মনি কিশোরের মরদেহ উদ্ধার, কী হয়েছিল সেদিন

0
23
মনি কিশোর। ছবি: সংগৃহীত

‘কী ছিলে আমার’, ‘সেই দুটি চোখ কোথায় তোমার’, ‘তুমি শুধু আমারই জন্য’ গানগুলো দিয়ে সংগীতাঙ্গনে নিজের আলাদা একটি জায়গা তৈরি করেছিলেন মনি কিশোর। সেই গায়ক সময়ের ব্যবধানে হঠাৎ করেই যেন হারিয়ে যান সংগীত থেকে। অভিমান নিয়ে নীরবেই থাকতেন এক সময়ের আলোচিত গানের এই গায়ক। গত বছরের ২০ অক্টোবর রামপুরার বাসায় মেলে তাঁর লাশ।

নড়াইলের লক্ষ্মীপুরে জন্ম নেওয়া মনি কিশোর সংগীতপ্রেমী পরিবারে বড় হন। শৈশব থেকে গানই ছিল তাঁর নেশা। আশির দশকের শেষের দিকে ঢাকায় এসে যোগ দেন সংগীতের দুনিয়ায়। খুব দ্রুত তাঁর কণ্ঠ আলাদা করে চিনে নেন শ্রোতারা।

মনি কিশোর
মনি কিশোর, ছবি : সংগৃহীত

নব্বইয়ের দশক মিক্সড অ্যালবামের সোনালি সময়। তখন বাজারে আসা ‘কী ছিলে আমার’, ‘তুমি শুধু আমারই জন্য’, ‘সেই দুটি চোখ কোথায় তোমার’ গানগুলো রাতারাতি জনপ্রিয় করে তোলে মনি কিশোরকে। প্রেম, অভিমান আর স্মৃতির নানা আবেগের গানে ধরা দেন। প্রতিভা দিয়ে সংগীত অঙ্গনে তিনি গড়ে তুলেছিলেন নিজস্ব শ্রোতাশ্রেণি। একসময় হয়ে ওঠেন নব্বইয়ের দশকের আধুনিক গানের অন্যতম জনপ্রিয় গায়ক।

সেই সময়ে গাওয়া গানগুলো এখনো অনেক শ্রোতার কাছে নস্টালজিয়ার নাম। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে মনি কিশোর পাঁচ শতাধিক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। রেডিও-টিভির তালিকাভুক্ত শিল্পী হলেও গান গেয়েছেন অল্প, সিনেমায়ও তেমন গাননি। মূলত অডিওতে চুটিয়ে কাজ করেছেন এই শিল্পী।

মনি কিশোর
মনি কিশোর, ফেসবুক থেকে

২০০০ সালের পর তিনি একটু একটু করে গান থেকে দূরে সরে যান। একসময় গান প্রকাশ করা থেকে অভিমানে নিজেকে সরিয়ে নেন। এর মধ্যে হঠাৎ করেই গত বছর এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি আবারও গান করছেন। জানিয়েছিলেন, পুরোনো গানগুলো পর্যায়ক্রমে ইউটিউবে দিচ্ছেন। জনপ্রিয় গান ‘কী ছিলে আমার’ নতুন করে প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাঁর ভাষ্য ছিল, এ প্রজন্মের শ্রোতারা গানটি শুনেছেন।
বিভিন্ন অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশ পাওয়া তাঁর গানগুলো ইউটিউবে প্রচুর ভিউ। প্রায়ই বিভিন্ন স্টেজে তরুণেরা তাঁর গান গেয়ে থাকেন। কিন্তু গানের মূল গায়ককে তাঁরা চেনেন না। গানটির সুরকার ও গীতিকার কে, তা–ও জানেন না অনেকে। চেনানোর চেষ্টা করেছিলেন এই গায়ক। তাঁর মধ্যেই হঠাৎ প্রয়াত হন তিনি।

কী হয়েছিল সেদিন?
রামপুরার একটি বাসায় থাকতেন এই গায়ক। বেশ কিছুদিন ধরেই তাঁর বাসার রুম ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। প্রতিবেশীরা মনে করেছিলেন, হয়তো গভীর রাতে আসেন, আবার বের হয়ে যান। এভাবে ঢাকার বাইরেও যেতেন এই গায়ক। এর মধ্যেই হঠাৎ করে এই গায়কের বসবাস করা পপি ভবন ও পাশের লাগোয়া ভবনের বাসিন্দারা দুর্গন্ধ গান। সন্ধ্যার দিকে বাসার মালিকও বুঝতে চেষ্টা করেন, কোথা থেকে গন্ধ আসছে। কিন্তু কোথা থেকে, সেটা কেউই বুঝতে পারছিলেন না। পরে তাঁদের সন্দেহ হয়, মনি কিশোরের রুম তো বন্ধ।

মনি কিশোর পাঁচ শতাধিক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন
মনি কিশোর পাঁচ শতাধিক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন, ছবি: সংগৃহীত

বাসার মালিক শামসুদ্দোহা তালুকদার কয়েকজনকে নিয়ে চলে যান মনি কিশোরের দরজার সামনে। তখন গন্ধে তাঁরা দাঁড়াতেই পারছিলেন না। ধরে নেন, মণি কিশোরের কিছু একটা হয়েছে। অনেক ডাকাডাকি করেন তাঁরা। মারা গেছেন এই গায়ক, এমন সন্দেহ হলে তিনি মনি কিশোরের বন্ধু আদনান বাবুকে ফোন দিয়ে দ্রুত আসতে বলেন। তখন আদনান পরামর্শ দেন দ্রুত ৯৯৯-এ ফোন করতে। পরে পুলিশের সহায়তায় এই গায়ককে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।

পরে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন মনি কিশোর। এ ছাড়া মানসিক চাপেও থাকতেন তিনি। পরিবারের সঙ্গে তাঁর তেমন যোগাযোগ ছিল না। আগেই বিচ্ছেদ হয়েছিল। পরে তাঁর সাবেক স্ত্রী শামীমা চৌধুরী ও একমাত্র কন্যা নিন্তি চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। নড়াইল জেলার লক্ষ্মীপুরে ১৯৬১ সালের ৯ জানুয়ারি জন্ম মনি কিশোরের।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.