বিসিএসে প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে বিশেষ আইনে যা আছে

0
107
সরকারি কর্ম কমিশন

সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) পরিচালিত বিসিএস বা অন্য কোনো পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে বিশেষ আইন পাস করেছে সরকার। এতে এ ধরনের কাজ করলে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বিসিএসে ভুয়া পরীক্ষার্থী ও বিসিএসের খাতায় অন্য উত্তর যুক্ত করলেও দণ্ড পেতে হবে।

বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন অর্ডিন্যান্স ১৯৭৭ রহিতপূর্বক যুগোপযোগী করে পুনঃপ্রণয়নকল্পে প্রণীত আইনে এসব বিধান রাখা হয়েছে। এ বছরের ২৩ জানুয়ারি আইনটি পাস করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।

আইনে বলা আছে, কোনো ব্যক্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে এরূপ পরীক্ষার জন্য প্রণীত কোনো প্রশ্নসংবলিত কাগজ বা তথ্য, পরীক্ষার জন্য প্রণীত হয়েছে বলে মিথ্যা ধারণাদায়ক কোনো প্রশ্নসংবলিত কাগজ বা তথ্য অথবা পরীক্ষার জন্য প্রণীত প্রশ্নের সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে বলে বিবেচিত হওয়ার অভিপ্রায়ে কোনো প্রশ্নসংবলিত কাগজ বা তথ্য যেকোনো উপায়ে ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণ করলে এটিকে অপরাধ হিসেবে ধরা হবে। এটির জন্য অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হবে।

এ আইনের বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির এক সদস্য বলেন, পিএসসি বিসিএস পরীক্ষার পাশাপাশি নানা ধরনের নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে থাকে। এসব পরীক্ষায় মেধাবীদের অংশগ্রহণ ও চাকরি নিশ্চিত করতে চায় পিএসসি। এ আইনের মাধ্যমে একটি নতুন যুগে প্রবেশ করল পিএসসি। প্রশ্নপত্র ফাঁস একটি ভয়ানক ব্যাধি বলে মনে করেন ওই সদস্য। তিনি বলেন, প্রতিটি পরীক্ষার আগে অনেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে অবৈধ উপার্জন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকেন। আবার অনেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব ওঠান। এতে নানা ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। একটি পরীক্ষা নেওয়ার আগে পরীক্ষাকেন্দ্র ঠিক করা, পরীক্ষক নিযুক্ত করা, প্রশ্নপত্র ছাপানো, কেন্দ্র ব্যবস্থাপনাসহ নানা কার্যক্রম নেওয়া হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রমাণিত হলে সেই পরীক্ষা আবার নেওয়ার প্রশ্ন ওঠে। এতে অনেক ক্ষতির বিষয় থাকে। এগুলো ঠেকাতে এ আইন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মেধাবীরা পরীক্ষা দেবেন, চাকরি পাবেন—এটাই নিয়ম। প্রশ্নপত্র ফাঁস করে বা গুজব তুলে যাতে ক্ষতির আশঙ্কা না থাকে, তাই এ আইন রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কয়েক চাকরিপ্রার্থী জানান, পরীক্ষার আগে একশ্রেণির অসাধু চক্র প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। আবার ভুয়া প্রশ্নপত্র দিয়ে অনেক টাকা লুফে নেয়। এ ছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে আবার পরীক্ষা দিতে হয়, যা একজন বেকারের জন্য বোঝা। কেননা আবার প্রস্তুতি নেওয়া, পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে সময় ও অর্থের বিষয় থাকে। এটি দূর করতে বা প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে যে আইন করা হয়েছে, তা সময়োপযোগী। প্রশ্নপত্র ফাঁস করে বা গুজব তুলে কেউ যাতে পার না পায়, সে জন্য এ আইনকে সাধুবাদ জানান তাঁরা।

বিসিএসে ভুয়া পরীক্ষার্থীর যে শাস্তি

সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) নিয়ে এ বছর একটি আইন পাস করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। এতে বিসিএসে ভুয়া পরীক্ষার্থী হিসেবে কেউ ধরা পড়লে বা প্রমাণিত হলে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

