ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে সংগ্রাম নিয়ে কথা বলেছেন অনেক বলিউড অভিনেত্রী। কেউ বলেছেন ছোট শহর থেকে মুম্বাইয়ে টিকে থাকার সংগ্রাম নিয়ে, কেউ আবার বলেছেন সিনেমা পরিবারের বাইরে থেকে এসে বলিউডে জায়গা করে নেওয়া প্রসঙ্গে। এবার নিজে নিজেই হিন্দি সিনেমায় জায়গা করে নেওয়া প্রসঙ্গে কথা বলেছেন দিয়া মির্জা। সম্প্রতি ইউটিউব চ্যানেল দ্য অফিশিয়াল পিপল অব ইন্ডিয়ায় সাক্ষাৎকার দেন দিয়া মির্জা। সেখানে তিনি বলিউডে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের নানা ঘটনা নিয়ে কথা বলেন ৪৩ বছর বয়সী অভিনেত্রী।
২০০০ সালে ‘মিস ইন্ডিয়া’র মুকুট ওঠে দিয়া মির্জার মাথায়। এরপর ‘রেহনা হ্যায় তেরে দিল মে’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে বলিউডে যাত্রা শুরু করেন তিনি। তিনি একজন ‘বহিরাগত’ হয়েও হিন্দি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা করে নেন। কোনো সমর্থন ছাড়াই ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকা নিয়ে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে দিয়া বলেন, ‘এটা বলতে গেলে আমাকে এ বিষয়ে একটি বই লিখতে হবে। এই প্রশ্নের উত্তর অনেক জটিল, এর অনেকগুলো স্তর রয়েছে। সহজভাবে বলতে গেলে, এটি কঠিন এবং ভয়ংকর ছিল।’
দিয়া জানান, ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে অনাকাঙ্ক্ষিত দর্শনার্থীদের মধ্যরাতে দরজায় কড়া নাড়ার মতো পরিস্থিতিতেও পড়তে হয়েছিল তাঁকে। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে তিনি নিজের হেয়ারড্রেসারের সঙ্গে রুম ভাগাভাগি করতেন। দিয়া বলেন, ‘অনাকাঙ্ক্ষিত দর্শনার্থীদের এড়াতে আমি বহু বছর আমার হেয়ারড্রেসারের সঙ্গে থেকেছি। এটি আমার জন্য সত্যিই কঠিন ছিল। পেছন ফিরে তাকালে আমার মনে হয়, কীভাবে আমি সেই সময় পার করেছি!’

চার বছর বয়সে বিচ্ছেদ হয় দিয়া মির্জার মা-বাবার। ৯ বছর বয়সে তাঁর বাবা মারা যান। তিনি বলেন, ইন্ডাস্ট্রিতে বেশির ভাগ নারীদের সঙ্গে সব সময়ই কোনো না কোনো অভিভাবক থাকে। কারও বাবা-মা তাঁদের চলচ্চিত্র জগতে ক্যারিয়ারের শুরু থেকে পাশে থাকেন। তবে আমার সঙ্গে আমার পরিবারের কেউ ছিলেন না; বরং হেয়ারড্রেসার, মেকআপ আর্টিস্ট ও স্পটবয়রা ছিল আমার দলে। তাঁরা আমার চারপাশে সুরক্ষার জাল বিছিয়ে রাখত। এ কারণে আমি দীর্ঘদিন ব্যক্তিগত সহকারীদের পরিবর্তন করিনি।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে দিয়া মনে রাখার মতো কাজ করেছেন, একই সঙ্গে এমন সিনেমাও করেছেন, যা তিনি না–ও করতে পারতেন। বিষয়টি অভিনেত্রীর নিজেরও আক্ষেপ আছে।

