রাঙ্গামাটিতে আর্ন্তজাতিক আদিবাসী দিবস পালিত

0
790
আদিবাসী অনুষ্ঠানে শিল্পীরা।

‘আর্ন্তজাতিক আদিবাসী দিবস ২০১৯’ পালন করেছে পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসী ফোরাম। আর্ন্তজাতিক এ দিবসটির  এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল‘ Indigenous Language ‘।

আজ ৯ আগস্ট ‘‘আদিবাসি ভাষা চর্চা ও সংরক্ষণে এগিয়ে আসুন’’ শ্লোগানে দিবসটি উদযাপন করলো রাঙ্গামাটিতে বাংলাদেশ আদিসাসী ফোরাম। সকাল ৯টায় রাঙ্গামাটির পৌর প্রাঙ্গনে গণজমায়েতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়।

অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন সাবেক সাংসদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহসভাপতি উষাতন তালুকদার। সংহতি জ্ঞাপন করে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাকমা সার্কেলের রাণী ইয়েন ইয়েন রায়।

সাবেক সাংসদ উষাতন তালুকদার

উদ্বোধনী ভাষণে উষাতন তালুকদার বলেন, ‘ জাতিসংঘ এ দিবসটি ঘোষণা করল -যাতে করে বিভিন্ন বৃহৎ জনগোষ্ঠী, বিভিন্ন রাস্ট্র, বিভিন্ন উন্নত নাগরিক সমাজ, আদিবাসীদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষিত হয়, সহানুভূতি উদ্রেক হয়, পিছনে ফেলে রাখা না হয়, তাদের প্রতি উদাসিনতা দেখানো না হয়, তাদের প্রতি অবজ্ঞা না হয়, সেজন্য জাতিসংঘ বিশেষভাবে আদিবাসী বর্ষ, আদিবাসী দিবস ঘোষণা করেছে।’’

তিনি আদিবাসী প্রসঙ্গে বলেন, ‘আজকের এদিবসটি সুখকর মহুর্তে নয়, অনেকটা নিরান্দনের সাথে উদযাপন করতে হচ্ছে। এ দিবসটি উদযাপনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে, সরকারীভাবে পালন করার কথা ছিল কিন্তু সেটা না হয়ে এ দিবসটি ঘিরের নানা গুঞ্জরন, নানা তর্ক বিতর্ক, নানা অবতারণা এসে যায়।’

‘সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক পেক্ষাপটে, যাদের নিজস্ব ভাষা রয়েছে, সামাজিক বিচার আচার রয়েছে, যারা পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী, রাস্ট্রযন্ত্রে নীতিনির্ধারক মহলে যাদের ভূমিকা নগণ্য, তারাই আদিবাসী, ইংরেজীতে বলা হয় ‘Indigenous People‘। সরকার স্বীকার করুক আর না করুক এসব পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে রয়েছে এটাই বাস্তব।’

আদিবাসী ভাষা বিষয়ে বলেন,‘আদিবাসী ভাষা, চর্চা এবং সংরক্ষণ। ৭০০০ ভাষার মধ্যে মাত্র ৬০০ ভাষা টিকে থাকবে। সাহিত্য চর্চা না করলে ভাষা হারিয়ে যাবে। শিক্ষানীতিতে আছে, সরকার তো বলেছে পাঁচটি ভাষায় বই ছাপিয়ে দিয়েছি।বই দিলে তো হবে না, বাস্তবায়ন করতে হবে,  সেগুলো পড়াতে হবে। তাহলে শিক্ষক কোথায়? প্রশিক্ষণ কোথায়? সেগুলোর ব্যাপারে সরকার উদাসিন।’

তিনি উন্নয়ন প্রসঙ্গে বলেন, ‘এসডিজি হলো কাউকে পিছনে ফেলে রেখে নয়, সবাইকে নিয়ে উন্নয়ন করতে হবে। এটা শুধু মুখে বললে হবে না। পাহাড়ের মানুষ ও সমতলের আদিবাসীরাও এদের মানুষ, তাদেরকে উন্নয়নে সুযোগ করে দিতে হবে।’ এখানকার মানুষ অনিরাপত্তায় ভূগছে। শুধু পেটের দায়ে নয়, নিরাপত্তার কারণে সাভারে চলে যাচ্ছে, চট্টগ্রামে চলে যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ, নিজের ইচ্ছায় নয়! স্বাধীন সার্বভৌম দেশে, বাপ দাদা চৌদ্দপুরুষের ভিটায় নিজেকে নিরাপদ মনে না করলে কোথায় নিরাপদ মনে করবে?

পার্বত্য বিষয়ে বলেন, ‘আমরা সামপ্রদায়িক সম্প্রীতিতে আছি, মাঝে মাঝে উসকানি মূলক অবস্থার সৃষ্টি হয়। এটা কারোর জন্য মঙ্গল নয়।যদি প্রশাসন খাড়াভাবে দাঁড়িয়ে গেলে, কারো সাহস আছে তার বিরোধীতা করার।সরকার চাইলে আজই সন্ত্রাস চাঁদাবাজি বন্ধ হবে। আমরা চাই সরকারের সদিচ্ছায় এখানকার সকল সমস্যা রাজনৈতিক বিবেচনায় সমাধান করা হোক।’

অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপস্থিত অতিথি বৃন্দ

আরো বক্তব্য রাখেন, প্রধান অতিথি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান, রাঙ্গামাটি জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি দীননাথ তঞ্চঙ্গ্যা, সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক শান্তি বিজয় চাকমা প্রমুখ।

আদিবাসীদের মাতৃভাষা চর্চা, সংরক্ষণ ও বিকাশের লক্ষে প্রয়োজনীয় বাজেট প্রদান এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ভূমি অধিকারসহ মৌলিক অধিকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানান তারা।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, সাবেক উপসচিব প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা।তিনি আদিবাসীদের দাবিনামা সমূহ পড়ে শুনান। বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর মাধ্যমে আদিবাসীদের জীবন সংস্কৃতি ও দাবিসমূহ তুলে ধরা হয়।

র‌্যালীর মাধ্যমে পৌর প্রাঙ্গন হতে রাঙ্গামাটি শহর প্রদক্ষিণ করে শোভাযাত্রা সমাপ্তি করা হয় রাজবাড়ির সাবারাং কমিউনিটি সেন্টারে এসে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.