শখের বশে শুরু করা ‘রণ পা’ দিয়ে বৃদ্ধ বয়সেও হাঁটেন তিনি

0
158
রণ পা’ নিয়ে সড়কের পাশে সাহাব উদ্দিন। শুক্রবার বিকেলে গাইবান্ধা-সাঘাটা সড়কের রিফাইতপুর গ্রামে

ছোটবেলায় বন্ধুদের সঙ্গে শখের বশে ‘রণ পা’ ব্যবহার করে হাঁটতেন সাহাব উদ্দিন। সেটি ভালো লেগে যায়। এর পর থেকে তিনি আর ‘রণ পা’ ছাড়তে পারেননি। ৬৬ বছর বয়সে এসেও প্রায়ই সকাল-বিকেল তিনি ‘রণ পা’ ব্যবহার করে হাঁটেন। তাঁর হাঁটার দৃশ্য অনেকে উৎসুক হয়ে দেখেন। কেউবা আবার তাঁর ‘রণ পা’ নিয়ে হাঁটার চেষ্টা করেন।

বিশেষ কায়দায় বাঁশের তৈরি এক জোড়া লাঠিকে স্থানীয় ভাষায় ‘ঠ্যাংগুয়া’ বলে, যা ‘রণ পা’। গ্রামীণ বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে আগে দর্শনার্থীদের আনন্দ দিতে ‘রণ পা’ ব্যবহার করে হাঁটার ব্যবস্থা থাকত। এটি গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের একটি অংশ। আগের মতো ‘রণ পা’ ব্যবহারের দৃশ্য এখন তেমন চোখে পড়ে না। তবে এখনো ঐতিহ্যটি ধরে রেখেছেন সাহাব উদ্দিন। হাটবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে স্বাভাবিক চলাফেরা করতেও প্রায়ই তিনি ‘রণ পা’ ব্যবহার করে থাকেন।

আছতে আছতে গেরাম বাংলার খ্যালাধুরে হারে যাবার নাগচে। তই সোকাল-বিকাল সমায় পালে ঠ্যাংগুয়ায় করি হাঁটি। হামাক ঠ্যাংগুয়াত হাটপ্যার দেকি, ম্যালাজনে হাসে, ছোট ছোলগুলে মজা পায়।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে গাইবান্ধা-সাঘাটা সড়কের পাশে রিফাইতপুর গ্রামে হাঁটার সময় সাহাব উদ্দিনকে ‘রণ পা’ ব্যবহার করতে দেখা যায়। এ সময় আলাপকালে সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘আছতে আছতে গেরাম বাংলার খ্যালাধুরে হারে যাবার নাগচে। তই সোকাল-বিকাল সমায় পালে ঠ্যাংগুয়ায় করি হাঁটি। হামাক ঠ্যাংগুয়াত হাটপ্যার দেকি, ম্যালাজনে হাসে, ছোট ছোলগুলে মজা পায়। অনেকে সিকপ্যার চায়। কাউয়ো কাউয়ো ভালোও কয়। হামরা হাঁটি শরীলের ব্যায়াম হয়, শরীল-মনটা ভালো থাকে।’

রিফাইতপুর গ্রামের ব্যবসায়ী মিলন মিয়া বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই সাহাব চাচাকে ঠ্যাংগুয়ায় করে হাঁটতে দেখছি। বৃদ্ধ বয়সে বাঁশের লাঠিতে হাঁটতে আমরাও পারব না। তিনি অভ্যাসটা ধরে রেখেছেন। পাশাপাশি গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। তাঁর লাঠিতে হাঁটা দেখে ছোটবেলার স্মৃতি মনে পড়ে। বিষয়টি ভালো লাগে।’

লাঠিতে হাঁটার কারণে সাহাব উদ্দিনের শরীর-স্বাস্থ্য ভালো থাকছে বলে মনে করেন স্থানীয় কলেজছাত্র রফিক মিয়া। সাহাব উদ্দিনের বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাদিয়াখালি ইউনিয়নের রিফাইতপুর গ্রামে। তিনি একই গ্রামের সবুর উদ্দিনের ছেলে। সাহাব উদ্দিন সাতজন ছেলেমেয়ের জনক। পাঁচ মেয়ে শাহিনুর, শহিদা, শাহানা, সালমা ও সুচরিতার বিয়ে হয়েছে। দুই ছেলে জুম্মন ও সুমন মিয়া রডমিস্ত্রির কাজ করেন। তাঁরা বাবার সংসার থেকে সবাই আলাদা।

 ‘রণ পা’ ব্যবহার করে হাঁটছেন বৃদ্ধ সাহাব উদ্দিন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে গাইবান্ধা-সাঘাটা সড়কের রিফাইতপুর গ্রামে

‘রণ পা’ ব্যবহার করে হাঁটছেন বৃদ্ধ সাহাব উদ্দিন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে গাইবান্ধা-সাঘাটা সড়কের রিফাইতপুর গ্রামে

সাহাব উদ্দিন পেশায় মূলত দিনমজুর। তবে কাজ না থাকলে রিকশাভ্যান চালান। পাঁচ শতাংশ বসতভিটায় তাঁর বসবাস। দুই বিঘা জমি বর্গাচাষ করেন। স্ত্রী জমিলা বেগমকে নিয়ে তাঁর সংসার। দিনমজুরি করে তাঁর সংসার চলে। তবে সময় পেলেই মনের আনন্দে ঠ্যাংগুয়া বা রণ পায়ে ভর দিয়ে হাঁটেন সাহাব উদ্দিন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.