শাহরিয়ার কবিরকে গ্রেফতারে ৩০ মানবাধিকার কর্মীর উদ্বেগ, মুক্তির দাবি

0
17
শাহরিয়ার কবির

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত লেখক ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি শাহরিয়ার কবিরকে গ্রেফতারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ৩০ জন মানবাধিকার কর্মী। এদের মধ্যে বিভিন্ন দেশের লেখক, আইনজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিকও রয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে শাহরিয়ার কবিরকে গ্রেফতার ও রিমান্ডের নিন্দা করে তার মুক্তি দাবি করেন তারা।

চিঠিতে বলা হয়, শাহরিয়ার কবির বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য সাংবাদিক, লেখক, নির্মাতা এবং সর্বোপরি একজন আপসহীন ব্যক্তি। তাকে গ্রেফতারের বিষয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের নিয়ম অনুযায়ী শাহরিয়ার কবিরের সাথে আচরণ করতে সরকারের প্রতি অনুরোধও করা হয় চিঠিতে।

এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের বিষয়ে আমরা অবগত। ৭৩ বছর বয়সী শাহরিয়ার কবিরকে একটি ‘কাল্পনিক রাজনৈতিক’ মামলায় গ্রেফতার এবং রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। তিনি অপরাধের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলেন। তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ তার বিরুদ্ধে একাধিক ফৌজদারি মামলা হয়েছে। ড. ইউনূসের সময়ে এমন ঘটনা আমাদের অবাক করেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে আদালতে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করা হয়েছে এমন অভিযোগ জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, আদালত প্রাঙ্গণে হেনস্তার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, তার চিকিৎসা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

শাহরিয়ার কবিরের মানবাধিকার নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে আরও বলা হয়, অবিলম্বে শাহরিয়ার কবিরকে জামিনে মুক্ত করার পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে ভিত্তিহীন সব মামলা থেকে মুক্তি দিতে হবে। তার চলাচলের জন্য হুইলচেয়ারসহ সকল চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া আইনি সহায়তার পাশাপাশি পরিবারের সদস্য এবং সহকর্মীদের সাথে শাহরিয়ার কবিরের যোগাযোগ নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়।

প্রসঙ্গত, গত ১৬ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে রাজধানীর বনানীর বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ছাত্র আন্দোলনের সময় গৃহপরিচারিকা লিজা আক্তারকে হত্যার অভিযোগে রমনা মডেল থানার মামলায় তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর ২৩ সেপ্টেম্বর রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে তোলা হয়। এ সময় যাত্রাবাড়ী থানার পৃথক দুইটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করে পুলিশ। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে জামিন শুনানির জন্য মঙ্গলবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দিন ধার্য করেন। মঙ্গলবার শুনানি শেষে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করেন।

উল্লেখ্য, শাহরিয়ার কবির বাংলাদেশের একজন লেখক। লেখক হিসেবে তার প্রধান পরিচয় তিনি একজন শিশুসাহিত্যিক। মানবাধিকার, সাম্যবাদ, মৌলবাদ, ইতিহাস ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ৭০টিরও বেশি বই লিখেছেন তিনি। ১৯৯৫ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন কবির।

১৯৯২ সালে শাহরিয়ার কবির একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৯৪ সালে জাহানারা ইমামের মৃত্যুর পর কমিটির সভাপতি হন তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.