মন্ত্রীর বাড়িতে খুনি: যে ঘটনা ছিল এরশাদের সামরিক শাসনের উপলক্ষ

0
259
জিয়াউর রহমান

ইমদাদুল হক ইমদুইমদাদুল হক ইমদু
কে এই ইমদু

ইমদাদুল হক ওরফে ইমদুর বাড়ি গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার সাতানিপাড়া গ্রামে। মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাসদের ক্যাডারে পরিণত হন। মুক্তিযুদ্ধের পর অস্ত্র জমা দেননি। ইমদুর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ছিলেন আরেক স্থানীয় জাসদ নেতা কালীগঞ্জের তুমুলিয়া গ্রামের আলী হোসেন। ১৯৭৯ সালে ইমদু যুব উন্নয়নমন্ত্রী আবুল কাশেমের বাসায় গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যুবদলে যোগদান করেছিলেন। ফলে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় ছিলেন ইমদু।

এক পুলিশ কর্মকর্তা ইমদুর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে, ‘গাজীপুরের কামারিয়া গ্রামের মিলন ছিল ইমদুর বন্ধু। মিলনের বাবা কাদের মোক্তারের সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ ছিল পাশের গ্রামের আফসার উদ্দিনের ছেলে আজিজ, মজিদ গংয়ের। বিরোধের জেরে মিলন তার বন্ধু ইমদু, বরজুল এবং মোস্তফাকে নিয়ে এক রাতে আজিজকে হত্যা করে লাশ নিয়ে বিলে পুঁতে রাখে। ঘটনার আট মাস পর ইমদুকে আসামি করে আজিজের ভাই মজিদ বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় মামলা করেন। খুনের মামলা করায় ইমদু ভীষণ ক্ষিপ্ত হয় মজিদের ওপর। ১৯৮১ সালের ১৮ মার্চ মজিদ কালীগঞ্জ থানার সুকুন্দিয়া গ্রামে তার বোন আয়াত বানুর বাড়িতে বেড়াতে যায়। রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে ইমদুর বাহিনী আয়াত বানুর বাড়ি ঘেরাও করে। মজিদকে ঘুম থেকে তুলে হত্যা করে। পরে মজিদের আরেক ভাই হাকিমকেও ইমদু বাহিনী নৃশংসভাবে খুন করে। একটা সময় বন্ধু আলী হোসেনের সঙ্গে ইমদুর শত্রুতা তৈরি হয়। শোনা যায়, আলী হোসেনের সঙ্গে তার বিরোধটা তৈরি হয় বিএনপিতে যোগ দেওয়া না দেওয়া নিয়ে। আলী হোসেন নৃশংসভাবে খুন হন ঢাকার তেজকুনিপাড়ায়। আলী হোসেনের সহযোগী দুর্বাটি গ্রামের চানু ভূঁইয়াকেও গুলি করে হত্যা করে ইমদু। একই এলাকায় রশীদ নামে আরেকজনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল।’

এক পুলিশ কর্মকর্তার ভাষ্য

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা সফিক উল্লাহ এখন অবসর জীবনযাপন করছেন। তিনি তাঁর পুলিশ জীবনের স্মৃতি নিয়ে লিখেছেন বই, ‘এক পুলিশের ডায়েরি’। সেখানে তিনি বলেছেন যে ইমদুকে ধরার দায়িত্ব আসলে তাঁরই ছিল। তখন তিনি ঢাকায় বদলি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের পদ, দায়িত্ব শিল্প এলাকা। ঢাকার পুলিশ সুপার ছিলেন মাহমুদ আল ফরিদ। সফিক উল্লাহ লিখেছেন, ‘মানিকগঞ্জ এবং নরসিংদীতে সর্বহারা-গণবাহিনী দমন করার অভিজ্ঞতার কারণে এসপি মাহমুদ আল ফরিদ আমাকে বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে ইমদুকে ধরার অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছিলেন। কয়েকবারই তাকে ধরার জন্য অভিযান চালিয়েছিলাম। কিন্তু তখন সফল হইনি। ইমদুকে অবশ্য পরে ধরা সম্ভব হয়েছিল। তাকে ধরার পুরো পরিকল্পনাটাই ছিল আমার। তবে সেটা আরও কিছুদিন পরের কথা। যুবদলের সভাপতি তখন যুববিষয়ক প্রতিমন্ত্রী আবুল কাশেম। ইমদু ছিল আবুল কাশেমের একেবারে খাস লোক। বিষয়টি সবাই জানত। সে নিজেও তা প্রচার করত। সে কারণে যুবদলের পল্টন অফিসে ইমদুর তখন ভীষণ প্রতাপ। এ রকম অবস্থায়ও পুলিশ সুপারের নির্দেশে নানা পরিকল্পনা নিয়ে ইমদুকে ধরার তৎপরতা চালাতে থাকি। যাহোক, ইমদুকে পাকড়াও করার প্রচেষ্টা আমার একদিন ঠিকই সফল হলো। সেই ঘটনা অনেকটা হিন্দি ফিল্মের মতো।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.