ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের পূর্ণাঙ্গ জীবনরহস্য উন্মোচন

0
874
বিশ্বের অন্যতম সেরা জাতের ছাগল ব্ল্যাক বেঙ্গল গোট। ফাইল ছবি

দেশের ছাগল নিয়ে গবেষণায় এক নতুন দিক উন্মোচিত হয়েছে। বাংলাদেশের স্থানীয় জাতের কালো ছাগল বা ব্ল্যাক বেঙ্গল গোটের পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য উন্মোচন করেছেন চট্টগ্রামের একদল গবেষক। গবেষক দলটি বিশ্বের অন্যতম সেরা জাতের ছাগলের যে প্রধান তিনটি দুর্বলতা ছিল, তার কারণ বের করেছেন। দুর্বলতাগুলো দূর করে আরও উন্নত জাতের ছাগল উদ্ভাবনের চেষ্টা করছেন তাঁরা।

গবেষক দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ এম এ এম জুনায়েদ ছিদ্দিকী। তাঁর সঙ্গে আছেন চট্টগ্রামেরই পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতজন গবেষক।

গবেষণাটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পাওয়া গেছে। সম্প্রতি গবেষণার ফল বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী বিএমসি রিসার্চ নোটস–এ (‘স্প্রিনজার ন্যাচার’ কোম্পানি কর্তৃক প্রকাশিত) প্রকাশিত হয়েছে। এ গবেষণার আরেকটি অংশ প্রকাশিত হয়েছে টেইলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস গ্রুপের ‘মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ-বি’ শীর্ষক প্রকাশনায়। স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন (এনসিবিআই)।

পাট, মহিষ ও ইলিশের জীবনরহস্য উন্মোচনের পর ছাগল নিয়ে গবেষণাতেও এই সাফল্য এল। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে একই বিষয়ের ওপর গবেষণা করে সফলতা পান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বজলুর রহমান মোল্লা।

গবেষণার বিষয়ে জুনায়েদ ছিদ্দিকী বলেন, ‘জীবনরহস্য উন্মোচনের মাধ্যমে এই জাতের ছাগলের দুর্বল বৈশিষ্ট্যগুলো বের করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও উন্নত প্রজাতির ব্ল্যাক বেঙ্গল জাত তৈরি করার জন্য আমরা কাজ শুরু করেছি। এ গবেষণার ফলে ছাগলের মাংসের মান উন্নয়ন, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রজননক্ষমতা বৃদ্ধির মতো প্রয়োজনীয় তথ্য উন্মোচিত হয়েছে। ফলে আমরা যে জাতটি উদ্ভাবনের জন্য কাজ করছি, তা সফল হলে দেশের ছাগলের উৎপাদন বাড়বে, সার্বিকভাবে তা দারিদ্র্য বিমোচনে আরও ভূমিকা রাখবে।’

অধ্যাপক জুনায়েদ ছিদ্দিকী আরও জানান, কালো ছাগলের নতুন জাত উদ্ভাবনের গবেষণায় সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের দুটি সংস্থা ইতিমধ্যে অর্থায়নের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে।

গবেষণাটি করেছেন চট্টগ্রামের একদল গবেষক
গবেষক দলের নেতৃত্ব দেন অধ্যাপক জুনায়েদ
গবেষণার ফল বিএমসি রিসার্চ নোটস-এ প্রকাশিত
ব্ল্যাক বেঙ্গলের ৩টি দুর্বলতার কারণ উদ্‌ঘাটন
দুর্বলতা দূর করে উন্নত জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা

গবেষক দলটি ছাগলের যে তিনটি দুর্বলতা চিহ্নিত করেছে, তা হচ্ছে ছাগলের পিপিআর নামে একধরনের ভাইরাসজনিত রোগ হয়। ঠান্ডা, জ্বরসহ নানা উপসর্গ দেখা দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যে ওই রোগে আক্রান্ত ছাগল মারা যায়। কালো ছাগলের বাচ্চাদের ৫ থেকে ১০ শতাংশ এ রোগে মারা যায়। জীবনরহস্য উন্মোচনের ফলে ওই রোগ কেন ও কীভাবে ছাগলের বাচ্চাকে আক্রমণ করে, তার প্রক্রিয়াটি চিহ্নিত করা গেছে। এখন তা দূর করার গবেষণা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া একটি পূর্ণবয়স্ক ছাগল বছরে গড়ে আড়াইটি করে বাচ্চা দেয়। আর তিন নম্বর বাচ্চাটি মায়ের দুধ বেশি পায় না। ফলে সেটি খুব বেশি দিন বাঁচে না, বাঁচলেও দুর্বল হয়।

চট্টগ্রামের এ গবেষণায় অংশ নিয়েছেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন, ইউএসটিসি ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও শিক্ষার্থীরা।

গবেষক দলটি জানিয়েছে, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের জিনোমের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ দশমিক ৪ গিগাবেজপেয়ার। সব মিলিয়ে ২৯ জোড়া ক্রোমোজোমের মধ্যে ২৬ হাজার জিনের অস্তিত্ব ধারণ করা হয়। এ গবেষণার সব তথ্য আন্তর্জাতিক সংস্থা এনসিবিআই ডেটাবেইসে সংরক্ষিত আছে। এ গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণের জন্য ১২৮ জিবি র‍্যাম ক্ষমতাসম্পন্ন একটি উচ্চগতির কম্পিউটার ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয়। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের একটি সার্ভারকেও ব্যবহার করা হয়।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সূত্রমতে, সংখ্যার দিকে থেকে ছাগল উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ বাংলাদেশ। আর ছাগলের মাংস উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে পঞ্চম। বিশ্ববাজারে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের চামড়া ‘কুষ্টিয়া গ্রেড’ হিসেবে পরিচিত। দেশে আড়াই কোটির বেশি ছাগল আছে। এর ৯৫ শতাংশই ব্ল্যাক বেঙ্গল।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.