
চাঁদপুরের মতলব উত্তরে মেঘনা নদীতে তিন দিন ধরে ঝাঁকে ঝাঁকে মরা মাছ ও জলজ প্রাণী ভেসে উঠছে। গত শুক্রবার সকাল থেকে আজ রোববার সকাল পর্যন্ত উপজেলায় এখলাশপুর থেকে ষাটনল পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদীর তীরে বিপুল পরিমাণ মাছ ও জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠেছে। মরা মাছ তীরে স্তূপ হয়ে পচে-গলে চারপাশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের কলকারখানার বর্জ্য শীতলক্ষ্যা-বুড়িগঙ্গা নদী হয়ে মেঘনার পানিতে মিশে যাওয়ায় পানির অক্সিজেন ও পিএইচের পরিমাণ কমে যাওয়ায় মাছ মরছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তা।
গত বছরের আগস্ট মাসেও ব্যাপকভাবে মেঘনায় মাছ ও জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠেছিল। নতুন করে মাছ মরে তীরে দুর্গন্ধ ছড়ানোয় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন নদীর তীরবর্তী পাঁচ ইউনিয়নের প্রায় ১৫ হাজার বাসিন্দা।
গতকাল শনিবার ও আজ রোববার সকালে উপজেলার দশানী, কলাকান্দা, মোহনপুর, এখলাশপুর, ষাটনল ও বাবুরবাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মেঘনা নদীর সবুজ পানি কালচে ও ঘোলাটে রং ধারণ করেছে। বিপুল পরিমাণ লাল চেউয়া, সাদা চেউয়া, বেলে (বাইলা), সেলেং, চাপিলা, চিংড়ি, কাঁচকি ও জাটকা মরে পানিতে ভেসে উঠেছে। ব্যাঙ, কুচি ও জলসাপও মরে ভেসে উঠছে। এসব মাছ ও জলজ প্রাণী তীরে স্তূপ হয়ে আছে। এতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে আশপাশে।
দূষিত পানি ও পচা মাছের দুর্গন্ধে নাকাল স্থানীয় বাসিন্দারা। মেঘনার তীরবর্তী বাবুরবাজার এলাকার বাসিন্দা ফুলচাঁন বর্মণ বলেন, কয়েক দিন আগে মেঘনার সবুজ পানির রং ঘোলাটে ও দুর্গন্ধময় হয়ে গেছে। শুক্রবার ভোর থেকে এলাকায় মেঘনায় প্রচুর মরা মাছ ও জলজ প্রাণী ভেসে উঠছে। মরা মাছ ও প্রাণী নদীর তীরে স্তূপ হয়ে পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দুর্গন্ধে ঘরে টেকা দায় হয়ে পড়েছে।
কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. শামসুদ্দিন বলেন, তিন দিন ধরে মরা মাছে নদী ছেয়ে গেছে। বারণ করা সত্ত্বেও শিশুরা নদীর দূষিত পানিতেই গোসল করছে। গৃহিণীরাও হাঁড়ি-পাতিল ধোয়ামোছার কাজ করছেন। এতে স্থানীয় লোকজন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। গত বছরের আগস্টেও মাছ মরে ভেসে ওঠার ঘটনা ঘটেছিল। বিষয়টি মৎস্য বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার কথা জানিয়েছেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস। তিনি বলেন, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা হয়ে জোয়ারের স্রোতে মেঘনার সবুজ মিঠাপানিতে মিশে যাচ্ছে। এ কারণে মেঘনার পানি দূষিত হচ্ছে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, দূষণ বেড়ে যাওয়ায় পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বেড়ে গেছে এবং অক্সিজেন ও পিএইচের পরিমাণ কমেছে। এ জন্য এত হারে মাছ মরছে বলে মনে হচ্ছে। এ বিষয়ে গত আগস্টে পরিবেশ ও মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়।
মতলব সরকারি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অশোক কুমার রায় বলেন, দূষণজনিত কারণে মেঘনায় যে হারে মাছ ও জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে, তা উদ্বেগের বিষয়। নদীর পানি ও পরিবেশদূষণ বন্ধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।