মানুষের উপকারে সবসময় এগিয়ে যেতেন উমর ফারুক। মুমূর্ষু রোগীদের রক্ত দিয়ে জীবন বাঁচাতে বন্ধুদের নিয়ে গঠন করেছিলেন ব্লাড ডোনার সোসাইটি নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ওই সংগঠনের প্রধান হিসেবে তিনি শত শত সংকটাপন্ন মানুষকে রক্ত দিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন। উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকায় চলে গেলেও সংগঠনের কাজ রেখেছিলেন চলমান। রক্ত দিয়ে মানুষের প্রাণ বাঁচানো রাজধানীর কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী উমর ফারুকের প্রাণ গেছে গুলিতে । গত ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর লক্ষ্মীবাজার এলাকায় গুলিতে তিনি নিহত হন।
অনার্স তৃতীয় বর্ষের ইসলাম শিক্ষা বিভাগের ফারুকের পরিবার কোনোভাবে এ মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না। নিহত হওয়ার দু’দিন পর গত ২১ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাঁর মরদেহ নেওয়া হয় নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বাকলজোড়া ইউনিয়নের সিংহা গ্রামে। সেখানে ওইদিন রাত সাড়ে ১০টায় জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হয় গ্রামের কবরস্থানে। ছেলেকে কবরে চিরনিদ্রায় রেখে কান্না থামছে না মা-বাবার । বড় ভাইকে হারিয়ে শোকে পাথর ছোট ভাইও। উমরের এমন মৃত্যুতে হতবাক আত্মীয়স্বজনসহ পুরো এলাকার মানুষ।
মৃত্যুর খবর পেয়ে বিদেশ থেকে চলে আসেন ফারুকের বাবা আবদুল খালেক। তিনি বলেন, ‘আমার আদরের ধন রক্ত দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচাতো। এখন সে নিজেই বুকের রক্ত দিয়ে দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নিল। পরোপকারী ছেলেটার জীবন এভাবে নিভে যাবে বুঝিনি। আমার ছেলের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।’
উমর ফারুকের ছোট ভাই আবদুল্লাহ অনিক জানান, তাদের বাবার সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে গত ২৪ জুলাই দেশে ফেরার কথা ছিল। বাবাকে নিয়ে ভাই বাড়িতে আসবে বলেছিলেন। কিন্তু এরই মধ্যে গত ১৯ জুলাই বিকেলে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গিয়ে পুলিশে গুলিতে মৃত্যু হয় তাঁর। ফারুকের বন্ধুদের মাধ্যমে তারা মৃত্যুর খবর পান। তখন লাশ আনতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান স্বজনরা। হাসপাতালে গিয়ে লাশ খুঁজতে চাইলে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, থানা পুলিশের অনুমতি লাগবে। শাহবাগ থানায় গেলে পুলিশ জানায়, ফারুক নামের কেউ ওখানে নেই। সূত্রাপুর থানায় গেলে সেখানেও ওই নামে কারও লাশ নেই বলে জানায় পুলিশ। পরে কোনো সুরাহা না পেয়ে নেত্রকোনা-১ আসনের এমপি মোশতাক আহমেদ রুহীর সহায়তায় হাসপাতালে খোঁজার অনুমতি মেলে উমরের স্বজনদের। সেখানে গিয়ে একটা সাধারণ ঘরে অর্ধশতর বেশি লাশের মধ্য থেকে ভাইয়ের লাশ খুঁজে পান আবদুল্লাহ। ময়নাতদন্তসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে মৃত্যুর দু’দিন পর লাশ গ্রামে আনা হয় ।
উমর ফারুককে স্মৃতিতে ধরে রাখতে তাঁর পরিশ্রমে গড়া স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ব্লাড ডোনার সোসাইটি’র কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সক্রিয় সহপাঠী ও সংগঠনের সদস্যরা। ইতোমধ্যে নাম পরিবর্তন করে শহীদ উমর ফারুক ব্লাড ডোনার সোসাইটি নামকরণ করা হয়েছে। তারা বলছেন, রক্তদান কর্মসূচির মাধ্যমেই বেঁচে থাকবেন সবার প্রিয় উমর ফারুক।
খলিলুর রহমান শেখ, নেত্রকোনা