নতুন ভোটার হতে গিয়ে ‘অপ্রকৃতিস্থতা’ বিড়ম্বনায় বাগমারার ১৬ তরুণ-তরুণী

0
112
জাতীয় পরিচয়পত্র

নতুন ভোটার হওয়ার আবেদনে ভুল থাকায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন রাজশাহীর বাগমারার ১৬ তরুণ-তরুণী। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডারে এসব নতুন ভোটারের নামের বিপরীতে ‘অপ্রকৃতিস্থতা’ উল্লেখ থাকায় তাঁরা জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে পাচ্ছেন না। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, নতুন ভোটার হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে অনলাইনে আবেদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে আবেদনকারীর বিভিন্ন রকম তথ্য চাওয়া হয়। ‘অন্যান্য তথ্য’ অংশে ‘অসমর্থতা’ শিরোনামে একটি ছক রয়েছে। এই ছকে মূলত দৃষ্টি, শারীরিক, শ্রবণ ও বাক্‌প্রতিবন্ধিতা, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা ও অপ্রকৃতিস্থতা বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়। অনেকে না বুঝে সেখানে ‘অপ্রকৃতিস্থতা’ নির্বাচন করে থাকেন। এর ফলে ডেটাবেজে তাঁদের তথ্যে ‘অপ্রকৃতিস্থ’ বলে উল্লেখ করা হয়।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেউ অপ্রকৃতিস্থ, অর্থাৎ মানসিক রোগী হলে বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে ভোটার হতে পারবেন না। নাম তালিকা থেকে বাদ যাবে। তবে জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে বাধা নেই। কোনো সুবিধা বা সেবা গ্রহণের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র যখন যাচাই করা হবে, তখন তথ্যভান্ডারে ‘অপ্রকৃতিস্থতা’ দেখাবে। সে ক্ষেত্রে তিনি সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।

বাগমারা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় উপজেলায় এমন ১৬ তরুণ-তরুণীর খোঁজ পেয়েছেন, যাঁরা তাঁদের আবেদনে ‘অপ্রকৃতিস্থতা’ উল্লেখ করেছেন। এসব তরুণ-তরুণী ২০২০ সাল থেকে ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন।

ভুক্তভোগীদের একজন উপজেলার শিকদারী গ্রামের বাসিন্দা রাজশাহীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান। তিনি বলেন, নতুন ভোটার হওয়া ও জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদনসহ সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। কয়েক দিন আগে তাঁকে স্থানীয় নির্বাচন অফিস থেকে ফোন করে দপ্তরে ডেকে নিয়ে বিষয়টি খোলসা করা হয়। স্বাভাবিক ও সুস্থ হওয়ার পরও তাঁকে কীভাবে পাগল বানানো হয়েছে, তা জানেন না।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেছেন, নতুন ভোটার হওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদনের সময় করা ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে। আবেদনে উল্লেখ না করলে তো অফিস জানতে পারবে না যে তাঁরা অপ্রকৃতিস্থ।

উপজেলা নির্বাচন অফিসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, বিষয়টি নজরে আসার পর গুরুত্বের সঙ্গে আবেদনকারীদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সাক্ষাৎ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ছয়জন দপ্তরে এসেছিলেন। তথ্যভান্ডারে ‘অপ্রকৃতিস্থ’ উল্লেখ থাকার বিষয়টি সমাধানের জন্য তাঁদের কাছ থেকে আবেদন নেওয়া হচ্ছে। তবে এখনো ১০ জন আসেননি এবং আবেদনও করেননি। বিষয়টি সমাধান না হলে তাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্লক হয়ে যাবে। তাঁরা সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যিনি জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে চান, অনলাইনে সব তথ্য দিয়ে আবেদন করার দায়িত্ব তাঁরই। অনেকে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসে আবেদন করতে চান। সে ক্ষেত্রে ওই দপ্তরের কর্মচারীদের কেউ কেউ আবেদনকারীকে ফরম পূরণে সহায়তা করে থাকেন।

উপজেলার কাচারী কোয়ালীপাড়া গ্রামের শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবাও তাঁদের একজন। তিনি বলেন, তিনি স্থানীয় নির্বাচন অফিসে এসে নতুন ভোটার হওয়ার আবেদন করেছিলেন। কিছুদিন আগে জানতে পেরেছেন তিনি অপ্রকৃতিস্থ, এ জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র পাচ্ছেন না। তবে স্থানীয় নির্বাচন অফিস তাঁকে ফোন করে ডেকে একটি প্রত্যয়ন দিয়েছে।

ভবানীগঞ্জ সরকারি কলেজের সম্মান শ্রেণির শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম বলেন, তিনি স্বাভাবিকে আসা ও তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন করেছেন। বিষয়টির দ্রুত সুরাহা করে জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন।

উপজেলার কাচারী কোয়ালীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বলেন, তাঁর মেয়ে একটি মেডিকেল কলেজ থেকে সদ্য পড়াশোনা শেষ করেছেন। উপজেলা নির্বাচন অফিসে এসে নতুন ভোটার হয়েছেন। অথচ তাঁর মেয়েকে দেখানো হচ্ছে। এখন জাতীয় পরিচয়পত্র পাচ্ছে না। এটা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, বিষয়টি নিয়ে ঢাকায় কথা বলেছেন। দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। তাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডারে এ রকম তথ্য থাকার বিষয়ে স্থানীয় নির্বাচন অফিসের কোনো অবহেলা বা দায়দায়িত্ব নেই। এটা তাঁদেরই ভুল, নির্বাচন অফিস থেকে এ ধরনের ভুল বা আবেদনপত্র পূরণ করে দেওয়া হয়নি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.