সামনাসামনি দেখা হওয়ার আগেই মুঠোফোনে বিয়ে করেছিলেন মরিয়ম খাতুন ও রুবেল হোসেন। কথা ছিল, প্রবাসী রুবেল দেশে ফিরলে ভিটায় উঠবে নতুন ঘর। ধুমধাম করে হবে বিয়ের অনুষ্ঠান। কিন্তু তাঁর আগেই শেষ হয়ে গেছে সব স্বপ্ন। মুঠোফোনে বিয়ের সাত মাসের মাথায় সৌদি আরবে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে মৃত্যু হয়েছে রুবেলের।
সংসার শুরুর আগেই স্বামীকে হারিয়ে দিশাহারা মরিয়ম খাতুন। দুই পরিবারে চলছে মাতম। সেই শোক ছুঁয়েছে গ্রামের অন্য বাসিন্দাদেরও।
সৌদি আরবে একটি সোফা কারখানায় আগুন লেগে ৯ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। গত শুক্রবার রাজধানী রিয়াদ থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দূরে আল আহসা শহরের হুফুফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে রুবেল হোসেনসহ চারজনের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারায়। রুবেল উপজেলার ঝিকড়া ইউনিয়নের বারইপাড়া গ্রামের জফির উদ্দিনের ছেলে। অন্য তিনজন হলেন একই গ্রামের জমির উদ্দিনের ছেলে সাজেদুল ইসলাম, শাহাদত হোসেনের ছেলে আরিফ ওরফে রুবেল আলী এবং বড় মাধাইমুড়ি গ্রামের আনিসুর রহমানের ছেলে ফিরোজ আলী সরদার। তাঁরা ওই সোফা তৈরি কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রুবেল হোসেনের (২৬) বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আধা পাকা বাড়ির এক কোনে চৌকিতে বসে কান্না করছেন মরিয়ম খাতুন। তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন প্রতিবেশীরা। কিন্তু কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না তাঁকে। কাঁদতে কাঁদতে মাঝেমধ্যে চেতনা হারিয়ে ফেলছেন। পরে মাথায় পানি ঢেলে চেতনা ফিরিয়ে আনছেন প্রতিবেশী নারীরা। বাড়ির উঠানে বিলাপ করছেন রুবেলের প্রতিবন্ধী বাবা জফির উদ্দিন (৭০)।
স্বজনেরা জানান, ছয়-সাত বছর আগে সৌদি আরবে যান রুবেল হোসেন। সেখানে একটি সোফা কারখানায় তাঁর সঙ্গে এলাকার আরও তিনজন চাকরি করতেন। বিদেশ থাকা অবস্থায় গত জানুয়ারিতে একই ইউনিয়নের ইব্রাহিম নগরের মঞ্জুর রহমানের মেয়ে মরিয়ম খাতুনের সঙ্গে বিয়ে হয় রুবেলের। দুই পরিবারের সম্মতিতে মুঠোফোনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। এর পর থেকে কখনো বাবার বাড়ি কখনো শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন মরিয়ম।
বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে সামনাসামনি দেখা হয়নি মরিয়ম খাতুনের। মুঠোফোনে ভিডিও কলের মাধ্যমে একে অপরকে দেখেছেন তাঁরা। মরিয়ম বলেন, প্রতিদিনই একাধিকবার তাঁদের কথা হতো। ঘটনার দিন দুপুরে তাঁদের শেষ কথা হয়েছে। এরপর শুক্রবার রাতে সৌদি আরব থেকে রুবেলের এক সহকর্মী দুর্ঘটনার কথা জানিয়েছিলেন। পরের দিন শনিবার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন তাঁরা।