যুক্তরাজ্যে মার্কিন ঘাঁটিগুলোর আশপাশে রহস্যময় ড্রোন কেন দেখা যাচ্ছে

0
17
ড্রোনের প্রতীকী ছবি, ফাইল ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাজ্যের নরফোক ও সাফোক কাউন্টিতে মার্কিন বিমানঘাঁটিকে ঘিরে বিশেষ করে রাতের আকাশে সম্প্রতি একাধিকবার রহস্যময় বস্তু বা ড্রোন উড়তে দেখা যাওয়ার ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এসব ওড়ানোর পেছনে থাকা ব্যক্তিদের এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি।

ইতিমধ্যে এসব বস্তু বা ড্রোন কীভাবে উড়ছে এবং কেনই–বা এমন ঘটনা ঘটতে দেওয়া হচ্ছে, সেসব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিমানঘাঁটির কাছাকাছি স্থানে থাকা বাসিন্দারা।

মূলত তিনটি বিমানঘাঁটির কাছে এসব ড্রোনের অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এগুলো হলো সাফোক কাউন্টির আরএএফ লাকেনহিথ ও আরএএফ মিলডেনহল এবং পার্শ্ববর্তী নরফোক কাউন্টির আরএএফ ফেল্টওয়েল। গত ২০ ও ২২ নভেম্বরের মধ্যে এসব ঘাঁটির ওপর ও আশপাশের এলাকায় ড্রোনগুলো দেখা যায়।

আরএএফ মিলডেনহলের কাছে বেক রো এলাকার বাসিন্দারা বলেন, তাঁরা তাঁদের বাড়িঘর এবং এই বিমানঘাঁটির ওপর অতি উজ্জ্বল কিছু আকাশযান উড়তে দেখেছেন।

‘আকাশে কমলা রঙের একটা বড় আলো দেখলাম। হঠাৎ সেটি মিলিয়েও গেল। লোকজন তা দেখে আনন্দ প্রকাশ করছে, সেই শব্দ শুনলাম আমি।’

ক্রিস্টাল ম্যাসন, বেক রো এলাকার বাসিন্দা

‘উড়তে দেওয়া হচ্ছে কেন’

ক্যাসিম ক্যাম্পেল বেক রো এলাকার বাসিন্দা। ২৮ বছর বয়সী এ তরুণ বলেন, তিনি তাঁর বাড়ির ওপর উড়ন্ত বস্তুর উপস্থিতি দেখেছেন।

ক্যাম্পেল বলেন, এসব বস্তু ছিল ত্রিকোণাকৃতির। গত সপ্তাহে একদিন সন্ধ্যায় এমন দুটি বস্তু দেখেন তিনি। একটি ছিল গাঢ় ধূসর রঙের। তিনি আরও বলেন, বস্তুগুলো ওড়ার সময় বেশ আওয়াজ হচ্ছিল। এগুলো থেকে আলো বের হচ্ছিল। তাঁর প্রশ্ন, ‘উড়ন্ত বস্তুগুলো যদি হুমকি হয়ে থাকে, তবে কেন গুলি করে নামানো হলো না? ক্ষতিকর হলে কেন এগুলো উড়তে দেওয়া হলো?’

রহস্যময় ড্রোন ওড়ার ঘটনার একটি ছিল এ রকম—২২ নভেম্বর রয়েল নেভির ফ্ল্যাগশিপ এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ‘এইচএমএস কুইন এলিজাবেথ’ হামবুর্গ বিমানঘাঁটিতে প্রবেশ করছিল। ঠিক তখন এটির ২৫০ মিটারের মধ্যে একটি ড্রোন চলে আসে।

সম্প্রতি গ্লুচেস্টারশায়ারের আরএএফ ফেয়ারফোর্ডে মার্কিন বোমারু বিমান বি-৫২ মোতায়েন করা হয়েছে। সেখানেও সম্প্রতি ড্রোন ওড়ার খবর পাওয়া গেছে।
ড্রোন অনুপ্রবেশের এসব ঘটনার নেপথ্যে থাকা মহলকে খুঁজে বের করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টায় সহায়তা দিচ্ছেন ব্রিটিশ সেনারা।

বেক রো এলাকার বাসিন্দা ক্যাসিম ক্যাম্পেল বলেন, এসব বস্তু ছিল ত্রিকোণাকৃতির। গত সপ্তাহে একদিন সন্ধ্যায় এমন দুটি বস্তু দেখেন তিনি। একটি ছিল গাঢ় ধূসর রঙের। বস্তুগুলো ওড়ার সময় বেশ আওয়াজ হচ্ছিল। এগুলো থেকে আলো বের হচ্ছিল।

‘অতিরিক্ত পুলিশের উপস্থিতি’

