রাশিয়া খুব বড় শক্তি, যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনের চুক্তি করা উচিত: ট্রাম্প

0
28
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল শনিবার বলেছেন, ‘যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনের উচিত রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি করা। কারণ, রাশিয়া খুব বড় একটি শক্তি। তারা (ইউক্রেন) তা নয়।’

আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প এমন মন্তব্য করেন। শোনা যাচ্ছে, যুদ্ধ বন্ধের শর্ত হিসেবে বৈঠকে পুতিন ইউক্রেনের আরও ভূমি দাবি করেছেন।

স্থানীয় সময় গত শুক্রবার আলাস্কায় ট্রাম্প আর পুতিনের বৈঠকটি হয়। এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গেও কথা বলেন। ট্রাম্প জেলেনস্কিকে জানান, যদি কিয়েভের পক্ষ থেকে দোনেৎস্ক অঞ্চলের পুরোটা ছেড়ে দেওয়া হয়, তবে রাশিয়া বেশির ভাগ জায়গায় যুদ্ধ থামাবে—এমন শর্ত দিয়েছেন পুতিন।

এ বিষয়ে জানাশোনা আছে—এমন একটি সূত্র এ কথা নিশ্চিত করেছে। ইউক্রেনের শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত দোনেৎস্ক অনেক আগে থেকে পুতিনের অন্যতম লক্ষ্যবস্তু।

জেলেনস্কি এমন চাওয়া প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে জানায় ওই সূত্র। এরই মধ্যে ইউক্রেনের এক–পঞ্চমাংশ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দোনেৎস্কের তিন ভাগ এলাকাও তার নিয়ন্ত্রণে। ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো এ অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করে রুশ বাহিনী।

ইউক্রেন ও দেশটির ইউরোপীয় মিত্ররা এর আগে যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি চেয়েছিল, সেটা ছাড়াই একটি শান্তিচুক্তি সইয়ের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে পুতিনের সঙ্গে একমত হওয়ার কথা জানিয়েছেন ট্রাম্প।

নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, সবার পক্ষ থেকে এটা নির্ধারণ করা হয়েছে যে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলা ভয়াবহ যুদ্ধের অবসান ঘটানোর সর্বোত্তম উপায় সরাসরি শান্তিচুক্তিতে যাওয়া। এটা যুদ্ধ বন্ধ করবে। তবে এ চুক্তি নিছকই একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি নয়, যা প্রায়ই টেকে না।

এদিকে জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জানান, যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার সদিচ্ছা না থাকাটা স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলবে। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধ করার একটি মূল উপাদান হত্যা বন্ধ করা।’ জেলেনস্কি জানান, আগামীকাল সোমবার তিনি ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে গিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করবেন।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ট্রাম্প–জেলেনস্কির সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল। বৈঠকে দুই নেতার তুমুল বাগ্‌বিতণ্ডা বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়। সেদিন জেলেনস্কির সঙ্গে তর্কে জড়ান যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সও।

এবার ট্রাম্প অবশ্য আশা প্রকাশ করেছেন, পুতিন আর জেলেনস্কিকে নিয়ে একসঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন তিনি।

যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা। তারা ইউক্রেনের পাশে থাকার ও রাশিয়ার ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, আগামীকাল হোয়াইট হাউসের বৈঠকে জেলেনস্কির পাশাপাশি ইউরোপীয় নেতারাও থাকবেন।

তবে ইউরোপের কোন কোন নেতা হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ পেয়েছেন, সে বিষয়ে কারও পক্ষ থেকে এখনো নিশ্চিত করে কিছু জানানো হয়নি।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করে। বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপে গত ৮০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী যুদ্ধ এটা। উভয় পক্ষে ১০ লাখের বেশি মানুষ হতাহত হয়েছেন। এর মধ্যে ইউক্রেনের হাজারো বেসামরিক মানুষ রয়েছেন।

রয়টার্স

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.