রওশনের সঙ্গে এবার প্রকাশ্যে এলেন কাজী ফিরোজ, বাবলা

0
125
সংবাদ সম্মেলনে রওশন এরশাদ। তাঁর বাঁয়ে কাজী ফিরোজ রশীদ ও ডানে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। ঢাকা, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ছবি: সংগৃহীত

নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব থেকে আবারও ভাঙনের মুখে জাতীয় পার্টি। রওশন এরশাদ তাঁর সমর্থক নেতা-কর্মীদের নিয়ে জাতীয় কাউন্সিল করার জন্য কমিটি ঘোষণা করেছেন। এই কমিটি ঘোষণাকে ঘিরে প্রথমবারের মতো রওশন এরশাদের সঙ্গে প্রকাশ্যে এলেন কাজী ফিরোজ রশীদ ও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা।

রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে আজ রোববার দুপুরে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আগামী ৯ মার্চ জাতীয় সম্মেলন বাস্তবায়নের জন্য কমিটি ঘোষণা করেন রওশন এরশাদ। সংবাদ সম্মেলনে রওশনের পাশে ছিলেন কাজী ফিরোজ ও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা।

সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে কাজী ফিরোজ রশীদকে। সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাকে সহ-আহ্বায়ক এবং সফিকুল ইসলামকে সদস্যসচিব করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে রওশন এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টি এখন চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে এবং দলকে আবার সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে নেতা-কর্মীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি জাপার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করে ৯ মার্চ জাতীয় সম্মেলন আয়োজনের ঘোষণা দিচ্ছেন।

রওশন এরশাদ বলেন, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাসহ দলের প্রতিষ্ঠাকালীন নেতারা, এরশাদভক্ত সর্বস্তরের অগণিত নেতা-কর্মী তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরা সবাই মিলে সুন্দর একটি জাতীয় সম্মেলন উপহার দিয়ে জাতীয় পার্টিতে আবার প্রাণশক্তি ফিরিয়ে আনতে চান। কারণ, দেশ ও জাতির জন্য রাজনীতির অঙ্গনে জাতীয় পার্টির প্রয়োজনীয়তা এখন অপরিহার্য।

জাতীয় সম্মেলন বাস্তবায়নের জন্য পাঁচ নেতার সমন্বয়ে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন রওশন। দশম জাতীয় সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটিতে কাজী ফিরোজ রশীদকে আহ্বায়ক , সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাকে সহ-আহ্বায়ক , গোলাম সরোয়ার মিলনকে যুগ্ম আহ্বায়ক, সফিকুল ইসলাম সেন্টুকে সদস্যসচিব এবং জিয়াউল হক মৃধাকে কোষাধ্যক্ষ করা হয়েছে।

রওশন এরশাদের দলের জাতীয় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার বিষয়ে বনানীতে দলের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো কাউন্সিল ডাকি নাই। বাইরে কে কাউন্সিল ডাকল, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নাই। অন্যরা ১০টা কাউন্সিল করতে পারে, কমিটি হতে পারে তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না।’

জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের ছোট ভাই। এরশাদপত্নী রওশন এরশাদের সঙ্গে জি এম কাদেরের রাজনৈতিক টানাপোড়েন সব সময়ই ছিল। তবে গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে রওশন এরশাদের সঙ্গে জি এম কাদেরের দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়। রওশন এরশাদ ও তাঁর ছেলে রাহগির আল মাহি এরশাদ (সাদ এরশাদ) নির্বাচনে অংশই নেননি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে ২৬টি আসন পেয়েছিল জাপা। এ ছাড়া সারা দেশেই তাদের দলের প্রার্থী ছিল। জাপা মোট ২৬৫টি আসনে প্রার্থী দেয়। কিন্তু সমঝোতার আসনের মধ্য থেকেই মাত্র ১১টি আসনে জাপা প্রার্থীরা জয়ী হন।

পরাজিত প্রার্থীদের একটা অংশ ভোটে দলের ভরাডুবির পর শীর্ষ নেতাদের পদত্যাগ দাবি করে জাপা কার্যালয়ে বিক্ষোভ করেছিলেন। পরে তাঁরা সারা দেশের পরাজিত প্রার্থীদের নিয়ে একটি সভা করে জাপার নেতৃত্বের সমালোচনা করেছিলেন। এমন কর্মকাণ্ডের জন্য কয়েকজন নেতাকে জাপা থেকে অব্যাহতিও দেওয়া হয়। জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপা থেকে বাদ পড়া নেতাদের একজোট হওয়ার চেষ্টার খবর পাওয়া যাচ্ছিল কদিন ধরে। ২৮ জানুয়ারি দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ নিজেকে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশীদকে দলের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব দেন। আর জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির ঘোষণা দেন রওশন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.