ছয় আন্তর্জাতিক সংগঠনের বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করেছে সরকার

0
52
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

বাংলাদেশে রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দিয়ে নতুন করে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়ে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ছয়টি নাগরিক সংগঠনের বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করেছে সরকার। ওই বিবৃতিতে তুলে ধরা অভিযোগগুলোকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন উল্লেখ করে সরকার নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বানকে অযৌক্তিক এবং অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছে।

আজ শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এসব কথা জানানো হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে ছয়টি আন্তর্জাতিক নাগরিক সংগঠনের পক্ষপাতদুষ্ট ও অযৌক্তিক বিবৃতি বাংলাদেশ সরকার দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে। বিবৃতিতে উত্থাপিত অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলা হয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন পরিচালনার জন্য ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বিভিন্ন দেশ ভূয়সী প্রশংসা করেছে, নতুন সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান অযৌক্তিক এবং অগ্রহণযোগ্য।

নির্বাচন অত্যন্ত অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, উৎসবমুখর পরিবেশে এবং জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। নির্বাচনে কোনো কোনো জায়গায় বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় ভোট পড়ার হার ৭০ শতাংশ বা তার চেয়েও বেশি ছিল। তবে শহর এলাকায় তুলনামূলকভাবে কম ভোটার উপস্থিতির কারণে সারা দেশে গড় ভোট পড়ার হার ছিল ৪১ দশমিক ৮ অর্থাৎ প্রায় ৪২ শতাংশ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করেছে। নির্বাচনের আগে বিএনপির সহিংসতা এবং নির্বাচন বানচাল করার হুমকি সত্ত্বেও হাতে গোনা কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ভোটের দিনটি ছিল শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবমুখর। আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক এবং সাংবাদিক, যাঁরা সক্রিয়ভাবে মাঠ থেকে নির্বাচনের প্রতিবেদন করেছেন, তাঁরা তাঁদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ার এর সত্যতা প্রকাশ করেছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনকে সামনে রেখে সংযম এবং আইনি সীমানা মেনে সহিংসতার ঘটনাগুলোর মোকাবিলা করেছেন। রাজনৈতিক কারণে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। নির্বাচন বানচালের জন্য যারা মানুষ ও যানবাহনে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করেছে, আগুন দিয়েছে, মানুষকে হত্যা ও আহত করেছে এবং জনজীবন ব্যাহত করেছে তাদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে এবং সব নাগরিকের অধিকার রক্ষার জন্য এই পদক্ষেপগুলো প্রয়োজনীয় ছিল।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তাই ওই যৌথ বিবৃতি বিভ্রান্তিকর, একতরফা এবং অগ্রহণযোগ্য। গণতন্ত্রবিরোধী ও নির্বাচনবিরোধী শক্তি যারা নির্বাচনকে বানচাল করার অপচেষ্টা করেছিল, তাদের উৎসাহিত করার জন্য এটি বিবৃতি উদ্দেশ্যমূলকভাবে জারি করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান।

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে যৌথভাবে বিবৃতি দেয় এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (এএনএফআরইএল), ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন (সিআইভিআইসিইউএস), ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস (এফআইডিএইচ), এশিয়ান ডেমোক্রেসি নেটওয়ার্ক (এডিএন), ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট (অস্ট্রেলিয়া) ও অ্যান্টি-ডেথ পেনাল্টি এশিয়া নেটওয়ার্ক (এডিপিএএন)। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই নির্বাচন যথাযথ বা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক—কোনোটিই হয়নি। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসমূহ ও আন্তর্জাতিক নির্বাচনী মানদণ্ড মেনে এই নির্বাচন হয়েছে কি না, সে বিষয়েও গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.