
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিং পুলে সাঁতার কাটতে গিয়ে সায়মা হোসাইন নামের এক শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে অব্যবস্থাপনা ও হত্যার অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা এ বিক্ষোভ শুরু করেন, যা রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলে। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে আমি কে, সায়মা সায়মা’, ‘আমার বোন মরল কেন, প্রশাসন জবাব দে’, ‘কে মেরেছে কে মেরেছে, প্রশাসন প্রশাসন’সহ নানা স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, সুইমিং পুলের অব্যবস্থাপনার কারণেই সায়মা দিনদুপুরে পানিতে ডুবে মারা গেছেন। এর দায় প্রশাসনকেই নিতে হবে এবং যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
এর আগে বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিং পুলে সাঁতার কাটতে নামলে পানিতে ডুবে যান সায়মা হোসাইন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সায়মা হোসাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ও মন্নুজান হলের আবাসিক ছাত্রী ছিলেন। তাঁর বাড়ি কুষ্টিয়া জেলায়।
তাহমিদা কনক নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে রাত ৮টার পর মেয়েদের হল থেকে বের হতে দেওয়া হয় না। রাত ১১টার পর ফিরলে তিন স্তরের নিরাপত্তাবলয়ের ভেতর থেকে চাবি এনে প্রায় আধা ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখার পর গেট খোলা হয়। অথচ নিরাপত্তাসচেতন এই ক্যাম্পাসেই সুইমিং পুলে দিনদুপুরে ডুবে মরে সায়মা, সন্ধ্যারাতে ট্রাকচাপায় মরে হিমেল ভাই।’
রাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘সায়মা দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। একজন শিক্ষার্থী সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে, তাহলে কেন তার ফিটনেস চেক করা হয়নি? রাকসুর প্রতিনিধিরা আজ দায়িত্ব গ্রহণ করেছে, দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, সায়মা হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত অনতিবিলম্বে নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলের পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ দিতে হবে।’
রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, ‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা আন্দোলন করার পরও প্রশাসনের কোনো টনক নড়ে না। বারবার এমন হত্যা হোক, সেটা আমরা চাই না। সায়মা হত্যার বিচার নিশ্চিত করেই আমরা এখান থেকে যাব।’
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের একপর্যায়ে রাত পৌনে ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব। তিনি বলেন, ‘তোমরা যখন এখানে সমবেত হও, তখন আমরা ঘটনার সময় যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের ও মেডিকেলের কর্মকর্তাদের ভাষ্য জানার চেষ্টা করেছি। প্রশাসনের ফরিদ স্যারসহ (সহ-উপাচার্য) প্রথমবারের মতো বিভাগের শিক্ষক-ছাত্র প্রতিনিধিদের তদন্তে রাখা হয়েছে। তাঁরা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন দেবেন। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমরা ব্যবস্থা নেব।’ উপাচার্যের বক্তব্যের পর শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে সরে যান।
তদন্ত কমিটি গঠন
শিক্ষার্থী সায়মা হোসাইনের মৃত্যুর ঘটনা অনুসন্ধানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানকে আহ্বায়ক করে তিনজন শিক্ষক ও একজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধির সমন্বয়ে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে রাত সাড়ে ১১টার পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কমিটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিং পুলে ঘটনার পূর্বাপর পরিস্থিতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে সায়মার চিকিৎসা কার্যক্রম পর্যালোচনা করে এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনার দায়দায়িত্ব নির্ধারণসহ প্রয়োজনীয় সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে। কমিটিকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন ও ১০ কার্যদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে হবে। তদন্ত কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিং পুল বন্ধ থাকবে।

















