রংপুরে এসআইয়ের ফেসবুক পোস্ট, বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল

0
34
এসআই মজনুর ফেসবুক আইডি নাম ‘মিসির আলী’

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের এক উপপরিদর্শকের (এসআই) ফেসবুক পোস্ট নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দেন নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মজনু।

স্ট্যাটাসে দাবি করা হয়েছে– গত ১৯ জুলাই রংপুর রেঞ্জ উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি), বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপার (এসপি) নিজেই রাইডকার দিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ছোড়ে। কিন্তু এখন পর্যন্ত হওয়া পাঁচটি মামলায় তাদের নাম না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই পুলিশ সদস্য।

এসআই মজনুর ফেসবুক আইডি নাম ‘মিসির আলী’। সেই আইডি থেকে তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে লেখেন– প্রিয় সাংবাদিক/ আইনজীবী ভাই। প্রতিদিন কোর্টে মামলা হচ্ছে। সিটি বাজারের সামনে, যেখানে গুলি করেছে রেঞ্জ ডিআইজি, জেলার পুলিশ সুপার, বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি রংপুরের নেতৃত্বে জেলা পুলিশের রায়ট টিম। আর মামলা হচ্ছে, যারা ঘটনাস্থলে ছিল না।

স্ট্যাটাসে উল্লেখ করা হয়– এতো ফুটেজ, এতো মিডিয়া কাভারেজ থাকতে এটা করা হচ্ছে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে। আপনাদের কাছে অনুরোধ, বৈষম্যবিরোধী মনোভাবাপন্ন অধস্তনদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার এই বিষয়টি মানবিকভাবে প্রকাশ ও প্রচার করার।

স্ট্যাটাসে আরও লেখা হয়– ঈশ্বর ক্ষমতাশালী। এসপি-ডিআইজি-জেলা প্রশাসক-বিভাগীয় কমিশনার এরাও প্রভাবশালী ও প্রতাপশালী হওয়ার কারনে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে গুলি করেও মামলা থেকে অব্যাহতি পায়। আর আমরা ঘটনার দিনে ডিউটিতে না থেকেও মামলার হয়রানির শিকার হচ্ছি।

এই ফেসবুক পোস্ট রংপুর জেলা ও মহানগর পুলিশের মিডিয়াসেলেও শেয়ার করেন এসআই মজনু। এরপর থেকে পোস্টটি নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় চলছে রংপুরে।

ফেসবুক পোস্ট সম্পর্কে জানতে এসআই মজনুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি আমার বক্তব্য নিজের ফেসবুক আইডিতে দিয়েছি। শত শত ফুটেজ আছে আমার কাছে। গত ১৯ জুলাইয়ে সিটি বাজার এলাকায় ছিল জেলা পুলিশের পোশাকধারীরা। অথচ তাদের নামে মামলা হচ্ছে না। সেখানে মেট্রোপলিটন পুলিশের কেউ ছিল না।

এ ব্যাপারে জানতে রংপুরের পুলিশ সুপার মোঃ শাহজাহানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ ধরনের কোনো ফেসবুক পোস্ট তার চোখে পড়েনি। গণঅভ্যুত্থানের কারণে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আব্দুল বাতেনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর কারণে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, গত ১৯ জুলাই রংপুর সিটি বাজারের সামনে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয় পলিটেকনিক শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল তাহির। এরপর তাহির হত্যা মামলায় আসামি করা হয় এসআই মজনুকে।

রংপুর আদালত থেকে পাওয়া ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ঘটনায় এখন পর্যন্ত দায়ের করা পাঁচটি হত্যা মামলার নথিপত্র যাচাই করে দেখা গেছে– পুলিশের আইজিপি, রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, মেট্রোপলিটন ডিসি, এসি, ওসি, এসআই, কনস্টেবলসহ প্রায় ১৭ কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে। এই পাঁচটি মামলার কোনোটিতেই নেই রংপুর জেলা পুলিশ, জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় প্রশাসনের কেউ নেই।

সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.