মোহাম্মদ সালাহ গোল করলেন। ছুটে গেলেন গ্যালারির কাছে। এক দর্শকের হাত থেকে মুঠোফোন নিয়ে নিজেই তুলে ফেললেন সেলফি। যে সেলফির ক্যাপশনে লেখা হতে পারে একটিই শব্দ—লাল!
শুধুই লাল! সব ধ্বনি, সব রং মুছে গিয়ে লিভারপুলে আজ রাজত্ব ছিল তো শুধুই লালের।
সেটিই তো হওয়ার কথা! লিভারপুলের জন্য যে আজ দিনটি ছিল উৎসবে মাতোয়ারা হওয়ার, লিগ জয়ের উৎসবে মাতার। পাঁচ বছর আগে যে উৎসব করা যায়নি করোনা নামের এক মহামারিতে পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে যাওয়ায়। প্রিয় দল ৩০ বছর পর লিগ চ্যাম্পিয়ন হলেও সে বছর তাই উৎসব করতে পারেননি লিভারপুলের সমর্থকেরা। ইয়ুর্গেন ক্লপ নামের এক জাদুকরের তাই তিন দশক পরে লিভারপুলকে লিগ জিতিয়েও একটু অপূর্ণতা না থেকে পারে না।
জার্মান কোচের উত্তরসূরি আর্নে স্লটকে ওই বিবেচনায় ভাগ্যবানই বলতে হবে। লিভারপুল ফুটবল ক্লাব রেকর্ড ছোঁয়া ২০তম লিগ শিরোপাটা যে আজ নিশ্চিত করল দর্শকঠাসা অ্যানফিল্ডে। চার ম্যাচ হাতে রেখেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে ছুঁয়ে ফেলল ইংল্যান্ডের শীর্ষ ফুটবল লিগ জয়ের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের রেকর্ড। লিভারপুলের দায়িত্ব নিয়ে প্রথম মৌসুমেই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া ডাচ কোচ নিশ্চিত করেই থাকবেন কোপাইটদের ভিক্টরি প্যারেডে। লিভারপুলের সমর্থকেরা যে প্যারেড সর্বশেষ করেছেন ১৯৯০ সালে ১৮তম লিগ শিরোপা জিতে। লিগ জয়ে তখন লিভারপুলই ছিল সবার ওপরে।
৩৫ বছর পর আজ অ্যানফিল্ড স্টেডিয়ামে লিভারপুল আবারও শীর্ষে উঠল টটেনহামকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে। একটি পয়েন্ট পেলেই চ্যাম্পিয়ন, এমন সমীকরণের ম্যাচে লন্ডন থেকে যাওয়া অতিথিদের ৫-১ গোলে হারিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জয় নিশ্চিত করেছে লিভারপুল। ৩৪ ম্যাচে লিভারপুলের পয়েন্ট ৮২, সমান ম্যাচে দুইয়ে থাকা আর্সেনালের পয়েন্ট ৬৭।
অথচ ম্যাচটি লিভারপুল শুরু করেছিল যতটা সম্ভব বাজেভাবেই। ১২ মিনিটেই পিছিয়ে পড়েছিল দলটি। কর্নার থেকে আসা বলে খুব সহজেই এক হেড করে টটেনহামকে এগিয়ে দেন ডমিনিক সোলাঙ্কি। সেই সোলাঙ্কি, একটা সময়ে যাঁর গায়ে উঠেছিল লিভারপুলের লাল জার্সি।

শিরোপা উৎসব করতে অ্যানফিল্ডে যাওয়া লিভারপুল সমর্থকেরা তখন কী ভেবেছিলেন কে জানে! তবে সালাহ-দিয়াজ-গাকপো-ম্যাক অ্যালিস্টার–সোবোসলাইয়েরা যে তেতে উঠেছেন, ওই গোলে সেটি নিশ্চিত।
এরপর যা হলো, সেটিকে কী বলা যায়? লিভারপুল তো এরপর ধ্বংস করল টটেনহামকে। সোলাঙ্কির গোলের চার মিনিট পরেই সমতা। মোহাম্মদ সালাহর দারুণ এক থ্রু ধরে দমিনিক সবোসলাই বাড়ালেন লুইজ দিয়াজের দিকে। বাঁ প্রান্ত থেকে উঠে আসা কলম্বিয়ান উইঙ্গার ভুল করেননি গোল করতে। সবোসলাই অফসাইড ছিলেন না, ভিএআরে এটি নিশ্চিত করতেই উৎসবে মাতে অ্যানফিল্ড।
আরও চার মিনিট পর আরেকবার টটেনহামের জালে বল পাঠিয়েও অফসাইডের কারণে উদ্যাপন করতে পারেননি কোডি গাকপো। লিভারপুল এগিয়ে যেতে অবশ্য এরপর সময় নিয়েছে আর চার মিনিটই। পেনাল্টি বক্সের বাইরে থেকে দারুণ শটে গোল পেয়ে যান আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ জেতা অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার। ২৪ মিনিটের সেই গোলের ১০ মিনিট পর টটেনহাম রক্ষণের ভিড়ের মধ্য থেকে গোল আদায় করে নেন গাকপো।
৩-১ গোলে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করা লিভারপুলকে ৬৩ মিনিটে ট্রেডমার্ক শটে চতুর্থ গোলটি এনে দেন সালাহ। এরপর সালাহর সেলফি তোলা শেষ হওয়ার ছয় মিনিট পর ডেসটিনি উদোগির আত্মঘাতী গোল ৫-১ বানিয়ে দেয় স্কোরলাইনটাকে।
এরপর লিভারপুল অপেক্ষা করেছে শুধু রেফারির শেষ বাঁশি বাজার।