ভগ্নিপতির তথ্যে খালে পাওয়া গেল স্যান্ডেল, কিন্তু পাঁচ দিনেও শিশুটির খোঁজ নেই

0
189
শিশুটিকে অপহরণের অভিযোগে গ্রেপ্তার ভগ্নিপতি সোহেল, ছবি: সংগৃহীত

মারধর করায় স্বামীকে তালাকের নোটিশ পাঠিয়েছিলেন রাজধানীর পল্লবী এলাকার বাসিন্দা এক তরুণী। এর চার দিনের মাথায় তাঁদের বাসার সামনে থেকে নিখোঁজ হয় সাত বছরের বোন। এ ঘটনায় তরুণীর স্বামী সোহেলকে (২৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উত্তরার একটি খাল থেকে শিশুটির এক জোড়া স্যান্ডেল উদ্ধার করা হয়েছে। তবে পাঁচ দিনেও ওই শিশুর খোঁজ পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ ইসলাম বলেন, গত বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) শিশুটিকে অপহরণের খবর পাওয়ার পর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় শিশুটির বোনজামাই সোহেল জড়িত থাকার কথা স্বীকারও করেছেন। তবে তিনি তাকে কোথায় রেখেছেন, তা স্বীকার করেননি। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে।

নিখোঁজ শিশুটির মা–বাবা ও পল্লবী থানা-পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শিশুটির বাবার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে পল্লবীর আদর্শনগর এলাকার একটি টিনশেড বাড়িতে ভাড়া থাকেন। ওই এলাকায় কাঁচামালের ব্যবসা করেন। শিশুটির মা পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। এই দম্পতির দুই মেয়ে, এক ছেলে। বড় মেয়েও পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। পল্লবী এলাকার একটি কারখানায় চাকরি করার সময় তাঁর সঙ্গে কিশোরগঞ্জের যুবক সোহেলের পরিচয় হয়।

প্রেমের সম্পর্কের পর পরিবারের সম্মতি ছাড়া দুই বছর আগে তাঁরা বিয়ে করেন। বিয়ের পর সোহেল ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান। শ্বশুরের বাসার পাশেই একটি ঘরে স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন তিনি।

তবে সোহেল বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে স্ত্রীর গায়ে হাত তুলতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে একাধিকবার সালিস হয়েছে বলে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন।

নিখোঁজ শিশুটির মা বলেন, ‘আমার সামনে ধরে আমার বড় মেয়েকে মারত। কয়েক দিন আগেও রাতে আমার মেয়েকে অনেক মারধর করেছিল সোহেল।

পরে ধারকর্জ করে মেয়েকে ডাক্তার দেখাইছি। পরে সোহেল আমাদের বাসা থেকে গ্যাছে গা। পরদিন সকালে সোহেল আমাদের বাসায় আসে। তারপর ঘরের কিছু আসবাব ভাঙচুর করে। আবারও মেয়েকে মারধর করে।’

এ ঘটনার পরদিনও সোহেল তাঁদের বাসায় আসেন জানিয়ে ওই মা বলেন, ‘তখন আমি ও আমার স্বামী বাসায় ছিলাম না। বাসায় ছিল দুই মেয়ে। সোহেল বড় মেয়েকে বঁটি দিয়ে শরীরে গুরুতর আঘাত করেছিল।’

ছোট মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় বাবা ২২ এপ্রিল জামাতা সোহেলকে আসামি করে পল্লবী থানায় একটি মামলা করেছেন। খুনের উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগ এনেছেন তিনি। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৬ এপ্রিল তাঁর মেয়ে সোহেলকে তালাকের নোটিশ পাঠান। ওই নোটিশ পাওয়ার পর সোহেল বড় মেয়েকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকেন।

বাবা বলেন, ‘তালাকের নোটিশ দেওয়ার পর আমার মেয়ে পল্লবী থানায়ও সোহেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা দেয়। পরে থানা থেকে আমাদের ডেকেছিল। এরপর সোহেলকে আমাদের বাসায় আসতে নিষেধ করেছিল পুলিশ। কিন্তু তালাকের নোটিশের মাত্র চার দিনের মাথায় সে আমার ছোট মেয়েকে বাসার সামনে থেকে কৌশলে রিকশায় তুলে নিয়ে চলে যায়।’

মা ও বাবা জানান, গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার পর থেকে ছোট মেয়ের কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না। তাঁরা প্রথমে সোহেলের মা–বাবার পল্লবীর বাসায় যান। সেখানে তার কোনো খোঁজ না মিললে সোহেলের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তবে মুঠোফোন বন্ধ পান।

পল্লবী থানা-পুলিশ জানিয়েছে, শিশুটি নিখোঁজের দুই দিন পর ২২ এপ্রিল বেলা ৩টার সময় সোহেলকে পল্লবী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেদিন সোহেলকে নিয়ে বৃন্দাবান খালপাড়ে যায় পুলিশ। সেখান থেকে হালকা আকাশি রঙের পুরোনো এক জোড়া স্যান্ডেল উদ্ধার করা হয়, যা নিখোঁজ শিশুটির বলে তার মা–বাবা নিশ্চিত করেন। পরে আদালতের অনুমতি নিয়ে সোহেলকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (এসআই) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শিশুটিকে অপহরণের খবর পাওয়ার পর সোহেলকে গ্রেপ্তার করে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে সোহেল একেক সময় একেক ধরনের তথ্য দিচ্ছেন। ফলে এখনো ফাতেমাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।’

পল্লবী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুহাম্মদ আহাদ আলী সোমবার রাতে বলেন, শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য সোহেলকে নিয়ে সোমবারও অভিযান চালানো হয়েছে। তবে তাকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। তাঁরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সোমবার রাত ৯টার দিকে পল্লবীর আদর্শনগরে মেয়েটির বাসায় গিয়ে দেখা যায়, মেয়ের জন্য মা–বাবা পাগলপ্রায়। মুঠোফোনে শিশুমেয়েটির ছবি দেখিয়ে বাবা বলেন, ‘আমাকে নিয়ে পুলিশ বৃন্দাবন খালে গিয়েছিল একাধিকবার। সেখান থেকে আমার মেয়ের স্যান্ডেলও উদ্ধার করেছে। আমার প্রিয় ফাতেমাকে চাই।’

আর মা বললেন, ‘পাঁচ দিন হয়ে গেল আমার মেয়ের কোনো খোঁজ নেই। আমি জানতে চাই, আমার মেয়ে কোথায়।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.