মে মাস মানেই ঘূর্ণিঝড়। গত এক যুগে ঘূর্ণিঝড়গুলোর বেশির ভাগই আঘাত হেনেছে এই মাসে। আইলা-আম্পানের স্মৃতি এখনও টাটকা, তেমনই ফণী ও ইয়াসের ধাক্কাও কম আসেনি। এবারও মে মাসে ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্ক তাড়া করছে। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে।
প্রাথমিকভাবে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় বঙ্গোপসাগরের যে অংশ বাসা বাঁধবে, সেখান থেকে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানার শঙ্কা প্রবল।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থা ও বেসরকারি আবহাওয়া সংস্থার পূর্বাভাস অনুযায়ী, মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে পারে ঘূর্ণিঝড়। আর সাম্প্রতিক ইতিহাস বলছে, এই মে মাসে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় বাসা বাঁধলে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূলে আছড়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। তবে সরকারিভাবে কোনো পূর্বাভাস এখনও মেলেনি। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য এখনও দিতে পারেনি। তারা বলছে, আরও কিছুদিন না গেলে এ ব্যাপারে কোনো পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিষুব রেখার কাছে আন্দামান সাগরে তৈরি হতে পারে একটি ঘূর্ণাবর্ত। তা শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। বঙ্গোপসাগরে তার উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে। তা ক্রমে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও ওড়িশা উপকূলেও তা আছড়ে পড়তে পারে। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়টি তৈরি হলে তার নাম হবে ‘মোচা’। নামটি দিয়েছে ইয়েমেন।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, আমেরিকার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে ভারতের আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণ-পূর্বে আন্দামান সাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়ে তা ১০ মে থেকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা নির্দেশ করছে। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হবে কিনা তা ১ মে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
তিনি বলেন, এপ্রিল, মে ও জুন এবং অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাস ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুম। যেহেতু পুরো এপ্রিল মাসে উত্তর ও মধ্য বঙ্গোপসাগরে কোনো নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়নি, ফলে বঙ্গোপসাগরে ইতিমধ্যে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় অনেক শক্তি জমা হয়ে গেছে। ফলে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে ও অনুকূল পরিবেশ পেলে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার শঙ্কা বেশি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, কবে কোথায় ঘূর্ণিঝড় তৈরি হবে তা এত আগে বলা সম্ভব নয়। তবে আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছি।
মে মাসে বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হেনেছে একাধিক শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। আইলা ও আম্পানের মতো ঝড় তছনছ করে দেয় গোটা উপকূল। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, মে মাসের ঘূর্ণিঝড়গুলো মূলত দেশের খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট উপকূলে আঘাত হানে। আর নভেম্বরের ঝড়গুলো চট্টগ্রাম-নোয়াখালী উপকূলের দিকে বেশি যায়। ওই উপকূলের বড় অংশজুড়ে পাহাড় ও দ্বীপ আছে। আর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল উপকূল অপেক্ষাকৃত ঢালু বা নিচু। ফলে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের প্রভাবে সেখানে ক্ষতি হয় বেশি।