মেট্রোরেলে থাকবে স্টেশন প্লাজা, রাখা যাবে প্রাইভেট কার

0
142
মেট্রোরেল

উত্তরা ও কমলাপুরের মাঝপথে আগারগাঁও ও ফার্মগেটে দুটি স্টেশন প্লাজা নির্মাণ করা হবে। আগারগাঁওয়ে স্টেশন প্লাজা নির্মাণের জন্য বিমানবাহিনীর যে নার্সারি আছে, সেই জায়গা নেওয়া হয়েছে। আর ফার্মগেটে আনোয়ারা পার্কে স্টেশন প্লাজার নির্মাণকাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। বর্তমানে সেখানে মেট্রোরেল প্রকল্পের কিছু অফিস ও স্থাপনা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেলের স্টেশন হবে ১৭টি।

উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ চলছে। এর মধ্যে সরকার মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার মেট্রোরেল সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বছর ১৬ ডিসেম্বর থেকে মেট্রোরেল চালুর কথা জানালেও শুরুতে শুধু উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে মেট্রোরেল চলবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ২০২৪ সালের জুনে মেট্রোরেল প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করার প্রস্তাব দিয়েছে ডিএমটিসিএল।

প্রথম দিকে মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় ছিল প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। মেট্রোরেলের পথ সম্প্রসারণ, স্টেশন প্লাজা নির্মাণ, কিছু স্টেশনে নতুন করে জমি অধিগ্রহণ, পরামর্শকের পেছনে ব৵য় বৃদ্ধি, পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, বাড়তি ভ্যাটসহ বিভিন্ন উপকরণ যুক্ত হয়েছে। এর জন্য প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে ডিএমটিসিএল।

অনুমোদন পেলে প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়াবে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকা। সর্বশেষ যে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে জাইকা দেবে ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা। সরকার খরচ করবে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা। শুরুতে জাইকার দেওয়ার কথা ছিল ১৬ হাজার কোটি টাকা।

স্টেশনের পাশের স্থান সংকীর্ণ

মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনে ওঠা-নামার জন্য তিন ধরনের ব্যবস্থা আছে। এগুলো হচ্ছে লিফট, এস্কেলেটর ও সিঁড়ি। তবে মেট্রোরেলের স্টেশন নির্মাণের পর দেখা গেল, অনেক স্টেশনে সিঁড়ির জায়গা সংকীর্ণ, অর্থাৎ সিঁড়ি বসানো হলে মানুষের চলাচলের জায়গা থাকছে না। ফলে সিঁড়ির জন্য আলাদা জায়গা অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয় ডিএমটিসিএল।

ডিমএমটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত নয়টি স্টেশনের সব কটিই লিফট, এস্কেলেটর বসে গেছে। সিঁড়ির অবকাঠামোর কাজও শেষ। তবে কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়া স্টেশনে সিঁড়ির জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। ফলে বিদ্যমান ফুটপাতের ওপর সিঁড়ির অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। এই দুই স্টেশনে সিঁড়ির পর মানুষের চলাচলের জন্য অন্তত তিন মিটার চওড়া ফুটপাত নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ জন্য ব্যক্তিগত জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এ প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।

আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত আটটি স্টেশনের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। এ জন্য এসব স্টেশনে কোথায় সিঁড়ি নামানো হবে, এ বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। প্রকল্প কর্তৃপক্ষের সূত্র বলছে, ফার্মগেটে পর্যাপ্ত সরকারি জায়গা পাওয়া যাবে। কারওয়ান বাজারে স্টেশন লাগোয়া একটি বাইলেন আছে। অর্থাৎ মূল সড়কের পাশে বাস থামার একটা লেন আছে। এরপর ফুটপাত। আবার কারওয়ান বাজারে পণ্যবাহী ট্রাক যাতায়াত করে। এসব দিক বিবেচনা করে সিঁড়ি বসানোর চেষ্টা চলছে।

ডিএমটিসিএলের কয়েক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে, কারওয়ান বাজারে সরকারি জায়গা আছে। সেখানে সিঁড়ি নামানো হবে। বাস থামার লেনও রাখা হবে। শাহবাগে স্টেশনটি একেবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বারডেমের মাঝামাঝি। এ স্টেশনের সিঁড়িটি এমনভাবে স্থাপন করা হবে, যাতে বঙ্গবন্ধু হাসপাতালের ভেতর থেকে ও বাইরের ফুটপাতের যাত্রীরাও ব্যবহার করতে পারবেন। সব কটি স্টেশনে যেখানে সরকারি জায়গা আছে, তা ব্যবহার করা হবে। আর সরকারি জায়গা না পেলে ব্যক্তিগত জমি অধিগ্রহণ করা হবে।

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক বলেন, প্রকল্পের কারণে কোনো ফুটপাত ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিন মিটার চওড়া মানসম্মত ফুটপাত নির্মাণ করে দেওয়া হবে। আর ব্যক্তিগত জায়গা নিতে হলে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

প্রকল্পের অগ্রগতি

২০১২ সালে মেট্রোরেল প্রকল্প নেওয়া হলেও কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের দিকে। গত জুলাই পর্যন্ত উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণকাজের অগ্রগতি ৮১ দশমিক ৭০ শতাংশ। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৯৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এ পথে এখন মেট্রোরেল পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল করছে। এর মধ্যে জাপান থেকে ১৫ সেট ট্রেন ঢাকায় এসেছে। আরও ৯ সেট ট্রেন আসবে।

মেট্রোরেল পরিচালনার জন্য চালক, স্টেশন নিয়ন্ত্রকসহ বিভিন্ন পদে লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। চলছে দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ। মেট্রোরেলের চালকের মধ্যে একজন নারীও রয়েছেন। এ ছাড়া আরেকজন নারী আছেন স্টেশন নিয়ন্ত্রক পদে।

এম এ এন সিদ্দিক বলেন, ডিসেম্বরে আগারগাঁও পর্যন্ত ট্রেন চালুর লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি চলছে। ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, প্রকল্প নেওয়ার পর একবার সংশোধন করা হলেও ব্যয় বাড়েনি। এখন কাজ বেড়েছে, জমি অধিগ্রহণ ও সরকারের ভ্যাট-কর বেড়েছে। এর জন্য ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

আনোয়ার হোসেন

ঢাকা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.