রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ ও বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণে দলগুলো একমত

0
15
সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ সংশোধনে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছেছে।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ সংশোধনে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছেছে। তবে কী আইন বা নীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হবে তা পরবর্তী সংসদ ঠিক করবে।এছাড়া, বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণেও একমত হয়েছে দলগুলো।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকাল ১১টার দিকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার ৯ম দিনের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে এই দুই বিষয়ে একমত পোষণ করে দলগুলো।

বৈঠকের শুরুতে দণ্ডিত ব্যক্তির রাষ্ট্রপতি ক্ষমা প্রার্থনার প্রশ্নে সংবিধান সংশোধনের পক্ষে সাড়া দেন সব রাজনৈতিক দল। রাষ্ট্রপতির এই ক্ষমতা প্রয়োগে একটি আইন ও ক্ষমা প্রদর্শন বোর্ড গঠনের করার প্রস্তাব করে ঐকমত্য কমিশন। তবে এই বিষয়গুলো নিয়ে দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমত থাকায় পরবর্তী সংসদ এই আইন ঠিক করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।

এদিকে, বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি বিবেচনায় বেশিরভাগ দলই প্রতিটি বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের বেঞ্চ গঠনের পক্ষ মত দেয়। তবে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করে বিএনপি।

ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ বলেন, বিগত সময়ে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। এটি নিয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ছিল। সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনসহ সব নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগের সুপারিশের জন্য আইনি ব্যবস্থার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছে।

আলী রীয়াজ আরও বলেন, এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি আইন ও বিধি অনুসরণ করেই ক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারবেন। রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রদর্শনের আগে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও তার পরিবারের মতামত গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া, বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের এক বা একাধিক স্থায়ী বেঞ্চের ব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ বলেছেন, বিগত সময়ে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ব্যাপক অপব্যবহার হয়েছে। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের উপর্যুপরি ক্ষমা করা হয়েছে। তাই আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির সেই ক্ষমতার প্রয়োগ নিয়ন্ত্রণে আমরা একমত।

তিনি আরও বলেন, সংবিধানের পরিবর্তন এনে বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ করতে সুপ্রিম কোর্টের সাথে আলোচনা করা উচিত। কারণ, আমরা চাই বিচার জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছাক।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, বিচার নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনে একটি নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করেছি। এই ক্ষমতার ফাঁকে যেন কোনও দাগি আসামি ক্ষমা না পায়। বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চের বিষয়ে আমরা একমত নই। কারণ, এটি অস্থায়ী। এক্ষেত্রে শহরগুলোতে স্থায়ী বেঞ্চ করতে হবে।

বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টি সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, এই ক্ষমতার মাধ্যমে সর্বোচ্চ দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি যাতে বের হয়ে যেতে না পারে। এক্ষেত্রে ৪৯ অনুচ্ছেদ পরিবর্তনের কথা এসেছে।

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের শর্তসাপেক্ষে স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন নিয়ে অতীতে অনেকগুলো জটিলতা হয়েছে। ক্ষমার প্রক্রিয়াগুলো যথাযথভাবে হয়নি।

গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, নতুন বন্দোবস্ত করতে হলে বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।

বিগত কয়েকদিনের বৈঠক নিয়ে হতাশা থাকলেও আজকের বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিকতা নিয়ে আশার কথা জানান ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.