রাত পোহালেই ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস। এদিন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ। এ জন্য ঢাকার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এবার স্মৃতিসৌধে ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগুয়েল ওয়াংচুকের শ্রদ্ধা নিবেদনের কথা আছে। সবার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে জতীয় স্মৃতিসৌধের বেদি।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিবেদন নির্বিঘ্ন করতে নেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা। স্মৃতিসৌধ চত্বর, বেদিসহ বিভিন্ন স্থাপনা সাজিয়ে তোলা হয়েছে রংতুলির আঁচড়ে। বাগানগুলোতে শোভা পাচ্ছে রংবেরঙের বাহারি ফুল।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্মৃতিসৌধসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ২৬ মার্চ (মঙ্গলবার) স্বাধীনতা দিবসে স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল নামবে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে আসবেন।
ইতিমধ্যে দিবসটি উদ্যাপন উপলক্ষে পুরো স্মৃতিসৌধ চত্বরের বিভিন্ন অংশে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শেষ করেছেন সাভার গণপূর্ত বিভাগের কর্মীরা। রংতুলির আঁচড়ে ফুটে উঠেছে বেদিসংলগ্ন সিঁড়িগুলো। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততায় চকচকে হয়ে উঠেছে পুরো স্মৃতিসৌধ চত্বর। সবুজ ঘাসের গালিচা কেটেছেঁটে নান্দনিক করে তোলা হয়েছে। পুরোনো ফুলের গাছগুলো কয়েক দিনের নিয়মিত পরিচর্যায় সতেজ হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি রোপণ করা হয়েছে নানা জাতের ফুলের গাছ। বিভিন্ন ভবনের দেয়ালে ঝোলানো হয়েছে বর্ণিল আলোকবাতি। স্মৃতিসৌধ এলাকা ছাড়াও আশপাশের এলাকায়ও সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক বিভাজকে রঙের কাজ করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে সড়ক বিভাজকের ফাঁকা অংশে রোপণ করা হয়েছে ফুলের গাছ।
সোমবার দুপুরে স্মৃতিসৌধের সামনে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ফটকের সামনে সুদৃশ্য একটি অস্থায়ী ফটক স্থাপন করা হয়েছে। ফটকসংলগ্ন স্মৃতিসৌধের প্রাচীর সাজানো হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সাত বীরশ্রেষ্ঠের ছবি দিয়ে। নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের কারণে স্মৃতিসৌধ চত্বরে প্রবেশের সুযোগ না থাকায় মূল ফটকের বাইরে থেকে অনেকেই স্মৃতিসৌধ দেখছেন ও ছবি তুলছেন।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত শ্রেয়া ব্যানার্জি থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। ঢাকার ইন্দিরা রোডের বাসিন্দা মায়া সরকারের মেয়ে কাজী ইপশিতা সরকারের সঙ্গে বন্ধুত্বের সূত্রে প্রথমবারের মতো শ্রেয়া এসেছেন বাংলাদেশে। বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে মায়া সরকার তাঁকে রোববার বিকেলে নিয়ে এসেছিলেন স্মৃতিসৌধে। নিরাপত্তার কারণে ভেতরে প্রবেশের সুযোগ না থাকায় দূর থেকেই স্মৃতিসৌধ দেখতে হয় তাঁদের।
আলাপকালে শ্রেয়া ব্যানার্জি বলেন, ‘ইপশিতার কাছ থেকে এ দেশের মানুষের ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া, স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ—এসব বিষয়ে শুনেছি। খুব ইচ্ছা ছিল বাংলাদেশে আসার। এবার এসে স্মৃতিসৌধ ও শহীদ মিনার দেখলাম।’
মায়া সরকার বলেন, ‘আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের সঙ্গে (শ্রেয়া ব্যানার্জি) পরিচয় করিয়ে দিতে তাঁকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার দেখিয়েছি। স্মৃতিসৌধ দেখাতে নিয়ে এসেছি।’
জাতীয় স্মৃতিসৌধের ইনচার্জ সাভার গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, মহান স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে স্মৃতিসৌধকে প্রায় দেড় মাস ধরে ধুয়েমুছে পরিষ্কার করা হয়েছে। রংতুলির কাজ শেষ করে বিভিন্ন স্থানে বাহারি রঙের ফুলের চারা রোপণের মধ্য দিয়ে স্মৃতিসৌধ এলাকা সাজিয়ে তোলা হয়েছে। লেক সংস্কার, আলোকসজ্জাসহ পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও এর আশপাশের এলাকায় চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সাদাপোশাকে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য স্মৃতিসৌধের পাশাপাশি সাভার ও আশুলিয়া সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য কিছু নির্দেশনা রয়েছে। গাবতলী থেকে মানিকগঞ্জ এবং চন্দ্রা থেকে নবীনগর এই মহাসড়কে যান চলাচলে কিছুটা বিধিনিষেধ থাকবে। সোমবার দিবাগত রাত ৩টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ কার্যকর হবে। তিনি আশা করছেন, উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মহান স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপিত হবে।