রাঙ্গামাটিতে হয়ে গেল নজরুল উৎস

0
1376
শিল্পীদের্ নৃত্য পরিবেশনা।

বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় কবি,সংগীতজ্ঞ, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক ও দার্শনিক এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্মরণে রাঙ্গামাটিতে হয়ে গেল নজরুল উৎস-২০১৯। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার নজরুল সংগীত শিল্পী পরিষদ এ  উৎসবের আয়োজনে করেন রাঙ্গামাটি শিল্পকলা একাডেমীর মিলনায়তনে।

গত ১০ শ্রাবণ, ১৪২৬ বঙ্গাব্দ, ২৫ জুলাই ২০১৯খ্রিঃ রোজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়। কবি নজরুলের জীবন ও কর্ম বিষয়ক আলোচনা, গান, কবিতা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণসহ সন্ধ্যায় পরিবেশিত হলো সংগীত, নৃত্য ও কবিতার ছন্দে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠাুন।

নজরুল সংগীত শিল্পীদের সমাবেত পরিবেশনা।

কাজী নজরুল ইসলাম:  জন্ম ২৫ মে ১৮৯৯ –মৃত্য ২৯ আগস্ট ১৯৭৬; বাংলায়  ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ – ১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ ও দার্শনিক যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তিনি বাংলা সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখযোগ্য।[১] বাঙালি মনীষার এক তুঙ্গীয় নিদর্শন নজরুল। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি।

শিশু শিল্পীদের সমাবেত সংগীত পরিবেশনা।

তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

বিংশ শতাব্দীর বাংলা মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। তাঁর কবিতা ও গানে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে – কাজেই “বিদ্রোহী কবি”, তাঁর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে উভয় বাংলাতে প্রতি বৎসর উদযাপিত হয়ে থাকে।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।

নজরুল এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মীয়।

স্থানীয় এক মসজিদে সম্মানিত মুয়াযযিন হিসেবেও কাজ করেছিলেন। কৈশোরে বিভিন্ন থিয়েটার দলের সাথে কাজ করতে যেয়ে তিনি কবিতা, নাটক এবং সাহিত্য সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। এসময় তিনি কলকাতাতেই থাকতেন। এসময় তিনি ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। প্রকাশ করেন বিদ্রোহীএবং ভাঙার গানের মতো কবিতা; ধূমকেতুর মতো সাময়িকী। জেলে বন্দী হলে পর লিখেন রাজবন্দীর জবানবন্দী, এই সব সাহিত্যকর্মে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ছিল সুস্পষ্ট। ধার্মিক মুসলিম সমাজ এবং অবহেলিত ভারতীয় জনগণের সাথে তার বিশেষ সম্পর্ক ছিল। তার সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে ভালোবাসা, মুক্তি এবং বিদ্রোহ। ধর্মীয় লিঙ্গভেদের বিরুদ্ধেও তিনি লিখেছেন। ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি মূলত কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। বাংলা কাব্যে তিনি এক নতুন ধারার জন্ম দেন। এটি হল ইসলামী সঙ্গীত তথা গজল, এর পাশাপাশি তিনি অনেক উৎকৃষ্ট শ্যামা সংগীত ও হিন্দু ভক্তিগীতিও রচনা করেন। নজরুল প্রায় ৩০০০ গান রচনা এবং অধিকাংশে সুরারোপ করেছেন যেগুলো এখন নজরুল সঙ্গীত বা “নজরুল গীতি” নামে পরিচিত এবং বিশেষ জনপ্রিয়।

একক নৃত্য পরিবেশনা।

বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ১৯৭২ সালে তিনি সপরিবারে ঢাকা আসেন। এসময় তাঁকে বাংলাদেশের জাতীয়তা প্রদান করা হয়। এখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পুরস্কৃত শিল্পীদের সাথে আয়োজক কমিটি।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রবীন স্থানীয় সাংবাদিক সুনীল কান্তি দে, নজরুল শিল্পী পরিষদের রাঙ্গামাটি শাখার সভাপতি, কবি, সংগীত অনুরাগী মোঃ জানে আলম এবং নজরুল শিল্পী পরিষদের রাঙ্গামাটি শাখার সম্পাদক বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী সুরেশ ত্রিপুরা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকদের একাংশ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.