ্ধ শিশুদের জীবনে ক্ষতিকর প্রভাব প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বের মাত্র ৬৫ দেশে সব ক্ষেত্রে শিশু শাস্তি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অন্য দেশগুলোতে শিশু নির্যাতন ও শাস্তি বিধিসম্মত। যে আইন শিশুদের শাস্তি অনুমোদন করে তা বৈষম্যমূলক।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.