ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পিএসজির কাছে বড় ব্যবধানে হেরেছে রিয়াল মাদ্রিদ। স্প্যানিশ ক্লাবটিকে বিদায় করে ফাইনালে উঠেছে লুইস এনরিকের দল।
পরিস্থিতি এর চেয়েও খারাপ হতে পারত। গোল হতে পারত আরও দুই-তিনটি। প্রথমার্ধে ৩-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে বিরতির পর যে মাত্র এক গোল হজম করেছে, সেটাই তো অনেক কিছু। রিয়াল মাদ্রিদের ৪-০ গোলের এই হারে ক্লাবটির সমর্থকদের তাই যতটা খারাপ লাগার কথা, স্বস্তি বোধ হয় তার চেয়েও বেশি!
নিউ জার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় গতকাল রাতে ৭৭ হাজারের বেশি দর্শক ছিল। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশ সমর্থক মাদ্রিদের ক্লাবটির। সাদায় সাদায় ছেয়ে গিয়েছিল গ্যালারি। কিন্তু ম্যাচ যত গড়িয়েছে সেই সাদা গ্যালারির অনেকেই পিএসজির জন্যও হাততালি দিয়েছেন। প্রতিপক্ষের খেলায় মুগ্ধ হলে যা হয়! ফরাসি ক্লাবটি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন, খেলেছেও একেবারে চ্যাম্পিয়নের মতোই। ১৫ বারের ইউরোপসেরাদের মাটিতে নামিয়ে হারিয়েছে ৪-০ গোলে।
রিয়াল যেন কিছু বুঝে ওঠার আগেই ম্যাচটা হেরেছে। ২৪ মিনিটের মধ্যে হজম করেছে ৩ গোল, নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ৩ মিনিট আগে আরও একটি। এর বাইরেও গোল করার বেশ কয়েকটি সুযোগ পেয়েছিল পিএসজি। শেষ পর্যন্ত দারুণ এই জয়ে রোববার ফাইনালে চেলসির মুখোমুখি হওয়া নিশ্চিত করেছে লুইস এনরিকের দল। এ মৌসুমে ফ্রেঞ্চ কাপ, লিগ আঁ ও চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী পিএসজি ক্লাব বিশ্বকাপেও শিরোপা জিতলে এ মৌসুমে যতগুলো প্রতিযোগিতায় তারা অংশ নিয়েছে, তার সব কটিতেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পাবে।

ম্যাচের প্রথম ৫ মিনিটের মধ্যে পিএসজির ফাবিয়ান রুইজ ও নুনো মেন্দেজের দুটি শটে দারুণ সেভ করেন রিয়াল গোলকিপার থিবো কোর্তোয়া। ৬ মিনিটে রিয়ালের ডিফেন্ডার রাউল আসেনসিওর ভুল করার সুযোগ নেন গোটা ম্যাচে দারুণ খেলা উসমান দেম্বেলে। কোর্তোয়া পিএসজির এ উইঙ্গারকে থামাতে পারলেও মিডফিল্ডার রুইজকে পারেননি। তিনি সহজেই গোল করেন। তিন মিনিট পর আরও বড় চমক। সবাইকে অবাক করে দিয়ে রিয়ালের জুড বেলিংহামের সহজ পাস নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যর্থ হন ডিফেন্ডার আন্তোনিও রুডিগার। এ সুযোগে বল নিয়ে টান দিয়ে নিচু শটে গোল করেন দেম্বেলে। ব্যালন ডি’অরের জোর দাবিদার দেম্বেলের মৌসুমে এটি ৩৫তম গোল।
২৪ মিনিটে আরও অসহায়ের মতো গোল হজম করে রিয়াল। ক্লাব বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো রিয়ালের একাদশের হয়ে মাঠে নামা ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপ্পের শট রুখে দেন পিএসজির গোলকিপার জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা। এরপর নিজেদের জাল থেকে বল কোড়ানোর আগপর্যন্ত বল ছুঁতে পারেননি রিয়ালের খেলোয়াড়েরা। দেম্বেলের পাস থেকে রাইটব্যাক আশরাফ হাকিমি ডান প্রান্ত দিয়ে ছুটে রুইজকে পাস দেন, স্পেন তারকা ফেদে ভালভের্দেকে পেছনে ফেলে গোল করেন। এরপর আর ম্যাচে ফেরার মতো অবস্থায় ছিল না রিয়াল।

উল্টো বিরতির আগে পিএসজির হয়ে গোল মিস করেন উইঙ্গার খিচা কাভারাস্কাইয়া। বিরতির পর শুরুতেই অফসাইডের কারণে পিএসজির অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার দেজিরে দুয়ের গোল বাতিল হয়। আর রিয়াল কোচ জাবি আলোনসোও প্রায় এক ঘণ্টা পরই মোটামুটি আত্মসমর্পণ করে ফেলেন। ৬৪ মিনিটে বেলিংহাম ও ৬৫ মিনিটে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে তুলে নেন আলোনসো। ৮৭ মিনিটে পিএসজির বদলি ব্রাডলি বারকোলার পাস থেকে দারুণ শটে ম্যাচের শেষ গোলটি স্ট্রাইকার গনসালো রামোসের। রিয়ালের হয়ে এটাই শেষ ম্যাচ ছিল চিরসবুজ মিডফিল্ডার লুকা মদরিচের। ক্লাব বিশ্বকাপ শেষেই রিয়াল ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন ৩৯ বছর বয়সী মদরিচ।
চোটের কারণে সেন্টারব্যাক ডিন হাউসেন ও ট্রেন্ট-আলেক্সান্দার আর্নল্ডকে পায়নি রিয়াল। সে জন্য ভুগতে হয়েছে রক্ষণকে। সাবেক ক্লাবের মুখোমুখি হয়ে এমবাপ্পেও প্রত্যাশিত খেলাটা উপহার দিতে পারেননি। কিন্তু দারুণ এক মৌসুম কাটানো পিএসজির খেলা আনন্দ দিয়েছে দর্শকদের। ম্যাচ শেষে সম্প্রচারক ডিএজেডএনকে পিএসজি কোচ এনরিকে বলেছেন, ‘আমরা বিশেষ এক মৌসুম কাটাচ্ছি। বিশেষ মুহূর্ত। জয়টা পাওনা ছিল। চেলসির মতো ভালো দলের বিপক্ষেও আমরা এটাই করতে চাই। ক্লাবের হয়ে ইতিহাস গড়ে তারপর ছুটিতে যেতে চাই।’
নতুন কোচ আলোনসো রিয়ালে এখনো নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারেননি। হার মেনে নিয়ে রিয়ালে নতুন যুগ শুরুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আলোনসো, ‘আমরা দুই গোল পিছিয়ে ছিলাম এবং দাঁড়াতে পারিনি। এটা কষ্টকর হার, স্বীকার করতেই হবে আমরা নিজেদের মান অনুযায়ী খেলতে পারিনি। বিরতির পর আমরা নতুন যুগ শুরু করব। একজোট হয়ে খেলবে এমন একটি দল গড়তে চাই।’