সপ্তাহখানেক আগে বেক রো এলাকায় ক্রিস্টাল ম্যাসন (২৮) নামের এক তরুণীও দুটি ড্রোন উড়তে দেখেছেন। আরএএফের একজন পাইলটের এ স্বজন বলেন, তিনি একদিন রাতে কমলা রঙের গোলাকৃতির একটি বস্তুকে আকাশে দেখতে পান। এটি মার্কিন বিমানঘাঁটির ওপর উড়ছিল।

ক্রিস্টাল ম্যাসন বলেন, ‘গত ১০ দিনে গ্রামের (বেক রো এলাকা) চারপাশে আমি সামরিক বাহিনীর গাড়িগুলো ঘোরাফেরা করতে দেখেছি। ব্রিটিশ সেনা ও পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ছিল বেশি।’

ম্যাসনের ধারণা, কমলা রঙের গোলাকৃতির বস্তুটি ছিল অনুপ্রবেশকারী ড্রোন। তবে তাঁর এ বক্তব্য যাচাই করতে পারেনি বিবিসি।

এক সন্তানের এই মা বলেন, ‘আকাশে কমলা রঙের একটা বড় আলো দেখলাম। হঠাৎ সেটি মিলিয়েও গেল। লোকজন তা দেখে আনন্দ প্রকাশ করছে, সেই শব্দ শুনলাম আমি।’

‘আমি তিন-চারবার ড্রোন দেখেছি’

মার্কিন ঘাঁটিগুলোর আশপাশে ড্রোনের আনাগোনা চলার কথা জানান জনি হুইটফিল্ড নামের বেক রোর এলাকার আরেক বাসিন্দাও।

হুইটফিল্ড বলেন, ‘আমি তিন বা চারবার ড্রোন উড়তে দেখেছি।’ গত সপ্তাহে রাতের বেলা তিনি এসব উড়তে দেখেন বলে জানান।

হুইটফিল্ড আলোকজ্জ্বল উড়ন্ত বস্তুগুলো বিমানঘাঁটির ওপরের আকাশে ঘোরাফেরা করতে দেখেন। অবশ্য এ সময় তিনি কোনো শব্দ শোনেননি। বস্তুগুলো ছিল আকারে বেশ বড়। তাঁর কথায়, ‘আপনারা সবাই আলো (আলোকজ্জ্বল বস্তু) দেখেছেন। কিন্তু এগুলো ছিল বড়, বেশ বড়।’

এসব ঘটনা নিয়ে মার্কিন সামরিক বাহিনী রাখঢাক করছে বলে মনে করেন হুইটফিল্ড। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এসব বস্তু বিদেশ থেকে আসা, নাকি স্থানীয়, তা জানা যায়নি। (মার্কিন বিমানবাহিনী) এ নিয়ে তেমন তথ্য দিচ্ছে না। ঘাঁটির চেয়ে ফেসবুক থেকেই এ বিষয়ে বেশি তথ্য আপনারা জানতে পারবেন।’

‘জোরাল পদক্ষেপ’

প্রতিরক্ষা সূত্রগুলো বিবিসিকে বলেছে, এমন অনুপ্রেবেশের ঘটনার পেছনে ‘রাষ্ট্রীয় অভিনেতাদের’ হাত আছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

অবশ্য এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্য—কোনো দেশই এসব ঘটনায় কারা দায়ী থাকতে পারে, সে বিষয়ে কিছু বলেনি।

গত বৃহস্পতিবার হাউস অব লর্ডসে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লর্ড কোকার বলেন, এসব খবরের বিষয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অবগত আছে। এ নিয়ে সফররত মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে এ মন্ত্রণালয়, পুলিশ বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তর ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।

লর্ড কোকার বলেন, ‘যেকোনো নিরাপত্তা ইস্যুকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তায় জোরাল পদক্ষেপ নিই। এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে ড্রোনবিধ্বংসী সক্ষমতাও।’

লর্ড কোকার পার্লামেন্টে আরও বলেন, ‘এসব সামরিক ঘাঁটির ওপর বা আশপাশে ড্রোনের চলাচল অবৈধ। জনগণকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। ওই সব ঘটনায় তদন্ত চলছে।’

এর আগেও মার্কিন ঘাঁটিগুলোর তত্ত্বাবধানকারী ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছিল, তারা হুমকিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয় এবং প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলোতে জোরাল নিরাপত্তা পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

এদিকে ইউরোপে নিযুক্ত মার্কিন বিমানবাহিনীর তরফে বলা হয়েছে, অনুপ্রবেশের এসব ঘটনার কোনোটিতে এ পর্যন্ত ঘাঁটির সদস্য, স্থাপনা বা সম্পদের ওপর প্রভাব পড়েনি। বিমানবাহিনী উল্লেখিত ঘাঁটি ও এগুলোর সদস্যদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিচ্ছে।

বিবিসি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.