রওশন-জি এম কাদের বসলেন পাশাপাশি, বললেন মান-অভিমান ভোলার কথা

0
176
জাতীয় পার্টির ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে মঞ্চে পাশাপাশি বসেন দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের। কাকরাইল, ১ ডিসেম্বর

সমাবেশের প্রধান অতিথি ছিলেন রওশন এরশাদ। বক্তব্যের শুরুতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। কথা বলতে গলা কাঁপছিল। রওশন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই দিনে এখানে আসতে পেরে আমি আপ্লুত হয়ে গিয়েছি। আপনারা সবাই ভালো থাকেন, সেই দোয়া করেছি।’

দলে ঐক্যের ডাক দিয়ে রওশন এরশাদ বলেন, ‘জাতীয় পার্টি একটি পরিবার। দীর্ঘদিন বিদেশে চিকিৎসা শেষে ঢাকায় আসার পর দলের অনেকের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। দলের সব বিষয়ে আমি অবগত আছি। নিজেদের মান-অভিমান ভুলে দলকে শক্তিশালী করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টি আরও বেশি শক্তিশালী হবে।’

এখন থেকেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে রওশন এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টি কখনো নির্বাচন বর্জন করেনি। সব সময় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। আগামী নির্বাচনের জন্য এখন থেকে জোর প্রস্তুতি নিতে হবে। তৃণমূল থেকে দলকে সংগঠিত করতে হবে। নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে যোগ্য, জনপ্রিয় ও ত্যাগী নেতাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। দলীয় কর্মীদের মতামতকে মূল্যায়ন করতে হবে।

জাতীয় পার্টির ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের একাংশ। কাকরাইল, ১ ডিসেম্বর

জাতীয় পার্টির ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের একাংশ। কাকরাইল, ১ ডিসেম্বর

সমাবেশে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা ‘জি এম কাদের, জি এম কাদের’ স্লোগান তোলেন। জি এম কাদেরকে বক্তব্য দেওয়ারও অনুরোধ জানান নেতা-কর্মীরা। তবে তিনি বক্তব্য দেননি। সমাবেশের সভাপতি দলের মহাসচিব মুজিবুল হক (চুন্নু) বলেন, ‘দুঃখের সঙ্গে বলছি, চেয়ারম্যান উপস্থিত, কিন্তু কথা বলবেন না। যার মামলার কারণে চেয়ারম্যান বক্তব্য দিতে পারলেন না, সেই মামলাবাজের জায়গা জাতীয় পার্টিতে হবে না।’

বছরের প্রথম দিনেই দল ঐক্যের স্বাদ পেয়েছে বলে মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি আবার প্রাণ ফিরে পাচ্ছে, কারণ দল ঐক্যবদ্ধ। জি এম কাদের-রওশন এরশাদ ঐক্যবদ্ধ। দেশে পরিবর্তন আনতে চাইলে নির্বাচনে যেতে হবে। আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে জাতীয় পার্টি।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘মিলমালিকেরা প্রতি কেজি চালে ৮ থেকে ১৪ টাকা লাভ করছেন। এঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে।  মানুষ আর পারছে না। বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, পুলিশ—এসব প্রতিষ্ঠানকে ঠিক করেন। এগুলো ঠিক না হলে যে জাতি আমরা গড়তে চাই, তা গড়া সম্ভব হবে না।’

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘কেউ কেউ বলে, জাতীয় পার্টিতে ঐক্য নেই। কোথায় ঐক্য নাই? এই দেখেন ঐক্য। এই যে রওশন এরশাদ, এই যে জি এম কাদের। ঐক্যবদ্ধভাবেই রংপুরে মোস্তাফিজারকে জিতিয়ে আনা হয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনেও ৩০০ আসনে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে জাতীয় পার্টি।’

তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি এক ও অভিন্ন। দলে ভাঙা-গড়ার রাজনীতি চলবে না। দলের ভেতরেও কেউ যদি ষড়যন্ত্রকারী থাকেন, সতর্ক হন। ছাড় দেওয়া হবে না।’

রওশন এরশাদ ও জি এম কাদের পাশাপাশি বসায় উজ্জীবিত জাতীয় পার্টির নেতারা আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার আশাবাদ জানিয়েছেন। কাকরাইল, ১ ডিসেম্বর

রওশন এরশাদ ও জি এম কাদের পাশাপাশি বসায় উজ্জীবিত জাতীয় পার্টির নেতারা আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার আশাবাদ জানিয়েছেন। কাকরাইল, ১ ডিসেম্বর

অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে জাতীয় পার্টি আজকের অবস্থানে এসেছে উল্লেখ করে দলের কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন বলেন, জাতীয় পার্টিকে ভাঙতে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। আরও ষড়যন্ত্র হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। রওশন এরশাদ-জি এম কাদেরের নেতৃত্বেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

দলের মহাসচিব মুজিবুল হক বলেন, গত ৩২ বছরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুর্নীতি, দুঃশাসন, লুটপাট ছাড়া মানুষকে শান্তি দিতে পারেনি। জনগণ কী চায়, তা তারা জানতে চায়নি। এত বছরেও দেশে একটা নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি। বিএনপি-আওয়ামী লীগ দুই দলের ওপরই জনগণ বিরক্ত।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.