নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু রোহিঙ্গামুক্ত, আরও ২৪২ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর

0
101
তুমরু থেকে রোহিঙ্গাদের বাসে করে নেওয়া হচ্ছে কক্সবাজারের উখিয়ায়। আজ রোববার দুপুরে, ছবি: সংগৃহীত

রোহিঙ্গা স্থানান্তর কার্যক্রম পরিচালনা করছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয় ও জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌথভাবে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত শূন্যরেখার এসব রোহিঙ্গা উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয়শিবিরগুলোয় থাকবেন জানিয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আজ রোববার সর্বশেষ ধাপে তুমব্রু সীমান্ত থেকে শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরের ৬৭ পরিবারের ২৪২ রোহিঙ্গাকে উখিয়ার আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়। তুমব্রু এলাকাকে রোহিঙ্গামুক্ত এলাকা ঘোষণা করে সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, উপজেলা প্রশাসনসহ ঊর্ধতন মহলকে জানানো হয়েছে। সেখানে (তুমব্রু এলাকায়) আগে রোহিঙ্গাদের থাকার জন্য যেসব স্থাপনা প্যান্ডেল বসতি তৈরি হয়েছিল, তার সবকিছু উচ্ছেদ করা হয়েছে। তুমব্রু এলাকায় এখন কোনো রোহিঙ্গা নেই। তুমব্রু থেকে গণনার সময় সেসব রোহিঙ্গা আত্মগোপন করেন, তাঁরা কোথায় আছেন, তার অনুসন্ধান করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, গত ১৮ জানুয়ারি তুমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়ার কাছে শূন্যরেখা আশ্রয়শিবিরে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সঙ্গে মিয়ানমারের আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় এক রোহিঙ্গা নিহত ও দুই শিশু আহত হয়। এ ঘটনার পর শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে ৬৩০টির বেশি ঘর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর ৪ হাজার ৩০০ রোহিঙ্গা গৃহহীন হয়ে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ ও আশপাশের কয়েকটি জায়গায় আশ্রয় নেন।

২৯ ও ৩০ জানুয়ারি ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আশপাশের কয়েকটি এলাকায় অবস্থান নেওয়া শূন্যরেখার রোহিঙ্গাদের গণনা করে পাওয়া যায় ৫৫৮ পরিবারের ২ হাজার ৯৮৭ রোহিঙ্গা। সাত দফায় তুমব্রু থেকে মোট ৫৩০ পরিবারের ২ হাজার ৫২৭ জনকে উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয়শিবিরে স্থানান্তর করা হলেও আরও ২৮ পরিবারের ৪৬০ রোহিঙ্গার হদিস নেই।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ ও আরআরসি কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপে তুমব্রু থেকে স্থানান্তর করা হয়েছিল শূন্যরেখার ৩৬ পরিবারের ১৮৪ রোহিঙ্গাকে। আজ সপ্তম ধাপে ৬৭ পরিবারে ২৪২ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের মধ্য দিয়ে তুমব্রু রোহিঙ্গামুক্ত হলো।

জানতে চাইলে ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক (ইনচার্জ) সোহাগ রানা বলেন, শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে অগ্নিকাণ্ড ও দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের আগে (১৭ জানুয়ারি) সেখানে (শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে) রোহিঙ্গা ছিল ৪ হাজার ৩০০ জনের মতো। তুমব্রু এলাকায় অবস্থান নিয়েছিল তিন হাজারের মতো। অবশিষ্ট এক হাজারের মতো রোহিঙ্গা মিয়ানমারে চলে গিয়েছিল। তাদের কেউ কেউ তুমব্রুতে ফিরে এসেছেন। সবাইকে আজ রোববার উখিয়ায় স্থানান্তর করা হয়েছে। তুমব্রুতে এখন কোনো রোহিঙ্গা নেই। নতুন করে কোনো রোহিঙ্গাকে সেখানে (তুমব্রুতে) থাকতে দেওয়া হবে না। শূন্যরেখার কোনো রোহিঙ্গা নাইক্ষ্যংছড়ির কোথাও আশ্রয় নিলে তাঁদের ধরে আইনের আওতায় আনা হবে।

আব্দুল কুদ্দুস

কক্সবাজার

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.