আলোর অপেক্ষায় স্বপ্নের টানেল

0
98

কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে তৈরি হয়েছে দেশের প্রথম টানেল। ৯৯ শতাংশ কাজ শেষ করে স্বপ্নের এই টানেলে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। সংযোগ সড়ক কার্পেটিং, ইলেট্রিক্যাল ওয়ারিং ও স্ক্যানার মেশিন বসানোর কাজ চলছে।

যান চলাচলের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী ২৮ অক্টোবর উন্মুক্ত করা হবে বঙ্গবন্ধু টানেল। এরই মধ্যে এই টানেল দিয়ে গাড়ি চলেছে পরীক্ষামূলকভাবে। নদীর এই পাড় থেকে ওই পাড়ে যেতে সময় লেগেছে মাত্র সাড়ে তিন মিনিট। এই সাড়ে তিন মিনিট পথের জন্য চট্টগ্রামবাসী অপেক্ষা করেছে ৫২ বছর।

স্বাধীনতার পর থেকে এমন একটি টানেলের স্বপ্ন দেখে আসছিল বন্দর নগরীর বাসিন্দারা। তাদের সেই স্বপ্ন পূর্ণতা পাচ্ছে ২৮ অক্টোবর। নবনির্মিত এই টানেল দিয়ে বছরে ৭৬ লাখ গাড়ি চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, অর্থনীতি সুদৃঢ় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই টানেল। শুরুতে এখানে বেশি গাড়ি চলাচল নাও করতে পারে। তবে ধীরে ধীরে এটি বাড়বে। টানেলের পরিপূর্ণ সুফল পেতে হলে মিরসসরাই থেকে মেরিন ড্রাইভ নিয়ে যেতে হবে কক্সবাজার পর্যন্ত। তখন টানেল ঘিরে নদীর ওপারেও সম্প্রসারিত হবে শিল্পাঞ্চল।

 

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, নদীর দুই পাড়ে নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠলে পাল্টে যাবে পুরো চট্টগ্রাম। গতি বাড়বে বাণিজ্য নগরীর। মহেশখালীর সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই টানেল। খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগির আহমদ বলেন, মানুষের সময় সাশ্রয় করবে টানেল। আবার পণ্য পরিবহনেও কমিয়ে আনবে ব্যয়। টানেল পাড়ি দিতে সময় লাগবে মাত্র সাড়ে তিন মিনিট। কিন্তু এটির জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে ৫২ বছর।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, আগামী ২৮ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে টানেলের। এরপর গাড়ি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে টানেলকে। প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, ‘৯৮ শতাংশের বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে টানেলের। ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্প মেয়াদ থাকলেও তার আগেই শেষ হয়ে যাবে নির্মাণকাজ। এখন শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। কর্ণফুলী নদীর বুকে টানেল তৈরির এই কাজটি খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল। চলতি বছরই গাড়ি চলবে টানেলে। এরই মধ্যে পূর্ত কাজ শতভাগ সমাপ্তির ক্ষণটি উদযাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চূড়ান্ত সমাপ্তিটাও টানবেন তিনি।’ বছরে গাড়ি চলবে ৭৬ লাখ শুরুতে যান চলাচল কম হলেও টানেল চালুর তিন বছর পর গাড়ি সংখ্যা দাঁড়াবে ৭৬ লাখে। চালুর প্রথম বছরে চলাচল করা গাড়ির প্রায় ৫১ শতাংশ হবে কনটেইনারবাহী ট্রেইলর, বিভিন্ন ধরনের ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান। বাকি ৪৯ শতাংশের মধ্যে ১৩ লাখ বাস, মিনিবাস ও মাইক্রোবাস এবং ১২ লাখ কার, জিপ ও বিভিন্ন ছোট গাড়ি থাকবে।

তবে বিশিষ্টজন বলছেন, এই ধারণার চেয়ে বেশি গাড়ি চলতে পারে টানেলে। মিরসসরাই শিল্পাঞ্চল ও মাতারবাড়ীর কর্মযজ্ঞ শুরু হলে গাড়ি চলাচলের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। আপাতত প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ১৭ হাজার গাড়ি চলবে বলে ধারণা করছে সংশ্লিষ্টরা। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। তবে সংযোগ সড়কসহ টানেলের মোট দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার। নদীর নিচে সুড়ঙ্গ করে তৈরি করা হয়েছে ১০ দশমিক ৮০ মিটার ব্যাসের দুটি টিউব; যাদের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.