কক্সবাজার সৈকতে শেষ হলো ২১ জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা নিয়ে দুই দিনের বিচ ফেস্টিভ্যাল। আজ শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় শুরু হয় সমাপনী দিনের পরিবেশনা। ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সেজে নৃত্য-গান পরিবেশন করেন চাকমা, মারমা, ম্রো, ত্রিপুরা, লুসাই, খুমি, বম, খেয়াং, চাক, পাংখোয়া, তঞ্চঙ্গ্যা, মণিপুরি, বাঙালি, সাঁওতাল, মাহালি, ওঁরাও, মাল পাহাড়িয়া, গারো, হাজং, কোচ, রাখাইনসহ ২১টি সম্প্রদায়ের শিল্পীরা। সৈকত ভ্রমণে আসা কয়েক হাজার পর্যটক তরুণ-তরুণীদের নৃত্য-গান উপভোগ করেন।
গতকাল সমাপনী দিনের অনুষ্ঠানের শুরুতে সমবেত কণ্ঠে ‘একুশের গান’ পরিবেশন করেন শিল্পীরা। এরপর মারমা শিল্পীরা ময়ূর ও পাখা নৃত্য পরিবেশন করেন। ঐতিহ্যবাহী জুম নৃত্য পরিবেশন করেন চাকমা শিল্পীরা। চলে ত্রিপুরা, লুসাই, ম্রো, খুমি, বম সম্প্রদায়ের শিল্পীদের গান ও নৃত্য।
‘বহুভাষিক উৎসব-২০২৫’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী বিচ ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সেল। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ।
ত্রিপুরা তরুণীদের প্রদীপ নৃত্য দেখে মুগ্ধ রাজশাহী থেকে সৈকত ভ্রমণে আসা পর্যটক কামরুল ইসলাম (৪৫) বলেন, বিশাল সমুদ্রের তীরে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সম্মিলন দারুণ উপভোগ্য হচ্ছে। সারা দেশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা ২১টি জাতিগোষ্ঠীর শিল্পীদের সৈকতে নিয়ে এসে নিজেদের ভাষার মর্ম জাতির সামনে তুলে ধরার এই আয়োজন যথার্থ হয়েছে। এ ধরনের আয়োজন পর্যটনের বিকাশ ঘটাবে।

বান্দরবানের চাকমা, ত্রিপুরা, মারমা, বম, ম্রো, চাক, খুমি, লুসাইসহ ১১টি ভাষার ১১টি শিল্পী দল নিয়ে উৎসবে অংশ নেন সেখানকার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব চ থুই প্রু মারমা।
অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী ময়ূর ও পাখা নৃত্য পরিবেশন করে দর্শক মাতিয়ে রাখেন মারমা তরুণীরা। এ দলের দুই শিল্পী এ্যানি প্রু ও লিলি প্রু বলেন, ‘সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে প্রথমবারের মতো নৃত্য-গান করলাম। সমুদ্রের গর্জন ক্ষণে ক্ষণে কানে বাজছে। সমুদ্রের গর্জন আর পাহাড়ের কান্না থেমে থাকে না। নতুন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা যেন নিরাপদে থাকেন—এটাই প্রত্যাশা।’
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ শুরু থেকে উৎসব উপভোগ করেন। তিনি বলেন, বিশ্বদরবারে জনবান্ধব সাংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে উৎসব আয়োজনের জন্য কক্সবাজারকে বেছে নেওয়া হয়েছে। কারণ, এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ছুটে আসেন পর্যটনের জন্য। সমুদ্র আর পাহাড়ের বহুভাষিক সম্মিলন দর্শকদের আনন্দ জুগিয়েছে।
আব্দুল কুদ্দুস
কক্সবাজার