রোহিঙ্গাদের পরীক্ষামূলক প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে চায় বাংলাদেশ

কাল মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক

0
112
রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের পাইলট প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায় বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমার। এ উদ্দেশ্যে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি শুরু করেছে ঢাকা-নেপিদো। আগামীকাল সোমবার বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে প্রত্যাবাসন নিয়ে মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক হবে। বলা হচ্ছে, প্রত্যাবাসনে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের নিজ গ্রামে ফেরত যেতে দিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমারের সামরিক সরকার।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পাইলট প্রত্যাবাসন সফল করতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চলতি মাসে একাধিক বৈঠক হবে। এরই অংশ হিসেবে দুই দেশের মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক হচ্ছে। বৈঠকে যোগ দিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অনুবিভাগের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল মিয়ানমার গেছে। বৈঠকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের প্রতি আস্থা ফেরানোর বিষয়টিতে জোর দেবে ঢাকা। এর পর ফিরতি সফরে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল প্রত্যাবাসনে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা করতে কক্সবাজার আসবে।

নাম না প্রকাশের শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা  বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের মূল বিষয়টি হচ্ছে, তারা নিরাপদ বোধ করছে কিনা? তারা যদি নিরাপদ বোধ না করে, তাহলে জোর করে পাঠাবে না বাংলাদেশ। স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও সম্মানের সঙ্গে প্রত্যাবাসনের প্রতিশ্রুতিতে বাংলাদেশ অনড় রয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে স্বাগত জানাতে বেশ কিছু ঘরবাড়ি তৈরি করেছে মিয়ানমার সরকার। তবে তা ঘুরে দেখতে সেখানে যেতে অপারগতা প্রকাশ করেছে রোহিঙ্গারা। এখন তাদের আস্থা অর্জনে নেপিদো থেকে আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। এর মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পর এককালীন কিছু অর্থ দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে তাদের নিজ গ্রামে ফেরত যেতে দেওয়ার বিষয়টি নেপিদো থেকে জানানো হয়েছে। এটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।

সূত্র জানায়, তবে শুরুতেই নিজ গ্রামে যাওয়া যাবে না। পাইলট প্রত্যাবাসনের শুরুতে রোহিঙ্গাদের জন্য তৈরি ঘরবাড়িগুলোতে থাকতে হবে। সেখান থেকে তিন মাসের মধ্যে তাদের নিজ গ্রামে স্থানান্তর করা হবে। এর মধ্যে কেউ যদি তৈরি ঘরবাড়িগুলোতে থেকে যেতে চায়, তবে তাদের সে ব্যবস্থাও করে দেওয়া হবে।

নাগরিকত্ব নিয়ে রোহিঙ্গাদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, আশির দশকের শুরুতে মিয়ানমার তাদের নাগরিকত্ব আইন পরিবর্তন করেছে। সেই থেকে নাগরিকত্ব হারিয়েছে রোহিঙ্গারা। এখন তাদের নাগরিকত্ব দিতে হলে আইন পরিবর্তন করতে হবে। নেপিদো থেকে আগেও জানানো হয়েছে, বিষয়টি তাদের বিবেচনাধীন রয়েছে। এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা বৈঠকের পর বলা যাবে।

পাইলট প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে ৩ হাজারের বেশি রোহিঙ্গার তালিকা দেওয়া হয়েছে। তাদের নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও মর্যাদার পাশাপাশি এ তালিকার রোহিঙ্গারা যাতে প্রত্যাবাসনের সময়ে পরিবার থেকে আলাদা না হয় এবং একই এলাকার রোহিঙ্গারা যাতে একসঙ্গে যেতে পারে, সে বিষয়টিতে বিশেষ খেয়াল রাখছে বাংলাদেশ। এ তালিকার বিষয়ে মিয়ানমার সবুজ সংকেত দিলে প্রত্যাবাসন শুরু হবে। তবে প্রত্যাবাসন শুরুর আগে মিয়ানমার থেকে প্রতিনিধি দল এসে এই রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা করবে। আগস্ট মাসে চলতি বছরের মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরুর প্রত্যাশার কথা জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ইরান ও সৌদি আরব নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে যে কূটনীতির সফলতা দেখিয়েছে চীন, এমন সফলতা দক্ষিণ এশিয়ায়ও দেখাতে চায়। ইন্দো-প্যাসিফিক ঘিরে পশ্চিমা যে চাপ বাড়ছে, তাতে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে নিজ পক্ষে রাখতে সফলতা দেখানোর বিকল্প নেই বেইজিংয়ের। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন তাদের সেই সফলতা এনে দিতে পারে। তিনি আরও বলেন, দেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে যদি প্রত্যাবাসনের পাইলট প্রকল্প সফল করা যায়, সে ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনরা রাজনীতির মাঠে এগিয়ে থাকবে। সবকিছু ঠিক থাকলে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায় ঢাকা।

তবে জাতিসংঘসহ পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, মিয়ানমারে গণতন্ত্র নেই। সেখানে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়নি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.