রাখাইন সীমান্তে তুমুল গোলাগুলি, মিয়ানমারের ১৪ সীমান্তরক্ষী পালিয়ে বাংলাদেশে

সীমান্ত থমথমে, অন্যত্র আশ্রয়ে গেছেন ৩ হাজার মানুষ

0
97
তুমব্রু সীমান্তে বাংলাদেশি এক বাড়িতে মর্টার শেলের খোসা এসে পড়ে

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে বিদ্রোহী দল আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ১৪ সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের অস্ত্র ও গুলি বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) হেফাজতে আছে। বিজিবি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ নিয়ে পরে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবে বিজিবি ৩৪ ব্যাটালিয়ন।

সীমান্তের ওপারে চলছে মুহুর্মুহু মর্টার শেল ও গুলিবর্ষণ। এতে সীমান্তে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তুমব্রু সীমান্তের কাছে দুই গ্রামের প্রায় তিন হাজার বাংলাদেশি অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। শনিবার রাত থেকে রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত থেমে থেমে ছোড়া হচ্ছে মর্টার শেল, গোলাগুলি চলছে। তুমব্রু সীমান্তে বাংলাদেশি দুই বাড়িতে মর্টার শেলের বিস্ফোরিত অংশসহ গুলি এসে পড়েছে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রাত থেকে এখন পর্যন্ত (সকাল) সীমান্তে মর্টারশেল ও গুলিবর্ষণ থেমে নেই। এতে রাত থেকে দুই গ্রামের (কোনাপাড়া ও পশ্চিম পাড়ার) প্রায় তিন হাজার মানুষ নিরাপদে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া মিয়ানমারের ছোড়া মর্টার শেলের বিস্ফোরিত অংশ ও গুলি এসে পড়েছে স্থানীয় দুই বাড়িতে।’

টিন ছিদ্র হয়ে মর্টারের বিস্ফোরিত গোলার খোসা ঘরের ভেতরে এসে পড়ে

তিনি বলেন, ‘সীমান্তে থমথমে অবস্থা। এখানকার বাসিন্দারা খুব বেশি আতঙ্কের মধ্য রয়েছে।’

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, রাত থেকে এখনও মুহুর্মুহু গুলি ও মর্টার শেলের গোলা নিক্ষেপ চলছে মিয়ানমার সীমান্তে। এ ঘটনায় পশ্চিম পাড়ার ফরিদ আলমের বাড়িতে গুলি এবং কোনাপাড়া ইউনুছের বাড়িতে এসে পড়ে মর্টার শেলের খোসা। এতে বাড়ির টিন ছিদ্র হয়ে খোসাটি বাড়ির ভেতরে এসে পড়ে। তবে বাড়িতে কেউ না থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনার আগে থেকেই কোনারপাড়ার বাসিন্দারা বাড়িঘর ছেড়ে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় চলে গেছেন। নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ভয়ে লোকজন ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।

তুমব্রু সীমান্তের বাসিন্দা শাহাজান মিয়া বলেন, ‘ব্যাপক মর্টার শেল ও গুলিবর্ষণ চলছে সীমান্তে। ফলে এখানকার মানুষ অন্যত্র সরে যাচ্ছেন। এখানে থমথমে অবস্থা। মানুষ রাত-দিন আতঙ্কে দিনযাপন করছেন। অনেকে বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না।’

মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি

এদিকে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং থেকে শাহপরীর দ্বীপ এলাকার মিয়ানমার সীমান্তে গুলিবর্ষণের আওয়াজ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী বলেন, রাত থেকে সকাল পর্যন্ত থেমে থেমে গুলিবর্ষণ চলছে। এ কারণে এখানকার মানুষের মাঝে ভয়ভীতি কাজ করছে।

এ বিষয়ে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (বিজিবি-২) অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘সীমান্তে আমরা সর্বোচ্চ সর্তক অবস্থানে রয়েছি। কোনোভাবে নতুন করে অনুপ্রবেশ ঘটতে দেওয়া হবে না।’

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন বলেন, ‌‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের তুমব্রু এলাকায় আবারও গুলিবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। আমরা সীমান্তে বসবাসকারীদের সর্তক থাকতে বলেছি। আমরা সব সময় সীমান্তের খোঁজখবর রাখছি।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.