মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুই থাকছে

0
150
বন্ধ হচ্ছে না দেশের মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও অন্যন্য স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস ৫ থেকে ৮ জুন পর্যন্ত বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হলেও বন্ধ হচ্ছে না দেশের মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও অন্যন্য স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক শাখার শিক্ষার্থীরা ৮ জুন পর্যন্ত ছুটি পাবে।

সোমবার থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস বন্ধ থাকলেও বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন, মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে ক্লাস বন্ধ করা হয়নি। গরমের কারণে বিদ্যালয় ক্লাস বন্ধ করা হলে কেন তা সবার জন্য করা হবে না, এ নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।

এ বিষয়ে আজ সোমবার জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা বয়সে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের চেয়ে কিছুটা বড়। এছাড়া ৭ জুন থেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির মূল্যায়ন শুরু হচ্ছে। এরপর মূল্যায়ন হবে অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণিতেও। সামনে ঈদের ছুটি রয়েছে। এর আগে মূল্যায়ন শেষ করতে হবে। সবমিলিয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো খুব টাইট শিডিউলের মধ্যে রয়েছে।’

মহাপরিচালক জানান, তবে যেসব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শাখা সংযুক্ত আছে (সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়) সেসব শিক্ষার্থীরা বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত ছুটি পাবে। তাদের এ সময়ে বিদ্যালয়ে আসতে হবে না। এ বিষয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে নির্দেশনা দেওয়া  হচ্ছে।

অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো গরমের কারণে ছুটি দেওয়া না হলেও এসব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকদের জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা কিছুক্ষণের মধ্যে পাঠানো হচ্ছে। এসব নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরবর্তী নিদের্শ না দেওয়া পর্যন্ত এসেম্বলি ও পিটি-প্যারেট করানো যাবে না। বিদ্যালয়ের মাঠে কোনো কাজে ছাত্রছাত্রীদের পাঠানো যাবে না। মাঠে খেলাধুল করা থেকে তাদের বিরত রাখতে হবে। তাদেরকে পর্যাপ্ত পানি পানের পরামর্শ দিতে হবে। শ্রেণিকক্ষে আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। বৈদ্যুতিক পাখা নষ্ট থাকলে জরুরি ভিত্তিতে তা মেরামত করা হবে।’

তবে সরকারি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস ছুটি না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল কবির দুলু বলেন, ‘এক দেশে দুই নিয়ম কেন হবে? গরম কি শুধু প্রাথমিক শিশুদের লাগে? মাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা কি শিশু নয়? এই সিদ্ধান্ত বৈষম্যমূলক।’

সাবিকুন নাহার জলি নামে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক নারী অভিভাবক বলেন, ‘এটা বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত। আমার দুই মেয়ে দুই শ্রেণিতে পড়ে। দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ের স্কুল ছুটি থাকবে, অথচ সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে আমার ঠিকই স্কুলে আসতেই হচ্ছে। গরম তো আমাদের অভিভাবকদেরও লাগে।’

সারাদেশের ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলোতে এক কোটি ৪০ লাখের বেশি ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছে। এ বিদ্যালয়গুলো প্রায় চার লাখ শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মরত। এসব বিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ। তবে সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৯ হাজার। এর মধ্যে এমপিওভুক্ত ১৭ হাজার। আর নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২২ হাজার।

সোমবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানানো হয়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। প্রচণ্ড গরম আরও পাঁচ থেকে ছয় দিন অব্যাহত থাকতে পারে।

এবারের তীব্র দাবদাহে বিদ্যালয়গামী শিশু শিক্ষার্থীরা নাজেহাল হচ্ছে।  প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, গত সপ্তাহের সোমবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিচালিত জাতীয় ফুটবল টুর্নামেন্টের প্রতিযোগিতার খেলায় অংশ নিয়ে প্রচণ্ড গরমে টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলায় ফুটবল খেলতে গিয়ে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। সম্প্রতি প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৩ এর ইউনিয়ন পর্যায়ের খেলা শুরু হয়। গত সোমবার (২৯ মে) কালিহাতির সহদেবপুর ইউনিয়নের মুখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ছুনুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে খেলা ছিল। ওই দিন বেলা ২টায় মুখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে খেলা শুরু হয়। প্রচণ্ড গরমে রোদের মধ্যে খেলতে গিয়ে রিয়া আক্তার নামে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী মাঠে অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

ছুনুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘রিয়া অসুস্থ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমিসহ আয়োজকেরা মাঠে ছুটে যাই। রিয়ার মাথায় পানি ঢালি। এতেও তার জ্ঞান ফেরেনি। এরপর সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে তাকে টাঙ্গাইল সদর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

রিয়া কালিহাতী উপজেলার সহদেবপুর ইউনিয়নের ছুনুটিয়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেন ও রেজিয়া আক্তারের মেয়ে। সে ছুনুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। ছুনুটিয়া গ্রামে রিয়া আক্তারের বাড়িতে মৃত্যুর খবর পৌঁছালে শোকের মাতম শুরু হয়। বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন তার বাবা মা দেলোয়ার ও রেজিয়া। এখনও থামছে না তাঁদের বিলাপ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.