রিটার্ন জমা বন্ধ ৩০ নভেম্বরের পর, আয়কর আইনে আরও যেসব কঠোর বিধান

0
163
আয়কর

নতুন আয়কর আইনে করদাতাদের রিটার্ন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে দুঃসংবাদ রয়েছে। আগামী ৩০ নভেম্বরের পরে আপনি চাইলেও আর আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দিতে পারবেন না। সময় বাড়ানোর আবেদন করার সুযোগও রাখা হয়নি নতুন আইনে। এমনকি সুদ ও জরিমানা দিয়েও আপনি রিটার্ন জমা দিতে পারবেন না। নতুন আয়কর আইনে রিটার্ন–সংক্রান্ত পুরোনো বিধিবিধান বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। নতুন আয়কর আইন ঘেঁটে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

নতুন আয়কর আইন ইতিমধ্যে কার্যকর হয়েছে। এর আওতায় একজন করদাতাকে অবশ্যই ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে হবে। তা না হলে তাঁর নিজের পক্ষে আর রিটার্ন জমা দেওয়ার সুযোগ নেই। একমাত্র যদি কর কর্মকর্তা মনে করেন যে তিনি ওই করদাতার রিটার্ন নেবেন, তাহলেই কেবল তিনি ওই করদাতাকে নোটিশ করবেন।

পুরোনো আইনের মতো প্রতিবছর ৩০ নভেম্বর কর দিবস পালিত হবে। সেদিনই ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের সারা বছরের আয়-ব্যয়ের খবর জানিয়ে রিটার্ন দাখিল করার শেষ দিন। পুরোনো আইন অনুযায়ী, কোনো করদাতা যদি যুক্তিসংগত কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে না পারেন, তাহলে তিনি রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য সময় বাড়ানোর আবেদন করতে পারতেন। কর কর্মকর্তা প্রথমে দুই মাস সময় দিতেন। ওই সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে পারলে আরও দুই মাস সময় বাড়ানোর সুযোগ ছিল। এই সময়ের জন্য করদাতা শুধু ৪ শতাংশ বিলম্ব সুদ দিতেন।

নতুন আইনে আবেদন করার সুযোগ বাতিল করা হয়েছে। এখন থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন না দিলে করদাতা সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করতে পারবেন না।

পুরোনো আইনের ৭৮ ধারায় আরেকটি সুযোগ ছিল। সেটি হলো রিটার্ন জমার সময় পেরোনোর পর করদাতারা কর কার্যালয়ে সময় বাড়ানোর আবেদন না করেও রিটার্ন জমা দিতে পারতেন। সে ক্ষেত্রে সুদ এবং দৈনিক ভিত্তিতে জরিমানা—দুটিই আরোপ করা হতো। নতুন আইনে এই সুযোগও রাখা হয়নি। ফলে স্বেচ্ছায় রিটার্ন দেওয়ার সুযোগটিও শেষ হলো।

তাহলে উপায় কী

এখন কোনো করদাতা যদি নির্দিষ্ট ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে না পারেন, তাহলে কি বিলম্বে রিটার্ন জমা দেওয়ার কোনো উপায় আছে? নতুন আইন অনুযায়ী উপায় আছে।

সেই উপায় হলো, যদি কর কর্মকর্তা মনে করেন যে ওই করদাতাকে রিটার্ন জমা দিতেই হবে, তাহলেই কেবল রিটার্ন দেওয়া যাবে। করদাতা ইচ্ছার ওপর বিষয়টি আর নির্ভর করছে না। নতুন আয়কর আইনের ১৭২ ধারা অনুযায়ী, রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় পার হওয়ার পর উপ–কর কমিশনারের মতে যদি ওই করদাতার রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা থাকে, তাহলে ওই করদাতাকে রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য নোটিশ দেবেন কর কর্মকর্তা। নোটিশ পাওয়ার ২১ দিনের মধ্যে বা কর কর্মকর্তা যে সময়সীমা অনুমোদন করবেন, সেই সময়সীমার মধ্যে রিটার্ন জমা দেবেন ওই করদাতা।

এভাবে রিটার্ন দিতে গেলে করদাতার আরও বিপত্তি আছে। নতুন আইনের ১৭৪ ধারায় বলা আছে, করের ওপর সরল সুদ আরোপের পাশাপাশি কোনো ধরনের কর অব্যাহতি পাওয়া যাবে না। একজন করদাতার ওপর যত টাকা কর ধার্য হয়, তাকে সেই পরিমাণ টাকা কর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো কর অব্যাহতি মিলবে না।

উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, একজন চাকরিজীবী করদাতা বাড়িভাড়া, যাতায়াত ও চিকিৎসা ভাতায় কর অব্যাহতি পান। মোট আয়ের এক-তৃতীয়াংশ বা সাড়ে চার লাখ টাকা—যেটি কম হবে, তা কর অব্যাহতি হিসেবে মিলবে। কিন্তু ১৭৪ নম্বর ধারা যখন প্রযোজ্য হবে, তখন এসব কর অব্যাহতি পাওয়া যাবে না। এ ছাড়া কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মীদেরও কর দিতে হবে।

এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একজন উচ্চপদস্থ কর কর্মকর্তা বলেন, নতুন আইনে করদাতাদের রিটার্ন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনমনীয় মনোভাব দেখিয়েছে। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব করদাতাকে রিটার্ন জমায় বাধ্য করা হচ্ছে, যা বাস্তবসম্মত নয়।

বর্তমানে প্রায় ৯০ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সাধারণত ৩০ লাখের মতো রিটার্ন জমা দেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.