ভারতে বাংলাদেশি সিনেমা-সিরিজের রিমেক

0
193
ভারতে নানা সময়ে বাংলাদেশি সিনেমা-সিরিজের রিমেক হয়েছে

আলোচিত বাংলাদেশি ওয়েব সিরিজ ‘তাকদীর’-এর রিমেক (পুনর্নির্মাণ) করছে ভারতীয় স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ডিজনি প্লাস হটস্টার। তেলেগু ভাষায় ‘দয়া’ নামে সিরিজটি নির্মাণ করছেন তেলেগু নির্মাতা পবন সাদিনেনি।

২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর হইচইয়ে ‘তাকদীর’ মুক্তির পর দর্শকমহলে সাড়া ফেলে, এতে একজন ফ্রিজার ভ্যানচালকের চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা পেয়েছেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। সেই চরিত্রে তেলেগু অভিনেতা জেডি চক্রবর্তীকে পাওয়া যাবে। ৩ জুন ‘দয়া’ সিরিজের ফার্স্ট লুক প্রকাশ করেছে ডিজনি প্লাস হটস্টার, সিরিজটি শিগগিরই মুক্তি পাবে।
‘তাকদীর’ নির্মাণ করেছেন সৈয়দ আহমেদ শাওকি, নেয়ামত উল্যাহর সঙ্গে যৌথভাবে সিরিজের গল্পও লিখেছেন তিনি। এটি নির্মাণের আগেই গল্পের মেধাস্বত্ব ভারতীয় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসকে (এসভিএফ) দিয়েছেন তাঁরা। এসভিএফেরই একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হইচই। হইচইয়ের তরফ থেকে পুনর্নির্মাণের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। নির্মাতা শাওকি গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে জানান, এসভিএফের তরফ থেকে তাঁর সঙ্গে এখনো যোগাযোগ করা হয়নি, পুনর্নির্মাণের খবরটি সংবাদমাধ্যমে দেখেছেন।

‘কারাগার’-এর নির্মাতা শাওকি বলেন, ‘এটা আমাদের দেশের জন্য একটি গর্বের মুহূর্ত। তবে আমাদের সঙ্গে কথা বললে আরও খুশি হতাম। তেলেগু সিরিজের ক্রেডিট লাইনে আমাদের নাম যাবে কি না, জানি না। তেলেগু রিমেকে বাংলাদেশি সিরিজের তথ্য থাকা উচিত। এতে বিশ্বের নজর বাংলাদেশে আসবে, বাংলাদেশি গল্প নিয়ে আগ্রহী হবে।’

তাকদীর’ সিরিজ করেই দুই বাংলায় রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছিলেন চঞ্চল চৌধুরী
তাকদীর’ সিরিজ করেই দুই বাংলায় রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছিলেন চঞ্চল চৌধুরী

‘তাকদীর’ই প্রথম নয়, তেলেগু ভাষায় এর আগে অমিতাভ রেজা চৌধুরীর ‘আয়নাবাজি’ সিনেমাও রিমেক হয়েছে। ২০১৮ সালে ভারতীয় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শ্রী লক্ষ্মী প্রসন্ন পিকচার্সের ব্যানারে মুক্তি পেয়েছে গায়ত্রী। সিনেমার অন্যতম প্রযোজক ও কাহিনিকার গাউসুল আলম শাওন গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে জানান, নির্দিষ্ট একটি অঙ্কের বিনিময়ে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি সেরেছিলেন তাঁরা।
গিয়াসউদ্দিন সেলিমের সিনেমা মনপুরা কলকাতায় ‘অচিন পাখি’ নামে রিমেক হয়েছে। ২০১০ সালের ২৬ মার্চ ভারতে মুক্তি পায় ‘অচিন পাখি’, এতে গল্পকার হিসেবে সেলিমের নাম ছিল। পুনর্নির্মাণের জন্য সেলিমকে কোনো অর্থ দেওয়া হয়নি, লভ্যাংশ থেকে তাঁকে পাঁচ শতাংশ দেওয়ার কথা থাকলেও কোনো কানাকড়িই তিনি পাননি।
‘তাকদীর’, ‘আয়নাবাজি’ ও ‘মনপুরা’—তিনটিরই মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী। গত বৃহস্পতিবার এক ফেসবুক পোস্টে  জনপ্রিয় এই অভিনেতা লিখেছেন, ‘এগুলো (রিমেক) আমাদের ইন্ডাস্ট্রির অর্জন।’

