ঢাকায় ডাকাতিতে কিশোরী, তার দেওয়া ঘড়ি নিয়ে প্রেমিকও গ্রেপ্তার

0
106
ঢাকায় ডাকাতিতে কিশোরীর জড়িত থাকার তথ্য দিয়েছে পুলিশ

রাজধানীর সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা প্রকৌশলী মনিরুল হক এলাকায় বিত্তশালী হিসেবে পরিচিত। পবিত্র হজ পালনের জন্য গত জুনে তিনি সৌদি আরবে গেলে তাঁর বাড়িটি দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন মনিরুলের গাড়িচালক ও তত্ত্বাবধায়ক এবং একজন গৃহকর্মী। এই তথ্য জেনে ফেলে কলাবাগানকেন্দ্রিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত এক কিশোর। তার সঙ্গে এক কিশোরীও অপরাধ কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত। তারা দুজন মিলে ওই বাড়িতে ডাকাতির পরিকল্পনা করে।

গত ১৭ জুলাই এ দুই কিশোর–কিশোরী আরও ছয়–সাতজন সহযোগী নিয়ে দেয়াল টপকে ওই বাড়িতে ঢুকে ডাকাতি করে। এ ঘটনায় ওই কিশোরীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছে ডাকাতি করে নেওয়া টাকা ও ঘড়ি।

পুলিশ বলছে, ডাকাতি করার পর ভাগের টাকা নিয়ে প্রেমিকসহ কক্সবাজারে ঘুরতে যায় অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েটি। ডাকাতি করে নেওয়া একটি ঘড়ি তার প্রেমিককে উপহার দেয়। ওই ঘড়িসহ যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই কিশোরীর এক বান্ধবীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার কাছ থেকে ডাকাতির টাকার একটি অংশ উদ্ধার করা হয়েছে।

এ ছাড়া ডাকাতিতে জড়িত অপ্রাপ্তবয়স্ক একটি ছেলে এবং নাহিদুজ্জামান (২৪) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা পাঁচজনই এখন কারাগারে। তাঁদের মধ্যে ডাকাতিতে জড়িত ওই কিশোরী ও অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

নিউমার্কেট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল গনি সাবু বলেন, গ্রেপ্তার কিশোরী ও কিশোর ডাকাতির নেতৃত্ব দেয়। তারা কলাবাগান এলাকায় সক্রিয় একটি ‘কিশোর গ্যাং’য়ের সদস্য। ওই কিশোরের বিরুদ্ধে কলাবাগান এলাকায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে। আর অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েটি পরিবার থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আদালতে জবানবন্দিতে দুজনই ডাকাতির কথা স্বীকার করেছে।

যেভাবে ডাকাতি

ডাকাতির ঘটনা ঘটে ১৭ জুলাই সন্ধ্যার পরে। একতলা বাড়িটি প্রকৌশলী মনিরুল হকের (৭০)। চিরকুমার মনিরুল হক পবিত্র হজ পালনের জন্য গত ২০ জুন সৌদি আরবে যান। এর পর থেকে তাঁর বাড়িতে ছিলেন মো. রিপন মিয়া, যিনি ১৫ বছর ধরে বাড়িটির তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর সঙ্গে ওই বাড়িতে ২৫ বছর ধরে গৃহকর্মীর কাজ করা ফিরোজা বেগম ছিলেন।

ঘটনার বিবরণে রিপন জানান, ওই দিন সন্ধ্যার পর বাড়িতে ঢোকার প্রধান ফটক আটকে নিচতলার একটি কক্ষে বসে তিনি টিভি দেখছিলেন। অপর একটি কক্ষে কাজ করছিলেন গৃহকর্মী ফিরোজা। বাসার দেয়াল টপকে ছয়–সাতজন ডাকাত রিপনের কক্ষে ঢোকে। কিছু বুঝে ওঠার আগে ডাকাত দলের সদস্যরা প্রথমে তাঁর মুঠোফোন কেড়ে নেয়। এরপর গলায় চাকু ধরে ডাকাত দলের সদস্যরা চিৎকার না করতে হুমকি দেয়। শব্দ পেয়ে সেখানে এগিয়ে আসেন ফিরোজা। তখন রিপন ও ফিরোজাকে বাসার একটি কক্ষে আটকে রাখে ডাকাত দলের সদস্যরা। রিপনের কাছ থেকে বাড়িওয়ালার ঘরে ঢোকার চাবি কেড়ে নেয় তারা। ডাকাত দলের সদস্যরা বাড়ির মালিকের কক্ষে ঢুকে তোশকের নিচ থেকে চাবি নিয়ে আলমারি থেকে নগদ আট লাখ টাকা, দুটি মুঠোফোন ও দুটি দামি হাতঘড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় রিপন বাদী হয়ে নিউমার্কেট থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ‘আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই রুমের মধ্যে ছয় থেকে সাতজন ডাকাত আমাকে ঘিরে ধরে। চিৎকার করলে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে প্রচণ্ড মারধর করে। পরে ডাকাতেরা মালিকের কক্ষে ঢুকে মালামাল লুট করে নিয়ে পালিয়ে যায়।’

নিউমার্কেট থানার ওসি শফিকুল গনি বলেন, মামলার পর আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ডাকাত দলের সদস্যদের চিহ্নিত করা হয়। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকা ও কক্সবাজারে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, ডাকাতির আট লাখ টাকা ডাকাতেরা ভাগাভাগি করে নেয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ভাগে পেয়েছিল। লুট করা একটি ঘড়িও সে নিয়েছিল। আর কিশোর ভাগে পেয়েছিল দুই লাখ টাকা। লুট করা মুঠোফোনগুলো সে নিয়েছিল। ওই কিশোরের কলাবাগানের বাসা থেকে দুই লাখ টাকা ও মুঠোফোন দুটি জব্দ করেছে পুলিশ।

ওসি শফিকুল গনি বলেন, ডাকাতির পর অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েটি তার বন্ধুকে নিয়ে কক্সবাজারে ঘুরতে যায়। সেখানে সে ডাকাতির ৮৮ হাজার টাকা খরচ করে ফেলে। আর সে তার বন্ধুকে প্রকৌশলীর বাসা থেকে লুণ্ঠিত ঘড়িটি উপহার দেয়।

পুলিশ ওই মেয়ের বন্ধুকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁর কাছ থেকে লুণ্ঠিত ঘড়িটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। আর মেয়েটির কাছ থেকে ডাকাতির ২০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া মেয়েটির বান্ধবীর কাছ থেকে ডাকাতির আরও ৬৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

নিউমার্কেট থানা-পুলিশ লিখিতভাবে আদালতে জানিয়েছে, ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ছিলেন নাহিদুজ্জামান (২৪)। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের সবার নাম আদালতের কাছে প্রকাশ করেছেন তিনি। তাঁদের মধ্যে আরেক মেয়েও রয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিউমার্কেট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন বলেন, প্রকৌশলী মনিরুল হকের বাসায় ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.