রাশিয়া-বেলারুশের যৌথ মহড়ায় যোগ দিয়েছে ভারত-বাংলাদেশ

0
14
যৌথ মহড়ায় যোগ দিয়েছে ভারত-বাংলাদেশ

রাশিয়া ও বেলারুশের যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতসহ ছয়টি দেশ। রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন পাঁচ দিনব্যাপী এই মহড়ার নাম ‘জাপাড-২০২৫’।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাসের বরাতে বলা হয়েছে, ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পাঁচ দিনব্যাপী এই মহড়ায় অংশ নিতে তাদের ৬৫ জন সেনা পাঠানো হয়েছে। রাশিয়া ও বেলারুশ যৌথভাবে আয়োজন করা এই মহড়ায় সম্ভাব্য আক্রমণের ক্ষেত্রে সামরিক প্রস্তুতি পরীক্ষা করা হয়েছে।

মহড়ায় অংশ নেয় ১ লাখ সেনা, এখানে পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পন্ন বোমারু বিমান ও যুদ্ধজাহাজ প্রদর্শন করা হয়। গত সপ্তাহে পোল্যান্ডে রুশ ড্রোন ভূপাতিত হওয়ার পর ন্যাটোর সঙ্গে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এ আয়োজন বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সামরিক পোশাক পরে ঘোষণা দেন, “আজ আমরা জাপাদ-২০২৫ কৌশলগত মহড়ার চূড়ান্ত অংশ পরিচালনা করছি”। ভারত ছাড়াও ইরান, বাংলাদেশ, বুরকিনা ফাসো, ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো (ডিআরসি) ও মালি থেকে সামরিক প্রতিনিধিরা অংশ নেয় বলে রুশ সংবাদ সংস্থা তাস জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তবে মহড়ায় ভারতের অংশগ্রহণ বিশেষ নজর কেড়েছে। কুমাওন রেজিমেন্টের একটি ব্যাটালিয়ন নেতৃত্বে ভারতীয় সেনারা এই মহড়ায় অংশ নেয়। এতে ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো এশিয়ায় এমন এক গুরুত্বপূর্ণ মিত্রকে হারাতে পারে যে মিত্রকে দীর্ঘদিন ধরে চীনের মোকাবিলায় ভারসাম্য রক্ষাকারী হিসেবে দেখে এসেছে ওয়াশিংটন। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। মূলত ট্রাম্প প্রশাসন ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পর টানাপোড়েন দেখা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, রাশিয়ার তেল কেনার মাধ্যমে নয়াদিল্লি ইউক্রেনে মস্কোর আক্রমণকে পরোক্ষভাবে সমর্থন দিচ্ছে।

এছাড়া চলতি মাসের শুরুতে ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ভারত ও রাশিয়া যেন “গভীর অন্ধকার চীনের” কাছে হারিয়ে যাচ্ছে। আর গত সপ্তাহে ট্রাম্প এক্স-এ জানান, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র শুল্কসংক্রান্ত সমস্যার সমাধানে আলোচনায় বসেছে। এর আগে তিনি অভিযোগ করেছিলেন, ভারত মার্কিন পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জবাবে লেখেন, “ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও প্রাকৃতিক অংশীদার”। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কের সীমাহীন সম্ভাবনা উন্মোচিত হবে।

ভারত অবশ্য এর আগেও রাশিয়ার সামরিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার হামলার আগে ২০২১ সালে নয়াদিল্লি ভলগোগ্রাদ অঞ্চলে সন্ত্রাসবিরোধী ও প্রচলিত যুদ্ধ কার্যক্রমে অংশ নিতে সেনা পাঠিয়েছিল। ভারত-রাশিয়ার সম্পর্ক সোভিয়েত আমল থেকেই গভীর। স্নায়ুযুদ্ধকালে ভারত নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকলেও সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকেই বেশিরভাগ অস্ত্র কিনত। এখনো ভারতের বেশিরভাগ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রাশিয়া থেকে কেনা হয়, যদিও গত দুই দশকে নয়াদিল্লি অস্ত্রের উৎস বহুমুখী করার চেষ্টা করছে। এ বছরও ইরান জাপাদ মহড়ায় অংশ নিয়েছে, যদিও সরকারি পর্যায় থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হয়নি।

রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ কৌশলগত মিত্র ইরান ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য মস্কোকে শাহেদ আত্মঘাতী ড্রোন সরবরাহ করছে। পশ্চিমা গোয়েন্দাদের মতে, ইরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও দিচ্ছে। চলতি বছর তেহরান ও মস্কো সামরিক ও অন্যান্য খাতে সম্পর্ক জোরদার করতে “সামগ্রিক কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি” সই করেছে।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.