আইনে বলা আছে, বিসিএস পরীক্ষায় কোনো ব্যক্তি পরীক্ষার্থী না হওয়ার পরও নিজেকে পরীক্ষার্থী হিসেবে হাজির করে বা পরীক্ষার্থী বলে ভান করে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে পরীক্ষার সময় পরীক্ষার হলে প্রবেশ করলে বা অন্য কোনো ব্যক্তির নামে বা কোনো কল্পিত নামে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে এটি একটি অপরাধ বলে ধরা হবে। এ অপরাধের জন্য ওই ব্যক্তিকে অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির এক কর্মকর্তা জানান, আগে এ বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলা ছিল না। বিসিএসের পরীক্ষায় ভুয়া পরীক্ষার্থী ধরা পড়লেও যথাযথ আইন না থাকায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেত না। এ আইনের ফলে ভুয়া পরীক্ষার্থীদের দুই বছর পর্যন্ত কারাবাসের সাজা দেওয়ার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া অর্থদণ্ড বা কারাবাস—দুই ধরনের সাজা দেওয়া যাবে। এ আইন ভুয়া পরীক্ষার্থীদের জন্য একটি বার্তা বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তা।

পিএসসির ওই কর্মকর্তা বলেন, যোগ্য প্রার্থী বা মেধাবীরা যাতে বিসিএসের মাধ্যমে চাকরি পান, তা নিশ্চিত করতে এ আইন কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। এতে ভুয়া পরীক্ষার্থীরা যেমন নিরুৎসাহিত হবেন, তেমনি এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে ভয় পাবেন। মূলত মেধাবীদের জায়গা করে দেওয়া ও বিসিএস পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতেই যুগোপযোগী এ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এখন থেকে পিএসসি এ আইন প্রয়োগ করতে পারবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘ভুয়া পরীক্ষার্থী অন্যজনের পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেলে এটা মেধাবীদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। কারণ, একজন ভুয়া পরীক্ষার্থীর মাধ্যমে কেউ চাকরি পেলে একজন মেধাবী বঞ্চিত হন। এ আইনের মাধ্যমে সাজা ও অর্থদণ্ডের বিধান থাকায় সহজে আর কেউ এ ধরনের সাহস পাবেন না। যথাযথ পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবীরা চাকরি পাক, এ প্রত্যাশা আমাদের।’

বিসিএসের পরীক্ষার খাতায় অন্য উত্তরপত্র যুক্ত করলে দুই বছর জেল

বিসিএস পরীক্ষার সময় কিছু প্রার্থী পরীক্ষার জন্য থাকা নির্ধারিত খাতায় সঙ্গে আনা অন্য পৃষ্ঠা যুক্ত করতে পারেন। এটি যাতে করতে না পারেন, সে জন্য বিশেষ আইন পাস করেছে সরকার। পিএসসি থেকে অধিকতর সতর্ক থাকার জন্য আইনটি পাস করা হয়েছে।

আইনে বলা আছে, কোনো ব্যক্তি কোনো পরীক্ষাসংক্রান্ত উত্তরপত্র বা এর অংশবিশেষের পরিবর্তে অন্য কোনো উত্তরপত্র বা এর অংশ প্রতিস্থাপন করলে অথবা পরীক্ষা চলার সময় পরীক্ষার্থী লেখেননি, এমন উত্তরসংবলিত অতিরিক্ত পৃষ্ঠা কোনো উত্তরপত্রের সঙ্গে যুক্ত করলে এটি আইন অনুসারে অপরাধ বলে গণ্য হবে। এ জন্য ওই প্রার্থী অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির একজন কর্মকর্তা বলেন, বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখার সময় পরীক্ষকেরা এমন কিছু প্রমাণ পেয়েছেন, যাতে দেখা গেছে, পরীক্ষার্থী বাইরে থেকে লিখে আনা পৃষ্ঠা বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত করেছেন। এটি ওই পরীক্ষক বুঝলেন কীভাবে, জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় পিএসসি একধরনের বিশেষ খাতা উত্তরপত্র আকারে সরবরাহ করে থাকে। সেই পৃষ্ঠাগুলো একটু ভিন্ন হয়। সেখানে অন্য ধরনের কাগজ যুক্ত করার কারণে পরীক্ষক বিষয়টি ধরে ফেলেন। এটি যে একবার হয়েছে তা নয়, অনেকবার হয়েছে। পরীক্ষার হলে পরীক্ষক অন্য কাজে ব্যস্ত থাকার সময় কিছু সুযোগসন্ধানী পরীক্ষার্থী এ অপরাধগুলো করে থাকেন। এটি যাতে আর করতে না পারেন এবং করলেও যেন তাঁকে শাস্তি দেওয়া যায়, তাই এ আইন পাস করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে বিসিএসে এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি
ঘটবে না।

মোছাব্বের হোসেন

ঢাকা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.