রাজধানী ঢাকাসহ কয়েকটি বিভাগীয় শহরে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করার পরিকল্পনা বিএনপির।
অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত ভিসা নীতি দেশে নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তৈরি করছে বলে মনে করে বিএনপি। এই প্রেক্ষাপট সামনে রেখেই নতুন ধাপে আন্দোলনের কৌশল ও কর্মসূচি ঠিক করতে যাচ্ছে দলটি।
বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার তাদের অধীনেই নির্বাচনের ছক কষছে। এই ছক ভন্ডুল করে কোন কৌশলে বা কী ধরনের কর্মসূচি দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করা যায়, নতুন ধাপের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হবে সেটি।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্ষদ জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ও কৌশল নিয়ে আলোচনা হবে। আজ সোমবার স্থায়ী কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। অবশ্য এই বৈঠকের আগেই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব আন্দোলনের কৌশল ও নতুন কর্মসূচি কী হতে পারে, সে বিষয়ে স্থায়ী কমিটির প্রত্যেক সদস্যকে ভাবতে বলেছে। যাঁর যাঁর ভাবনা আজকের বৈঠকে তুলে ধরা হবে বলে জানা গেছে।
দলীয় সূত্র বলছে, এবারের আন্দোলনে তরুণদের আরও বেশি করে সম্পৃক্ত করার প্রচেষ্টা থাকবে। এ লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ কয়েকটি বিভাগীয় শহরে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করারও পরিকল্পনা রয়েছে। বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এবং দুই অঙ্গসংগঠন যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এই তারুণ্যের সমাবেশ আয়োজন করবে। ইতিমধ্যে তিনটি সংগঠনের শীর্ষ নেতারা যৌথ সভাও করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন শীর্ষ নেতা বলেন, ‘২০০৮ সালের পরে যাঁরা ভোটার হয়েছেন, কিন্তু ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে তাঁরা ভোট দিতে পারেননি; আমরা মনে করছি, সেই তরুণদের জন্য কিছু করা উচিত। তাঁদের উদ্বুদ্ধ করতে আমরা তারুণ্যের সমাবেশ করার কথা ভাবছি।’
তবে এই সমাবেশ কবে, কোথায় এবং কখন করা হবে, সেটি এখনো ঠিক হয়নি। আগামী জুন মাসের প্রথম দিকে অন্তত একটি সমাবেশ করতে চান বলে জানান ছাত্রদলের ওই নেতা।
সরকারবিরোধী এবারের আন্দোলন কর্মসূচিতে দীর্ঘদিন ধরে ভোটের অধিকার হারানো প্রতিবাদী যুবক ও তরুণ শ্রেণিকে অগ্রভাগে পেতে চাইছে বিএনপি। গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরে সারা দেশে বিভাগীয় সমাবেশগুলোকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে রকম মরিয়া মনোভাব দেখা গেছে, আবার সে রকম আন্দোলনমুখী পরিবেশ সৃষ্টি করতে চান বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা। মূলত এ লক্ষ্যেই তারুণ্যের সমাবেশ করার পরিকল্পনা নেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
নতুন কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে ফিরছে বিএনপি
এ বিষয়ে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (ময়মনসিংহ) সৈয়দ এমরান সালেহ গত রাতে বলেন, ‘আমাদের এবারের কর্মসূচি হবে ছকে বাঁধা। একটি পদক্ষেপে কী ফল আসবে, সেটি চিন্তা করে কর্মসূচি দেওয়া হবে। ব্যতিক্রমধর্মী কিছু কর্মসূচিও আসবে। সরকারের দমননীতি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে চিন্তাভাবনা করেই কৌশল নির্ধারণ করতে হচ্ছে।’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী আগামীকাল ৩০ মে। এ উপলক্ষে আজ ২৯ মে থেকে আগামী ৮ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচির মধ্যেই যুগপৎ আন্দোলনে শরিক বিভিন্ন দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এ ক্ষেত্রে বিএনপি তাদের ১০ দফা দাবিকে এক জায়গায় এনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকার হটানোর এক দফার আন্দোলনে যেতে চাইছে। স্থায়ী কমিটির গত বৈঠকেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘সরকার এখন থেকেই নির্বাচনের দিকে ধাক্কাচ্ছে। তারা তাদের অধীন নির্বাচন করে নিজেদের নিরাপদ করার চেষ্টা করবে। কিন্তু আমরা এই সরকারের অধীন কোনো নির্বাচনে যাব না। সুতরাং সরকার যে নির্বাচনের দিকে ধাক্কাচ্ছে, সেটি ভন্ডুল করে নির্দলীয় সরকারের দাবির ফয়সালা করতে হবে আমাদের।’
আমাদের এবারের কর্মসূচি হবে ছকে বাঁধা। একটি পদক্ষেপে কী ফল আসবে, সেটি চিন্তা করে কর্মসূচি দেওয়া হবে। ব্যতিক্রমধর্মী কিছু কর্মসূচিও আসবে। সরকারের দমননীতি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে চিন্তাভাবনা করেই কৌশল নির্ধারণ করতে হচ্ছে
ঈদের পর ১৩ মে থেকে বিএনপি ১০ দফা দাবিতে ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে ৮২টি সাংগঠনিক জেলায় ধারাবাহিক ‘পদযাত্রা’ ও ‘জনসমাবেশ’ কর্মসূচি করেছে। আগামী জুনের শুরুতেই নতুন কর্মসূচি ঘোষিত হতে পারে। দলটির নেতারা মনে করছেন, নতুন করে ধারাবাহিক কর্মসূচির মধ্যেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে, যার মধ্য দিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন নতুন পর্যায়ে নেওয়া সম্ভব হবে।
চূড়ান্ত আন্দোলন কখন, সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি বিএনপি
বিএনপির উচ্চপর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশকে ঘিরে সারা দেশে যে রকম রাজনৈতিক উত্তাপ তৈরি হয়েছিল, মার্কিন ভিসা নীতির প্রেক্ষাপটে নতুন করে সে রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই প্রথম নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়েছে। র্যাবের পর এবার ভিসা নিষেধাজ্ঞা। বিশ্ব মনে করে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। মানুষ গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসন ফিরে পাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে। এ আন্দোলন এখন আন্তর্জাতিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।