মোটরসাইকেলের সামনে মাইক বাধা। পেছনে ব্যাটারি ও চিকন হর্ন। এসব নিয়ে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ঘোরেন নজরুল ইসলাম। আর করেন নানা ধরনের অনুষ্ঠানের মাইকিং। এমন ভিন্ন ধরনের প্রচারণায় সবাই তাকিয়ে থাকেন।
দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে এভাবে মাইকিং করে সংসার চালাচ্ছেন রংপুর সদর উপজেলার পালিচড়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব নজরুল ইসলাম। তবে মৃত ব্যক্তির প্রচারের ক্ষেত্রে তাঁর সহানুভূতি রয়েছে। কারও মৃত্যুর সংবাদ পেলেই সেখানে ছুটে যান। এলাকায় তাঁদের মৃত্যুর খবর প্রচারে কোনো টাকা নেন না। এ জন্য মাইকের গায়ে লিখে রেখেছেন, ‘মৃত ব্যক্তির মাইকিংয়ের জন্য কোনো প্রকার অর্থ নেওয়া হয় না’।
একসময় শহরে মাইকিংয়ের দোকানে চাকরি করতেন নজরুল। সেই চাকরি ছেড়ে তিনি নিজেই ৩ হাজার ২০০ টাকায় মাইক ও ব্যাটারি সেট কেনেন। নেমে পড়েন মাইকিং করার ব্যবসায়। প্রথমে একটি বাইসাইকেলের সামনে মাইক, পেছনে ব্যাটারি বেঁধে এ কাজ শুরু করেন। ১৫ বছর সাইকেলেই করেছেন। পরবর্তী সময়ে টাকা জমিয়ে ২২ হাজার টাকায় একটি পুরোনো মোটরসাইকেল কেনেন।
সাধারণত কারও মাইকিং করতে গেলে মাইক ও রিকশা ভাড়া করতে হয়। সেই সঙ্গে মাইকিং করার উপযোগী একজনকে নিতে হয়। সেখানে খরচ পড়ে এক হাজার টাকার ওপরে। কিন্তু নজরুলকে দিয়ে মাইকিং করালে টাকা নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হয় না। যে যাঁর মতো টাকা দেন। ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা পর্যন্ত তিনি ভাড়া পান। কোনো কোনো দিন একাধিক মাইকিংও করতে হয়। এভাবে প্রতিদিন তাঁর আয় হয় ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত।
আজ শুক্রবার সকালে মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ এলাকায় মোটরসাইকেলে মাইকিং করার সময় দেখা মিলল নজরুল ইসলামের। তিনি জানান, ৩০ বছর বছর ধরে এ কাজ করে চলেছেন। মুক্ত বাতাসে গ্রাম, শহরের রাস্তায় ঘুরে ঘুরে মানুষের যেকোনো অনুষ্ঠানের প্রচার করে থাকেন। কম টাকায় মাইকিং করার কারণে বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁর ডাক আসে। এ কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
তিন শতাংশ জমির ওপর বসতভিটায় তিনটি টিনের ঘর নজরুল ইসলামের, বেড়াও টিনের। তিন মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর স্ত্রী রিনা বেগমকে নিয়েই তাঁর সংসার। তিনি বলেন, মাইকিং করার উপার্জিত টাকা দিয়ে সংসারের খরচ চলে। এই টাকায় তিনি তাঁর তিনটি মেয়েকে এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করিয়ে বিয়েও দিয়েছেন। সেই বিয়েতে অনেককে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। কারও কাছে কখনো টাকার জন্য হাত পাতেননি। তাঁকে এলাকার লোকজন একনামেই চেনে।
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘যেদিন কাজ থাকে না, সেদিন মুঠোফোনে পুরোনো দিনের গান বাজিয়ে গ্রামের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াই। হাটবাজারসহ জনবহুল এলাকায় থেমে থেমে গান বাজাই। এতে লোকজন ঘিরে ধরেন, গান শুনে মুগ্ধ হন। আমার প্রচারও বাড়তে থাকে।’
রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুষ্করিণী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান সোহেল রানা বলেন, একনামে সবাই নজরুল ইসলামকে চেনে। তিনি দীর্ঘ বছরের পর বছর ধরে এ কাজ করে চলেছেন। ভিন্ন কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তবে তিনি মৃত ব্যক্তির প্রচারে কোনো টাকা নেন না।