যেকোনো সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই: প্রধানমন্ত্রী

0
178
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ২৯ মে, ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ শান্তিতে বিশ্বাস করে এবং শান্তির জন্য যা যা করা দরকার, তা-ই করবে। তিনি বলেন, ‘আমরা যেকোনো সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই।’

প্রধানমন্ত্রী আজ সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি, সংঘাতে নয়। বাংলাদেশ সর্বদা শান্তিতে বিশ্বাস করে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যা যা করা দরকার, সবই করবে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা অস্ত্র প্রতিযোগিতা চাই না। কারণ, নারী, শিশু ও প্রতিটি পরিবার এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়ে। তাই তাদের এই দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করাই আমাদের লক্ষ্য।’

সরকারপ্রধান বলেন, বিশ্বে শান্তি নিশ্চিত করা অতীতের চেয়ে এখন বেশি কঠিন। কারণ, অশুভ শক্তি প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের জীবনের শান্তি কেড়ে নিচ্ছে। তিনি বলেন, প্রযুক্তির সাম্প্রতিক বিকাশ ও অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে অশুভ শক্তির নতুন হুমকি বাড়ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ফটোসেশনে অংশ নেন। ঢাকা, ২৯ মে, ছবি: পিআইডি

শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রযুক্তি মানুষকে আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ সব ক্ষেত্রে সুযোগ দিচ্ছে। কিন্তু এর পাশাপাশি আমরা এটাও দেখছি যে অপশক্তিগুলোও প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে এবং মানুষের জীবনের শান্তি কেড়ে নিচ্ছে। কাজেই জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষীদের জটিল বহুমাত্রিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।’ তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন, আর এ জন্য উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে শান্তি রক্ষা মিশনকে সমৃদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার বিশ্বের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ও বিপজ্জনক অঞ্চলে জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বদা বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের সর্বাধুনিক প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করেছে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ও জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস।

অনুষ্ঠানের শুরুতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আত্মদানকারী বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশ ইন গ্লোবাল পিস’ শীর্ষক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
নিহত পাঁচজন শান্তিরক্ষীর পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন। তিনি পাঁচজন আহত শান্তিরক্ষীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

পরে প্রধানমন্ত্রী ইন্টারন্যাশনাল পিসকিপার জার্নাল উন্মোচন করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ২৯ মে, ছবি: পিআইডি

ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘জাতিসংঘ মহাসচিব আরও নারী শান্তিরক্ষী পাঠানোর অনুরোধ করায় আমরা নারী শান্তিরক্ষীদের সংখ্যা বাড়ানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছি।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের ৪০টি দেশে জাতিসংঘের ৬৩টি মিশন সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।

বর্তমানে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা জাতিসংঘের ১৪টি মিশন ও কার্যক্রমে নিয়োজিত আছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২০টি, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ২টি, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ৪টি ও বাংলাদেশ পুলিশের ৩টি দল এসব মিশনে কাজ করছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ফোর্স কমান্ডার, ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার ও সেক্টর কমান্ডার হিসেবে বিভিন্ন মিশনে নিয়োজিত রয়েছেন।

জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করে তাঁরা বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, ‘শান্তি রক্ষা মিশন ছাড়া অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামেও আমরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করি ও অবদান রাখি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ৩৫ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কাজ করে যাচ্ছে। সর্বোচ্চ সেনা ও পুলিশ সদস্য এই বাহিনীতে দেশের জন্য অবদান রেখে যাচ্ছেন এবং এর পাশাপাশি জাতিসংঘের বিভিন্ন শান্তি রক্ষা অভিযানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছেন।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আজ শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ একটি নির্ভরযোগ্য নাম।’

অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ সুদান, মালি, লেবানন, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, ডিআর কঙ্গোসহ বিভিন্ন দেশে মোতায়েন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি কথা বলেন।

বর্তমানে বাংলাদেশের ৭ হাজার ৪৩৬ জন শান্তিরক্ষী জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশন ও কার্যক্রমে নিয়োজিত আছেন আর এই সংখ্যা বিশ্বব্যাপী মোতায়েন শান্তিরক্ষীদের মোট সংখ্যার প্রায় ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। এর মধ্যে ৫৭২ জন বাংলাদেশি নারী শান্তিরক্ষীও রয়েছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.