মায়ের লাশ বাড়িতে রেখে এসএসসি পরীক্ষার হলে দুই বোন

0
141
টেকনাফ এজাহার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে সাদিয়া ফেরদৌস ও শারমিন ইয়াসমিন

রোজার সময় হঠাৎ ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত হন আনোয়ারা বেগম (৫০)। এরপর থেকে নানান ধরনের সমস্যায় ভুগছিলেন। সোমবার রাতে হঠাৎ অসুস্থতা বাড়ে। তাঁকে টেকনাফ থেকে কক্সবাজার হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে আজ মঙ্গলবার ভোরে চট্টগ্রাম নেওয়ার প্রস্তুতিকালে তাঁর মৃত্যু হয়।

শোকে বিহ্বল স্বজনেরা লাশ দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এমন অবস্থায় মা আনোয়ারা বেগমের লাশ বাড়িতে রেখে আজকের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে দুই বোন সাদিয়া ফেরদৌস ও শারমিন ইয়াসমিন। পরীক্ষা শেষে বাড়িতে ফিরে মায়ের লাশ দাফনে অংশ নেবে তারা।

ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায়। সাদিয়া ও শারমিন সাবরাং উচ্চবিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী।

সাদিয়া ও শারমিনের পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছে টেকনাফ উপজেলা সদরের সরকারি এজাহার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের। আজ সকাল ১০টার আগে চোখ মুছতে মুছতে এই কেন্দ্রে আসে দুই বোন। সহপাঠী ও কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সহযোগিতায় বাংলা দ্বিতীয় পত্র বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নেয় তারা।

পরীক্ষা শুরুর আগে সাদিয়া ও শারমিন বলল, মা তাদের অনেক ভালোবাসতেন। চাইতেন তারা যেন পড়ালেখা করে অনেক বড় হয়। তাই এমন অবস্থায়ও পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। মায়ের আত্মাকে তাঁরা কষ্ট দিতে চান না।

পরিবার ও স্থানীয় লোকজন জানান, টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পানছড়িপাড়া গ্রামের জহির আহমদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৫০)। তাঁদের তিন মেয়ে ও চার ছেলেসন্তান রয়েছে। হঠাৎ ভোরের দিকে মা আনোয়ারা বেগমের মৃত্যু হয়। এতে বাড়িজুড়ে শোক নেমে এসেছে। চলছে লাশ দাফনের প্রস্তুতি। মায়ের মৃত্যুর পর সাদিয়া ও শারমিন ভেঙে পড়লেও স্বজনদের কথায় এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে আসে তারা। পরীক্ষা শেষে তারা বাড়ি ফেরার পর বেলা তিনটার দিকে সাবরাং পানছড়িপাড়া স্কুলমাঠে আনোয়ারা বেগমের জানাজা হবে। পরে তাঁদের পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর দাফন সম্পন্ন হবে।

সাবরাং উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মফিজ উদ দৌল্লাহ বলেন, মা হারানো দুজন শিক্ষার্থী খুবই মেধাবী। মেয়ে দুটি দুই কক্ষে আলাদাভাবে পরীক্ষা দিচ্ছে। তবে তাদের মাঝেমধ্যে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে।

কেন্দ্রসচিব ও সরকারি এজাহার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিউলি চৌধুরী বলেন, সাদিয়া ও শারমিন মায়ের মৃত্যুর বিষয়টি সকালেই জানতে পেরেছিলেন। সবার সঙ্গে বসে পরীক্ষা দিলে তাদের জন্য ভালো হবে, ভেবে বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাঁরা চেয়েছেন, দুই বোন সবার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই পরীক্ষা দিক। তারা দুই বোন এক হাতে রুমাল দিয়ে বারবার চোখ মুছছিল। আর অন্য হাতে পরীক্ষার খাতায় লিখেছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘মাকে হারানো যে কারও জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তারপরও এসএসসি পরীক্ষার্থী সাদিয়া ও শারমিন মা হারানোর কষ্ট নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। আমরাও তাদের পরীক্ষার সময় যতটা সম্ভব পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.