সবচেয়ে বেশি রিমেক করেছে কলকাতা

ঢাকার সিনেমা সবচেয়ে বেশি রিমেক হয়েছে কলকাতায়, বেশির ভাগই নব্বইয়ের দশকে। ঢাকাই সিনেমার সেই রমরমা সময়ে বলিউড অভিনেতা চাঙ্কি পান্ডে, টালিগঞ্জের প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের মতো শিল্পীরা ঢাকায় নিয়মিত কাজ করতেন। ঢাকায় যখন একের পর এক সিনেমা সফল হয়েছে, তখন কলকাতায় মৌলিক গল্পের আকাল। কলকাতার পরিচালক স্বপন সাহা ঢাকার সুপারহিট সিনেমাগুলো কলকাতায় রিমেক করা শুরু করেন।

‘সুজন সখী’ ছবিতে কবরী ও ফারুক
‘সুজন সখী’ ছবিতে কবরী ও ফারুক

খান আতাউর রহমানের সুজন সখী, রাজ্জাকের বাবা কেন চাকর ও সন্তান যখন শত্রু, কাজী হায়াতের দাঙ্গা, বেলাল আহমেদের নয়নের আলো, এম এ খালেকের স্বপ্নের ঠিকানা, আবদুস সামাদ খোকনের ঝিনুকমালা, সোহানুর রহমান সোহানের মা যখন বিচারক, দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর চাকরানী, জজ ব্যারিস্টারসহ বেশ কয়েকটি সিনেমা রিমেক করেন স্বপন সাহা। এর বাইরে তোজাম্মেল হক বকুলের বেদের মেয়ে জোসনা, শিবলী সাদিকের মায়ের অধিকারসহ আরও কয়েকটি সিনেমা কলকাতায় পুনর্নির্মিত হয়েছে।
সেই রিমেক কীভাবে হতো, তার খানিকটা ধারণা দিলেন পরিচালক কাজী হায়াৎ। তিনি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে জানান, মূল ছবির গান ও ফুটেজ নিয়ে সেটার সঙ্গে আরও কিছু দৃশ্য ধারণ করে কলকাতায় রিমেক করা হতো।

আম্মাজান, ইতিহাস-এর মতো আলোচিত সিনেমার পরিচালক কাজী হায়াৎ বলেন, ‘আমাদের ইন্ডাস্ট্রির রমরমা সময়ে কলকাতার ইন্ডাস্ট্রি ছিল মৃতপ্রায়। ওদের বাণিজ্যিক সিনেমার গল্পের সংকট ছিল, ফলে আমাদের সিনেমা রিমেক করত।’

রাজ্জাকের বাবা কেন চাকর ও সন্তান যখন শত্রু সহ আরও কয়েকটি সিনেমা কলকাতায় পুনর্নির্মিত হয়েছে।
রাজ্জাকের বাবা কেন চাকর ও সন্তান যখন শত্রু সহ আরও কয়েকটি সিনেমা কলকাতায় পুনর্নির্মিত হয়েছে।

কী বলছে কলকাতা
ভারতীয় প্রযোজক অশোক ধানুকাও স্বীকার করলেন, নব্বইয়ের দশকে কলকাতার সিনেমার বাজার খুবই খারাপ ছিল। সিনেমার বাজেট ছিল মোটে ১০-১২ লাখ টাকা। ভাইজান এল রে, নবাব, শিকারী, খোকাবাবুসহ বেশ কয়েকটি আলোচিত সিনেমার এই প্রযোজক গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, ‘তখন ঢাকার সিনেমার সোনালি সময় ছিল। বাঘা বাঘা গল্পলেখক, চিত্রনাট্যকার ছিলেন। আমি নিজেও তখন ঢাকায় সিনেমা করেছি। ঢাকাকে টক্কর দেওয়ার ক্ষমতা কলকাতার ছিল না।’
ধীরে ধীরে সেই দৈন্যদশা কাটিয়ে অনেকটা স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে কলকাতা। ঢাকার সিনেমা এখন কলকাতায় রিমেক হয় না বললেই চলে। বলিউডের মতো টালিউডও এখন অনেকটা দক্ষিণমুখী।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.