রিমান্ড মঞ্জুরের চার দিনেও মিয়া আরেফিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিতে পারেনি ডিবি

0
137
মিয়া আরেফি, ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টার মিথ্যা পরিচয় দেওয়া জাহিদুল ইসলাম ওরফে মিয়া আরেফির রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার চার দিন পরেও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিতে পারেনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। মিয়া আরেফি বর্তমানে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে আছেন। তবে একই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি। আজ রোববার তাঁর আট দিনের রিমান্ডের চতুর্থ দিন চলছে।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট ডিবির মতিঝিল বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজ রোববার বলেন, রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার পরই গত বৃহস্পতিবার ডিবির কর্মকর্তারা মিয়া আরেফিকে আনতে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে যান। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাঁকে ডিবির কাছে দেয়নি। গতকাল শনিবার ডিবি কর্মকর্তারা মিয়া আরেফিকে আনতে আবার কারাগারে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেন। সেদিনও কারা কর্তৃপক্ষ তাঁকে ডিবি কর্মকর্তাদের কাছে দেননি। পরে ডিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানতে পারেন, একজন মন্ত্রী এখনই মিয়া আরেফিকে ডিবি হেফাজতে নিতে বারণ করেছেন।

গত ২৮ অক্টোবর পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষের কারণে নয়াপল্টনে দলটির মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। এর পরপর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে নিজেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মিয়া আরেফি। এ সময় সেখানে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী ও বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেন উপস্থিত ছিলেন। পরদিন ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মিয়া আরেফিকে আটক করে পুলিশ। ওই দিনই ‘মিথ্যা পরিচয়ে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের’ অভিযোগে মিয়া আরেফি, চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী ও বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেনের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় একটি মামলা করেন মহিউদ্দিন শিকদার নামের এক ব্যক্তি।

এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মিয়া আরেফিকে ২৯ অক্টোবর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করে ডিবি পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেন। পরে গত বৃহস্পতিবার ডিবির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিএমএম আদালতের একজন ম্যাজিস্ট্রেট ভার্চ্যুয়াল শুনানি নিয়ে মিয়া আরেফির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই মামলায় গত মঙ্গলবার লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকে সাভার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন ডিবি পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাঁকে আট দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। আদালতের আদেশের পর ডিবি লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাজধানীর মিন্টো রোডের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। আজ ডিবি কার্যালয়ে তাঁর চার দিনের রিমান্ড চলছে।

এর মধ্যে মিয়া আরেফি ও চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ আমলে নেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ায় মিয়া আরেফি ও অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল হাসান সারওয়ার্দীর বিরুদ্ধে পল্টন থানায় হওয়া মামলার সঙ্গে এখন রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধের ধারা যুক্ত হবে।

মিয়া আরেফিকে কেন ডিবি হেফাজতে দেওয়া হচ্ছে না, সে বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক সুভাষ কুমার দাস আজ সন্ধ্যায় কাছে দাবি করেন, ডিবির কোনো কর্মকর্তা মিয়া আরেফিকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যেতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তা ছাড়া মিয়া আরেফি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আসার পরদিন শুক্রবার তাঁকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার মো. রাজীব আল মাসুদ বলেন, ‘ডিবি কর্মকর্তারা মিয়া আরেফিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে রিমান্ডে নিতে গিয়েছিল। কিন্তু রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার আদালতের আদেশনামা সেখানে পৌঁছাতে বিলম্ব হওয়ায় তাঁকে সেদিন ডিবি কার্যালয়ে আনা যায়নি। তা ছাড়া মিয়া আরেফির রিমান্ড মঞ্জুর তো হয়েছেই। যখন দরকার, তখনই কারাগার থেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.