নতুন করে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে দুই বছরের কাছাকাছি সময়ে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে বসতি করছে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। তারা ২০১৭ সালের ২৫ আগষ্ট পর প্রাণে বাচঁতে এপারে পালিয়ে আসে।
এর আগেও বিভিন্ন সময়ে আসা আরও ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এখানে রয়েছে। তবে এক-সময়ে যাদেরকে নিয়ে রোহিঙ্গারা কোরবানি ঈদ করেছিলেন, এবার তারা অনেকেই শুধু স্মৃতি। তাই অনেক রোহিঙ্গাই শরণার্থী জীবনের দ্বিতীয় বারের মতো কোরবানি ঈদ কাটাবেন বিষাদের মাঝে!
বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম রেবাবার দুপুরে বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে উখিয়া ও টেকনাফের ৩০টি শরণার্থী শিবিরে কমপক্ষে সাড়ে তিন হাজার গরু জবাই করা হবে। ইতিমধ্যে বেশকিছু সংখ্যক গরু শিবিরগুলোতে পাঠানো হয়েছে।
সরকারি উদ্যোগে গরু কেনা হয়নি উল্লেখ করে কমিশনার আরও বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন ব্যক্তি ও এনজিওর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জন্য যেসব গরু পেয়েছি, সেগুলো একত্রিত করে যেখানে, যতটা দরকার ততটা হিসাব করে পাঠানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এই বছরে প্রায় এক হাজারের মতো কোরবানির পশু সংখ্যা বেড়েছে। পশুগুলো জবাইয়ের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং ক্যাম্প ইনচার্জদের তত্ত্বাবধানে মাংস বণ্টন করা হবে।’
সোমবার ঈদুল আজহা পালিত হচ্ছে বাংলাদেশে, রোহিঙ্গাদের প্রায় সবাই মুসলিম হওয়ায় তারা ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আবার কিছু শরণার্থী শিবিরে কোরবনি পশু না দেওয়ায়, রোহিঙ্গারা নিজেদের টাকায় ভাগাভাগি করে গরু কিনেছেন।
এদিকে সকালে টেকনাফের জাদিমুড়া ২৭ নম্বার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে গরু-ছাগল বিতরন করতে দেখা গেছে। সেখানে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরসি) প্রতিনিধি দায়িত্ব পালন করছিল এই ক্যাম্পের ইনচার্জ মোহাম্মদ ফরিদুল জামান।
তিনি বলেন, ‘তার শিবিরে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা পরিবার রয়েছে। ইতি মধ্যে তাদের মাঝে পশু বিতরন করা হয়েছে। ১৮ হাজার মানুষের মাঝে ২’শ কোরবানি পশু মাংস ভাগ করে দেওয়া হবে। এছাড়া তিন’শ পরিবারের মাঝে প্রায় শতাধিক ছাগল বিতরন করা হয়েছে।
সেখানে দাড়িয়ে থাকা মংডুর বলিবাজারে ৬৮ বছর বয়সী মোহাম্মদ আমির হোসেন জানান, কোরবানির প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে শুধু বলেন, ‘আমার এপারে কোন পরিবার নেই। সবাইকে ওরা (মিয়ানমার সেনাবাহিনী) মেরে ফেলেছে। কার সঙ্গে ঈদ করব?’
জাদিমুড়া রোহিঙ্গা শিবিরের নেতা মোহাম্মদ একরাম বলেন, ‘সরকারের উদ্যোগে ত্রিশ পরিবার মিলে একটি কোরবানি পশু পেয়েছি। ঈদের দিন এইটি জবাই করে মাংস ভাগ করে নিবো। এই পারে (বাংলাদেশে) আসার পর গত এক বছরে এক টুকরো মাংসও খেতে পারিনি। এবার হয়তো কোরবানির গরু মাংস খাওয়া হবে। তবুও ঈদের দিনে আনন্দ নেই, কেননা গত দুই বছরও নিজ আত্মীস্বজনের লাশ এখনো খোঁজে পায়নি। টিক এমন দিনে গত দুই বছর আগে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের গণ-হত্যা চালায় সেদেশের সেনা-মগরা। সেগুলো বর্বরতা এখনো চোখে ঝাপসা হয়ে রয়েছে।
তবে টেকনাফে ২৪ ও ২৫ নম্বর ক্যাম্পে, অর্থাৎ লেদা ও আলীখালীর অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গার জন্য রোববার বিকেল ৫ টা পর্যন্ত কোরবানি গরু পাঠানো হয়নি বলে জানিয়েছেন সেখানকার রোহিঙ্গা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম ও মাঝি মোহাম্মদ ফিরোজ।
তারা জানান, অনেক রোহিঙ্গা শিবিরে কোরবানির পশু পৌঁছে গেছে। কিন্তু আমাদের এখানে কোন কোরবানি পশু পায়নি। গত বছরেও আমরা কোন মাংস খেতে পারেনি। এইবারে কি কোরবানির মাংস খাওয়া হবে না?
এদিকে কর্মকর্তারা জানান, রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের পুরনো রোহিঙ্গাদের বাইরে থেকে গরু দেওয়া হচ্ছে না। কারণ স্বচ্ছল হওয়ায় এদের অনেকেই নিজ উদ্যোগে পশু কিনে কোরবানি দিচ্ছেন। তবে মিয়ানমার থেকে গত আগস্টের পর পালিয়ে আসা নতুন রোহিঙ্গাদের পশু কেনার আর্থিক সক্ষমতা নেই।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রবিউল হাসান বলেন, ‘বিভিন্ন এনজিওদের কাছ থেকে পাওয়া রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে বিতরন করা হচ্ছে। তবে সবাই যেন কোরবানির মাংস পায় সে ব্যাপারে চেষ্টা করার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।’