রোদের মধ্যে বিদ্যালয়ের খোলা মাঠে সমাবেশ, অসুস্থ শিক্ষার্থীরা

0
173
অসুস্থ শিক্ষার্থী। প্রতীকি ছবি

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় বিদ্যালয়ের খোলা মাঠে শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রাত্যহিক সমাবেশ করা হয়। সমাবেশ চলাকালে রোদের তাপে সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী মাঠে অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারায়। সমাবেশ শেষে ক্লাসে যাওয়ার পর অসুস্থ হয় আরও ২০-২৫ শিক্ষার্থী।

আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার জৈনসার ইউনিয়নের ভবানীপুর উচ্চবিদ্যালয়ে ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় সিরাজদিখান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৩ শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়। সবাই সুস্থ বোধ করায় বিকেলের দিকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। চিকিৎসক বলছেন, প্রচণ্ড গরমে পানি শূন্যতার কারণে এমনটা হয়েছে।

বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জানায়, গরমের আগে তাদের প্রাত্যহিক সমাবেশ মাঠে হতো। প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে প্রাত্যহিক সমাবেশ বন্ধ ছিল। ক্লাসের মধ্যেই কোরআন তিলাওয়াত, গীতাপাঠ ও শপথবাক্য পাঠ চলত। আজ ইউনিয়ন বিট পুলিশের সচেতনতামূলক সভা ছিল। এ কারণে বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীকে মাঠে আনা হয়। সেখানে ১৫ মিনিটের বেশি রোদের মধ্য ছিল শিক্ষার্থীরা। প্রচণ্ড তাপ ও গরমের মধ্যে পুলিশ বক্তব্য দিচ্ছিল। বক্তব্যের একপর্যায়ে সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী মাটিতে ঢলে পড়ে। এ অবস্থা দেখে দ্রুত সভা শেষ করে সব শিক্ষার্থীকে শ্রেণিকক্ষে পাঠানো হয়। সেখানে ২০-২৫ শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ আমিন বলেন, ‘প্রচণ্ড দাবদাহে কারণে আমাদের প্রতিদিন অ্যাসেম্বলি যার যার শ্রেণিকক্ষেই হয়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পুলিশ আজ মাদক, ইভ টিজিং, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে করণীয় কর্মসূচির আয়োজন করে। এ জন্য শিক্ষার্থীদের ১০ মিনিটের জন্য মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে সমাবেশ চলাকালে সপ্তম শ্রেণির এক মেয়ে শিক্ষার্থী প্রথমে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমরা তাকে দ্রুত ক্লাস নিয়ে সেবা-শুশ্রূষা করি। পরে সভা শেষ করে সব শিক্ষার্থী যার যার ক্লাসে চলে যায়। তখন আরও ১৭-১৮ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমরা সবাইকে দ্রুত সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই।’

দাবদাহে যেখানে শ্রেণিকক্ষেই টেকা যায় না, সেখানে শিক্ষার্থীদের মাঠে নেওয়া হলো কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘এটি পুলিশের কর্মসূচি ছিল। এটি উপজেলার প্রতিটি স্কুলেই হয়েছে। আমাদের স্কুলে হলরুম ছোট হওয়ায় আমরা মাঠে নিয়ে করেছিলাম।’

সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জসিম উদ্দিন সরকার জানান, সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে ১৪ শিক্ষার্থী তাঁদের হাসপাতলে এসেছিল। তাদের মধ্যে ১৩ জনকে ভর্তি করা হয়। একজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ওই সময়ই বাসায় চলে যায়। তারা সবাই প্রচণ্ড ঘামছিল, তাদের শরীর দুর্বল ছিল। গরমে পানি শূন্যতার কারণে সবাই অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল। বিকেলের মধ্যে সুস্থ হয়ে সবাই বাড়িতে চলে গেছে। ওই চিকিৎসক বলেন, এই গরমে মধ্যে প্রাপ্তবয়স্করা ঠিক থাকতে পারে না। সেখানে বাচ্চারা কীভাবে সুস্থ থাকবে। তাদের নিয়ে মাঠে কোনোরকমের সমাবেশ করা উচিত হবে না।

অসুস্থ শিক্ষার্থী নাফিজা আক্তারের বাবা গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমরা নিজেরাই গরমে ঘরে থাকতে পারি না, অথচ সমাবেশ করার জন্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঠে নেওয়া হলো। এই গরমে বাচ্চাদের নিয়ে খোলা মাঠে সব ধরনের সভা বন্ধ করা উচিত।’

ভবানীপুর উচ্চবিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও জৈনসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়্যারম্যান রফিকুল ইসলাম (দুদু) বলেন, সিরাজদিখান থানার কামরুল ইসলাম নামের একজন অফিসার বিদ্যালয়ে এসে সচেতনতামূলক কথা বলার জন্য শিক্ষার্থীদের মাঠে বের করে ছিলেন। ওই সময় শিক্ষার্থীরা গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

তবে মুন্সিগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (সিরাজদিখান সার্কেল) মোস্তাফিজুর রহমান (রিফাত) জানান, পুলিশের কার্যক্রমের জন্য বাচ্চাদের মাঠে আনা হয়নি। বিদ্যালয়টির নিয়মিত অ্যাসেম্বলি মাঠে হয়। আজকেও হচ্ছিল। এ সময় বিট পুলিশিংয়ের নিয়মিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের বাল্যবিবাহ, মাদক, কিশোর গ্যাং ও ইভ টিজিংয়ের বিরুদ্ধে সচেতন করতে পুলিশের একজন সদস্য গিয়েছিলেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.