মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা, জাতিসংঘের সতর্কবার্তা

0
86
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় আগ্রাসন চালিয়েছে ইসরায়েল

হামাস নির্মূলের নামে টানা ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় আগ্রাসন চালিয়ে নির্বিচার হত্যাকাণ্ড চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। হামাসের সঙ্গে সম্পর্কের জেরে পশ্চিমা মদদপুষ্ট দেশটির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে সিরিয়া ও লেবাননের ইরানপন্থী গোষ্ঠীগুলোও। ফলস্বরূপ গাজায় প্রতিনিয়ত হামলা ও অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি বিগত কয়েক মাসে সিরিয়া এবং লেবাননেও বিচ্ছিন্ন বেশ কয়েকটি হামলা চালায় দখলদার সেনারা।

সবশেষ সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে বিমান হামলা চালায় তারা। এতে প্রাণ হারান ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ডের (আইআরজিসি) দুজন শীর্ষস্থানীয় কমান্ডারসহ ৭ জন ইরানি কর্মকর্তা। এ ঘটনার জেরে এবার ফুঁসে ওঠে ইরান। গত শনিবার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সরাসরি ইসরায়েলের ভুখণ্ডে হামলা চালায় দেশটি।

অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জর্ডানের সহযোগিতায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়ে গেছে ইসরায়েল। এক্ষেত্রে দেশটির উন্নত প্রযুক্তির কয়েক স্তরের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও বড় ভূমিকা রেখেছে। ইরানের নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের বেশিরভাগই ধ্বংস হয়ে গেছে আকাশে। নয়টি ক্ষেপণাস্ত্র ও কয়েকটি ড্রোন ইসরায়েলে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে।

হামলায় ইসরায়েলের ক্ষয়ক্ষতি ততটা না হলেও মধ্যপ্রাচ্যে এর বড় প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালালে তাতে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হতে পারে দুই দেশের মধ্যে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে ইরানে পাল্টা হামলা চালানোর জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। এ পরিস্থিতিতে সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

ইসরায়েলে ইরানের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার জরুরি সভা হয় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে। সেখানে গুতেরেস বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ একটি পূর্ণমাত্রার ধ্বংসাত্মক সংঘাতের মুখোমুখি। তারা যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে এই অঞ্চল বা বিশ্ব কেউই সামলাতে পারবে না। বিশেষ করে নিশ্চিতভাবে চরম বিপর্যয় নেমে আসবে ইতোমধ্যে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় পর্যুদস্ত গাজাবাসীর ওপর। তাই এখনই সময় তাদের খাদের কিনারা থেকে ফিরিয়ে আনার। আর এ দায়িত্ব যৌথভাবে সবার।

এদিকে বিশ্ব ব্যবস্থায় বড় ধরনের অস্থিরতার শঙ্কায় ইরানে পাল্টা হামলা না চালানোর জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটির পশ্চিমা মিত্ররাও। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন কোনো যুদ্ধ চায় না। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি গতকাল সোমবারও ইসরায়েলের নেতাদের প্রতি সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা এখন পর্যন্ত ইরানের হামলার কঠিন জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল আছে।

ইসরায়েল যদি এখন ইরানের ভূখণ্ডে পাল্টা হামলা চালায়, তাহলে পরিস্থিতি দ্রুত জটিল হতে পারে বলে মনে করেন ব্রাসেলসভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরানবিষয়ক প্রকল্পের পরিচালক আলী ভায়েজও। তিনি বলেছেন, এতে আগে থেকে অস্থিতিশীল থাকা একটি অঞ্চল আরও সংকটে পড়বে।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক এই অধ্যাপক দাউদ কাত্তাব বলেন, ইসরায়েল ও ইরান যে সামরিক শক্তি প্রদর্শন করছে, তা আরব বিশ্বের অন্যান্য দেশকে ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে। ভয়টা হলো, ইতোমধ্যেই বিধ্বস্ত এই অঞ্চলে আরেকটি যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার। আর এমনটা সত্যিই যদি ঘটে, তার প্রভাব বিশ্বব্যাপী পড়বে।

সূত্র : বিবিসি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.