শিশুর বিকাশে থাইরয়েড সমস্যা

0
157
থাইরয়েড সমস্যা

জন্মের পর সাধারণত প্রথম তিন বছরে একটি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ সম্পন্ন হয়, যার বেশির ভাগই ঘটে প্রথম বছরে। শিশুর স্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধি আর মানসিক বিকাশে থাইরয়েড হরমোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই এ সময় কোনো কারণে থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি হলে শিশুটি শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী হিসেবে বেড়ে ওঠে। একেই কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়েডিজম বলে।

সাধারণত দেখা যায়, একটি শিশুর থাইরয়েড গ্রন্থি পুরোপুরি গঠিত না হলে বা হরমোন তৈরিতে সমস্যা হলে কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়েডিজম হয়।

রোগের লক্ষণ প্রায়ই ধীরে প্রকাশিত হয়। ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে বোঝা কঠিন। তবে এ রোগের লক্ষণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে দেখা যায়, শিশুরা খুব শান্ত প্রকৃতির হয়, যা অস্বাভাবিক। অতিরিক্ত ঘুমায়, খুবই ক্ষীণ আওয়াজ হয় কান্নায়। মা-বাবারা ভাবেন, তাদের শিশুটি ভীষণ শান্ত। এ ছাড়া দেখা যায়, অনেক সময় জন্মের পরপর নবজাতকের প্রথম যে কালো পায়খানা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হওয়ার কথা, তা সাধারণত ৭২ ঘণ্টা পরে হয়।

শিশুর জিহ্বা বড় ও মুখগহ্বরের বাইরে বের হয়ে থাকে। শরীরের ত্বক খসখসে থাকে, মাংসপেশি নরম প্রকৃতির হয়। নাভিতে হার্নিয়া থাকতে পারে, পায়খানা কষা থাকে, জন্মের পর দুই সপ্তাহের বেশি জন্ডিস থাকতে পারে। শারীরিক এই লক্ষণের পাশাপাশি মানসিক বিকাশ বিলম্বিত হয়, যেমন– সময়মতো ঘাড় শক্ত হওয়া, বসতে পারা, দৌড়াতে পারা ইত্যাদি ব্যাহত হয়। পরবর্তী সময়ে শিশু বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে। সামান্য একটু সচেতনতা, জন্মের পাঁচ-ছয় দিন পরে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে খুব দ্রুত এ রোগ নির্ণয় করা যায়। শুরু থেকে ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে খুব সহজে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধিতার হাত থেকে আগামী দিনের ভবিষ্যৎ এ দেশের কোমলমতি শিশুদের রক্ষা করা সম্ভব।

উন্নত বিশ্বে শিশুর জন্মের পরপরই থাইরয়েডের পরীক্ষাটি বাধ্যতামূলক। আমাদের দেশেও কোনো কোনো হাসপাতালে শিশুর জন্মের পরপরই থাইরয়েড পরীক্ষা করানো হয়। তবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে জন্মের পরপরই শিশুর থাইরয়েড পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা অতি জরুরি।

রোগ নির্ণয় হলে দ্রুত ওজন অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় ওষুধ প্রয়োগ, নিয়মিত ফলোআপ আর প্রয়োজনমতো ওষুধের মাত্রা পরিবর্তনের মাধ্যমে পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব। প্রয়োজন শুধু একটুখানি সদিচ্ছা আর  সচেতনতা।

লেখক : ডা. শামীমা শারমীন শোভা,সহকারী অধ্যাপক (শিশু), আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা ও কনসালট্যান্ট আলোক হেলথকেয়ার লিমিটেড

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.