মোদির সঙ্গে গণতন্ত্র, মানবাধিকার প্রসঙ্গ তুলতে বাইডেনের ওপর চাপ বাড়ছে

0
166
হোয়াইট হাউসে গতকাল বুধবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে স্বাগত জানান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন

ভারতের স্খলিত গণতন্ত্র, মানবাধিকার কিংবা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার প্রসঙ্গ যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে ও কতটা তুলবে, নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের আগে সেটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে অন্যতম প্রধান জল্পনার বিষয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এসব প্রসঙ্গের উত্থাপন যে হতে চলেছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে। কিন্তু তা কতটা প্রকাশ্যে, কতটা গোপনে এবং কীভাবে, হোয়াইট হাউস সে বিষয়টি কিছুটা ঊহ্য রেখেছে।

প্রধানমন্ত্রীর সফরের ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান ভারত ঘুরে গেছেন। গতকাল বুধবার হোয়াইট হাউসে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যখন দেখে কোথাও গণতান্ত্রিক অধিকার, সংবাদপত্র ও ধর্মীয় স্বাধীনতা, মানবাধিকার খর্ব হচ্ছে, তখন আমরা নিজেদের অভিমত প্রকাশ করি। তবে সেটা আমরা করি এমনভাবে, যা ভাষণ বলে মনে হবে না। আবার এমনও, যাতে মনে না হয়, আমাদের দেশে এসব চ্যালেঞ্জ নেই।’

সুলিভান এ কথাও মনে করিয়ে দেন, ভারতের গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও রাজনীতির গতিপ্রকৃতি ঠিক করবেন ভারতীয়রাই। যুক্তরাষ্ট্র তা নির্ধারণ করবে না। তিনি বলেন, নরেন্দ্র মোদি পাঁচবার যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন। কিন্তু পূর্ণ কূটনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদার সফর এটাই প্রথম। যদিও সে দেশের মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন।

এই সফরে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বা সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের প্রসঙ্গ জোরালোভাবে তোলার জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ওপর চাপ বাড়ছে। গতকাল মার্কিন কংগ্রেসের ৭৫ ডেমোক্রেটিক সদস্য চিঠি লিখে বাইডেনকে এসব বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন।

এর আগে একই কথা লেখা হয়েছে সে দেশের প্রভাবশালী ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার সম্পাদকীয়তে। সফর শুরুর চার দিন আগে সেই সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের অবশ্যই উচিত ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদির আমলে গণতান্ত্রিক ভারতের উদ্বেগজনক ক্রমাবনতিতে যুক্তরাষ্ট্র নীরব থাকতে পারে না।

সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, কিছু মতানৈক্য এড়ানোর নয়। যেমন রাশিয়ার নিন্দা না করে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের ডাক দিয়েছেন মোদি। মিয়ানমারের সামরিক শাসকদের কাছে ভারত অস্ত্র বিক্রি করে চলেছে। এটা বন্ধে মোদিকে বাইডেনের চাপ দেওয়া উচিত। এসব বিষয় সামলানো বাইডেন ও মোদির পক্ষে বিশেষ কঠিন নয়। কঠিন হবে মোদি জমানায় গণতন্ত্রের স্খলন, সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু জাতীয়তাবাদের পতাকার তলায় মুসলমান ও অন্য  সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, মুক্তমনা নাগরিক ও সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধের মতো বিষয়গুলোর অবতারণা।

সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে কৌশলী হতে হবে। বাইডেন অথবা অন্য যাঁরাই মোদির সঙ্গে বৈঠক করবেন, তাঁদের বলা উচিত, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া ভারতের ভাবমূর্তি বাড়াবে। অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের মোকাবিলাতেও সহায়ক হবে। গণতন্ত্র দুর্বল হওয়া হবে দুর্বল ভারতের পরিচায়ক।

সম্পাদকীয়তে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের নানা ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন ঘৃণা ভাষণ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, মুসলমানদের সম্পত্তি নষ্ট, সেই উদ্দেশ্যে তৈরি আইন ও বিধিনিষেধ, সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমকে নিরন্তর চাপে রাখা, হয়রানি করা ইত্যাদি।

বিবিসির তথ্যচিত্র ও তাদের বিরুদ্ধে আয়কর বিভাগের ব্যবস্থার উল্লেখ এবং বেসরকারি সংগঠন ও সমাজকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা লিখে বলা হয়েছে, এগুলোর কোনোটাই বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের উপযুক্ত নয়।

ওয়াশিংটন পোস্টের সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিভৃত আলাপচারিতায় নিশ্চয় এসব প্রসঙ্গের অবতারণা করবেন। কিন্তু একটি বড় গণতান্ত্রিক (ত্রুটিপূর্ণ) দেশের কর্ণধার হিসেবে কিছু কথা তাঁর প্রকাশ্যেও বলা প্রয়োজন। বন্ধুকে সত্য কথা শোনানোর বাধ্যবাধকতা বন্ধুরই থাকে।

মোদি জমানায় ভারতে সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ নিয়ে গতকাল ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় পাতাজুড়ে এক সাদা-কালো বিজ্ঞাপনও প্রকাশিত হয়েছে।

সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার বৈশ্বিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) উদ্যোগে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে সংবাদপত্রের ওপর আক্রমণ বন্ধে বৈশ্বিক নেতাদের উদ্দেশে আবেদন জানিয়ে বলা হয়েছে, গণমাধ্যমের মুক্ত থাকার ওপরই গণতন্ত্র নির্ভরশীল।

বাস্তবিকই, সবার নজর এখন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দিকে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.