সুদানের লড়াইয়ের ১০০তম দিন, উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৯

0
73
পোর্ট সুদান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ৫ মে , ২০২৩, ছবি: রয়টার্স

সুদানে দুই প্রতিপক্ষ বাহিনীর মধ্যে চলমান যুদ্ধের মধ্যে গতকাল রোববার একটি বেসামরিক উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে চার সেনাসহ নয়জন নিহত হয়েছেন। ‘প্রযুক্তিগত’ কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটে বলে দেশটির সেনাবাহিনী জানায়।

সুদানের এই লড়াইয়ের ছাপ এখনো পড়েনি পূর্ব উপকূলীয় পোর্ট সুদান বন্দরনগরে। সেনাবাহিনী জানায়, আন্তোনোভ উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হলেও সৌভাগ্যক্রমে একটি শিশু বেঁচে গেছে। তবে অন্য নয়জন নিহত হয়েছেন। এই সংঘাতের মধ্যে পোর্ট সুদানই একমাত্র বিমানবন্দর, যা এখনো কাজ করছে।

ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্বে দেশটির সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং আধা সামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগলোর বাহিনীর মধ্যে গত ১৫ এপ্রিল এই লড়াই শুরু হয়।

আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডাটা প্রজেক্ট (এসিএলইডি)র সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই লড়াইে ৩ হাজার ৯০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।  ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন জানায়, ২৬ লাখের বেশি মানুষ দেশের অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই খার্তুমের।

সুদানের দারফুর অঞ্চলের জেনেইনাতে সংঘাত থেকে পালিয়ে আসা মানুষগুলো ঠাঁই নিয়েছিল একটি স্কুলে। এখন তাদের সেখান থেকে একটি ট্রাকে করে সীমান্তবর্তী দেশ চাদের আদ্রেতে একটি অস্থায়ী শরণার্থী শিবিরে নেওয়া হচ্ছে। ২৩ জুলাই
সুদানের দারফুর অঞ্চলের জেনেইনাতে সংঘাত থেকে পালিয়ে আসা মানুষগুলো ঠাঁই নিয়েছিল একটি স্কুলে। এখন তাদের সেখান থেকে একটি ট্রাকে করে সীমান্তবর্তী দেশ চাদের আদ্রেতে একটি অস্থায়ী শরণার্থী শিবিরে নেওয়া হচ্ছে। ২৩ জুলাই, ছবি: রয়টার্স

আফ্রিকান দেশটিতে চলমান এ সংঘাত গতকাল ১০০তম দিনে পৌঁছেছে। এরই মধ্যে লাখো মানুষ তাঁদের বাড়িঘরে আটকা পড়ে আছে। অনেকের বাড়িতে পানিটুকুও নেই। বিশেষ করে রাজধানী খার্তুমের শহরতলির মানুষেরা বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যসহায়তা চাইছেন।

যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি শহর খার্তুম নর্থের বাসিন্দা আব্বাস মোহাম্মদ বাবিকার বলেন, ‘আমি ও পরিবারের লোকেরা দিনে একবার খেয়ে বেঁচে আছি। এখন এটি হবে কি না, সন্দেহ আছে। আমাদের কাছে যে খাবার আছে, তা দিয়ে হয়তো আর দুদিন চলতে পারে।’

আর যাঁরা রাজধানীতে রয়ে গেছেন, বিশেষ করে খার্তুম নর্থে আছেন, তাঁদের কাছে পানি নেই। যুদ্ধের শুরুর দিকেই স্থানীয় পানি স্টেশনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাসিন্দারা বলছেন, সেখানে শুধু বিদ্যুৎ রয়েছে। আর খাবার যা আছে, তা-ও প্রায় ফুরিয়ে গেছে। খাতুর্ম নর্থের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘এই লড়াইয়ের কারণে এখানে কোনো মার্কেট নেই। আর এখন আমাদের হাতে কোনো অর্থকড়িও নেই।’ সেখানে খাবারের অভাবে স্থানীয় এক শিল্পীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা। তবে আশার কথা হলো, গতকাল বাবিকার মতো লোকদের সাহায্য করার জন্য একটি নাগরিক সহায়তা গোষ্ঠী প্রতিরোধ কমিটি জরুরি ভিত্তিতে সহায়তা করতে আরজি জানিয়েছে।

কমিটি তাদের ফেসবুক পেজে লিখেছে, ‘আমাদের একে অপরকে সহায়তা করতে হবে। খাবার, অর্থ দিতে হবে এবং আমাদের চারপাশের মানুষের মধ্যে তা বিলিয়ে দিতে হবে।’

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য প্রোগ্রামের তথ্যমতে, যুদ্ধ শুরুর আগেই দেশজুড়ে মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ খাবারের অভাবে ভুগছিল। তবে সংস্থাটি নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও সংস্থাটি ১৪ লাখের বেশি মানুষের কাছে জরুরি খাদ্যসহায়তা নিয়ে পৌঁছাতে পেরেছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.