যুক্তরাষ্ট্র পেরিয়ে বিশ্বের কোথায় কোথায় ছড়াল

0
88
বিক্ষোভ শুরু করেন নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনবিরোধী যে আন্দোলন চলছে, তা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। যুক্তরাষ্ট্রের পর ইসরায়েলবিরোধী ক্যাম্প যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, লেবানন, মেক্সিকো, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ছে।

এসব বিক্ষোভ থেকে অবিলম্বে গাজায় ইসরায়েলের হামলা বন্ধের দাবি জানানো হচ্ছে। পাশাপাশি ইসরায়েল ও গাজা যুদ্ধকে সমর্থন করে, এমন সব কোম্পানির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি তোলা হচ্ছে। খবর সিএনএন, বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরার

বিক্ষোভকারীদের হটাতে যে দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে, সেটাও তাদের প্রতিবাদে শামিল হতে উৎসাহিত করছে বলে বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন। দেশে দেশে এমন বিক্ষোভকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের তথ্যমতে, গত ১৮ এপ্রিলের পর থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে অন্তত অর্ধশত গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হয়। এসব অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২ হাজার ২০০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে।

গত ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় সাড়ে ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ইসরায়েলের এই হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে গত ১৮ এপ্রিল বিক্ষোভ শুরু করেন নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের এ বিক্ষোভ দমনে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে মার্কিন সরকার। এর মধ্যে ইউরোপ, এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা।

যুক্তরাজ্য

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, যুক্তরাজ্যের নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি ভবনের চত্বরে তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান নিয়েছেন যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভকারীরা। একই অবস্থা লিডস, ব্রিস্টল ও ওয়ারউইকের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও।

লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ইলা ওয়ার্ড এনবিসি নিউজকে বলেন, ‘কলাম্বিয়াসহ যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন, তা দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হয়েছি।’

লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী বুধবার তাঁবু টাঙিয়ে অবস্থান নেন বলে জানান ‘ইয়ু ডিমান্ড’ নামের শিক্ষার্থীদের একটি গ্রুপের সদস্য ইলা। তারা ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবি তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ফিলিস্তিন আমাদের অনেককে জাগিয়ে তুলেছে।’

ফ্রান্স

ফ্রান্সের সবচেয়ে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম প্যারিসের সায়েন্সেস পো বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে শিক্ষার্থীরা গাজায় গণহত্যা বন্ধ এবং ইসরায়েলি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বর্জনের আহ্বান সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এটা ছাড়াও প্যারিসের সরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে এপ্রিলের শেষ দিকে গাজা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়।

২৯ এপ্রিল সরবন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। এ সময় দুই বিক্ষোভকারীকে তাঁবু থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করতে দেখা যায়। এরপর গতকাল সায়েন্সেস পো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয় দাঙ্গা পুলিশ। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ‘শেম’ ও ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগান দিতে দেখা যায়।

লুইস নামের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, কলাম্বিয়া, হার্ভার্ড, ইয়েলসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁরা এ বিক্ষোভ করছেন।

অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়ার অন্তত সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁবু টাঙিয়ে অবস্থান নিয়েছেন যুদ্ধবিরোধী ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীরা। এ নিয়ে ক্যাম্পাসগুলোতে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। ব্রিসবেনে কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় (ইউকিউ) বিক্ষোভের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এই ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থীদের ১০০ মিটার দূরত্বে ইসরায়েল-সমর্থক বিক্ষোভকারীরাও অবস্থান নিয়েছেন।

সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রায় ৫০টি তাঁবু টাঙিয়ে অবস্থান নিয়েছেন যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভকারীরা। সেখানে ১০০ জনের মতো বিক্ষোভকারী রাতেও অবস্থান করছেন। গতকাল শুক্রবার সেখানে পাল্টা বিক্ষোভের আয়োজন করে ইহুদি গোষ্ঠীগুলো। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের বিরোধিতা করে ইহুদি গোষ্ঠীগুলো, এতে ক্যাম্পাসে অহেতুক উত্তেজনার সৃষ্টি হচ্ছে। যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভকে ‘বর্ণবাদী’ ও ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে মন্তব্য করেছেন অস্ট্রেলিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা পিটার ডুটন।

কানাডা

যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভের আঁচ পড়েছে প্রতিবেশী কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও। মন্ট্রিলের উপকণ্ঠে ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তাঁবু টাঙিয়ে বিক্ষোভ করছেন ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকেও বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভ্যাঙ্কুভারের ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাঁবু খাটিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা।

লেবানন

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, এপ্রিলের শেষের দিকে লেবাননে শত শত শিক্ষার্থী ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ করে। ইসরায়েলে ব্যবসা করে এমন কোম্পানি বয়কট করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি দাবি জানান তারা।

রাজধানী বৈরুতের আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফটকের বাইরে গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। গত ৩০ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের বাইরে শিক্ষার্থী-জনতা সংহতি সমাবেশ করে। মার্কিন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভের অনুপ্রাণিত হন বলে বিক্ষোভকারীরা জানান।

১৯ বছর বয়সী আলী আল-মুসলেম রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা পুরো বিশ্বকে দেখাতে চাই যে আমরা ফিলিস্তিনিদের যন্ত্রণা ভুলে যাইনি এবং সচেতন ও সংস্কৃতিবান তরুণ প্রজন্ম এখনও ফিলিস্তিনিদের দাবির সঙ্গে রয়েছে।’

মেক্সিকো

স্থানীয় গণমাধ্যম এল পাইসকে উদ্ধৃত করে টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, মেক্সিকোর বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিদাদ ন্যাসিওনাল অটোনোমা ডি মেক্সিকোতে তাঁবু খাটিয়ে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। তারা ‘গাজায় সাম্রাজ্যবাদী গণহত্যা’ বন্ধ করার দাবি জানান। গত বৃহস্পতিবার থেকে কমপক্ষে ৪০টি তাঁবু খাটানো হয়েছে। এসব বিক্ষোভে আরবের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ইহুদি শিক্ষার্থীরাও অংশ নিচ্ছে।

ইসরায়েলের সঙ্গে সমস্ত কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও মেক্সিকোর সরকারের প্রতি দাবি জানান তারা। কলম্বিয়াসহ অন্যান্য লাতিন আমেরিকান দেশ এরই মধে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।

ভারত

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছেন ভারতের খ্যাতনামা নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটির বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিদর্শন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।

জেএনইউ ছাত্র সংসদ এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলের সন্ত্রাস ও গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত প্রশাসন ও দেশের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.