তিনি বলেন, ‘পেছন ফিরে তাকালে আমি কিছু সিনেমায় কাজ করার জন্য অনুশোচনায় ভুগি। আগের অনেক ছবিতে এমন অনেক দৃশ্য বা এমন চরিত্রে অভিনয় করেছি, যা বুঝতেই পারিনি কতটা আমাকে পেছনে টেনে ধরেছে। কখনো আমাকে বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, কখনো চরিত্রের উপস্থাপনা ছিল পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার প্রতিফলন। এই সবকিছু আমাকে সচেতন করেছে, যার ফলে আমি পরবর্তী সময়ে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি।’
দিয়া মনে করেন, শুটিং থেকে ফিরেই তাঁর পক্ষে অভিনীত চরিত্রটি থেকে বের হওয়া সম্ভব হয় না। এমন অনেক চরিত্র আছে, অনেক দিন তাড়া করে। যেমন একবার ধর্ষণের শিকার এক নারীর চরিত্রে অভিনয় করে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। ২০১৯ সালে মুক্তি পেয়েছিল দিয়ার ওয়েব সিরিজ় ‘কাফির’। সিরিজটিতে এক পাকিস্তানি নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন দিয়া। সেই নারী ভুল করে পেরিয়ে আসেন পাকিস্তান-ভারত সীমান্ত। তারপর তাঁকে জঙ্গি মনে করে ভারতে বন্দী করে রাখা হয়। এই ছবিরই ধর্ষণের একটি দৃশ্য নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে কথা বলেছিলেন দিয়া। ধর্ষণের দৃশ্যের পর নাকি বমি করেছিলেন অভিনেত্রী।

তাঁর ভাষ্যে, ‘শুটিং হয়ে যাওয়ার পর আমার সারা শরীর কাঁপছিল। বমিও হয়েছিল, মনে আছে। পুরো দৃশ্যের শুটিংয়ের পর অসুস্থ বোধ করছিলাম। শারীরিক ও মানসিকভাবে এই দৃশ্য এমনই বেদনাদায়ক ছিল। ধর্ষণের দৃশ্যের তীব্রতা সাংঘাতিক। অনুভব করা যায় সেটা।’
হিমাচল প্রদেশে শুটিং হয়েছিল এই ছবির বেশির ভাগ দৃশ্যের। দিয়ার কথায়, ‘বেশ কিছু কঠিন মুহূর্ত ছিল এই ছবির শুটিংয়ে। খুব সুন্দর পরিবেশে শুটিং করছিলাম আমরা। হিমাচলে ৩৬০ পাতার চিত্রনাট্যের শুটিং আমরা ৪৫ দিনে শেষ করেছিলাম। তাই শুটিংয়ের মধ্যে মাত্র ১৫-১৮ মিনিট বিরতি পেতাম। খুবই কঠিন ছিল সবটা। তবে এ ধরনের গল্প সচরাচর বলা হয় না। তাই এই সিরিজ বা ছবি আমাদের কাছে একটি জয়।’

২০১৪ সালে দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক সঙ্গী সাহিল সংঘার সঙ্গে বাগ্দান হয় দিয়ার। একই বছরের ১৮ অক্টোবর তাঁরা বিয়ে করেন। বিয়ের চার বছর পরই বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন তাঁরা। ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্যবসায়ী বৈভব রেখিকে বিয়ে করেন দিয়া। সেই বছরই জন্ম হয় তাঁর প্রথম সন্তান আয়ান আজাদ রেখির। অনেক দিন ধরেই হিন্দি সিনেমায় অনিশ্চিত দিয়া। তবে গত কয়েক বছরে তাঁকে ‘সনঞ্জু’, ‘থাপ্পড়’, ‘ভিড়’, ‘ধক ধক’ ইত্যাদি আলোচিত সিনেমায় দেখা গেছে। আজ মুক্তি পাচ্ছে অভিনেত্রীর নতুন সিনেমা ‘হাউসফুল ৫’। সিনেমার একটি গান ‘ওয়ান বটল ডাউন ২.০’–তে বিশেষ উপস্থিতি রয়েছে তাঁর।
পৃথা পারমিতা নাগ
ঢাকা